বছরের শেষভাগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার চলমান মামলা ছিল বহুল আলোচিত। একই সঙ্গে ঢাকা রিজেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী সাহেদ করিমের পলায়ন চেষ্টা এবং আদালতে সোপর্দ করা ছিল আলোচিত বিষয়।
এ বছরের সাতক্ষীরার আলোচিত কয়েকটি ঘটনা
সাহেদ করিম গ্রেফতার: ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী সাতক্ষীরার সাহেদ করিম করোনা শনাক্তকরণ নিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। তাকে গ্রেফতারের জন্য সারা দেশে গোয়েন্দা জাল ফেলার পর অবশেষে ১৫ জুলাই তিনি গ্রেফতার হন। দাঁড়ি গোঁফ ছেঁটে নারী সেজে বোরকা পরে পিস্তলসহ একটি নৌকায় সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুরের কুমড়োর খাল দিয়ে নদীপথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় র্যা ব তাকে গ্রেফতার করে।
পরে তাকে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সাতক্ষীরায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও প্রতারণার মামলা হয়। এ মামলায় তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। বহুল আলোচিত সাহেদ করিম এখনও কয়েকটি মামলা ঘাড়ে নিয়ে কারাগারে রয়েছেন।
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলা: ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরা থেকে কলারোয়া হয়ে মাগুরা যাওয়ার পথে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গাড়িবহর নিয়ে কলারোয়া বাজারে হামলার শিকার হন। একাধিকবার খারিজ হয়ে যাওয়া এ সংক্রান্ত মামলা পুনরুজ্জীবিত হওয়ায় তার বিচারকাজ শুরু হয়েছে সাতক্ষীরার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। ২৯ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শেষে পরবর্তীতে রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।
বহুল আলোচিত এ মামলায় সরকারপক্ষে অংশ নিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সিরাজুল ইসলাম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা এবং সাতক্ষীরার পিপি আব্দুল লতিফ।
আসামিপক্ষে রয়েছেন- সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাতক্ষীরার আইনজীবী আবদুল মজিদ, মিজানুর রহমান পিন্টু, সৈয়দ ইফতেখার আলী ও তোজাম্মেল হোসেন।
৫০ জন আসামির মধ্যে রয়েছেন তালা-কলারোয়া আসনের দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
মহারানী: সাতক্ষীরায় মাধুরী নামের এক অপ্রকৃতিস্থ প্রতিবন্ধী নারী একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। সাতক্ষীরা শিশু আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান শিশুটির আইনগত অভিভাবক হিসেবে তাকে ১৭ সেপ্টেম্বর শ্যামনগর উপজেলার বড়কুপট গ্রামের জিএম শামীম শিক্ষক দম্পতির হাতে হস্তান্তর করেন। তার নাম রাখা হয় মহারানী।
শ্মশানের গাছে বাজারব্যাগে নবজাতক: ৪ অক্টোবর কালীগঞ্জের একটি শ্মশানের পাশে একটি গাছে বাজারের ব্যাগে সদ্যজাত একটি পুত্রসন্তানকে কে বা কারা ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। গ্রামবাসী দেখতে পেয়ে শিশুটিকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক পরিচর্যা শেষে চিকিৎসার জন্য কালীগঞ্জ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ওই হাসপাতালে মর্জিনা নামের এক নারীর তত্ত্বাবধানে শিশুটির স্বাস্থ্যসেবা চলাকালে উপজেলা শিশু কমিটি শিশুটিকে সাতক্ষীরা জেলা শিশু আদালতে পাঠিয়ে দেয়।
শিশুটিকে দত্তক হিসেবে পাওয়ার জন্য ২৯টি আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে শিশু আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান তাকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শিখা-বরুণ শিক্ষক দম্পতির কাছে ১৩ অক্টোবর হস্তান্তর করেন। দত্তক হিসেবে তারা শিশুটিকে গ্রহণ করেন। শিশুটির নাম রাখা হয় তিতাস পাল ওরফে মহারাজ।
একই পরিবারের ৪ জন খুন: ১৪ অক্টোবর রাতে কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসী গ্রামের একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী এবং দুটি শিশুসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়ে যায় ওই পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তান ৪ মাসের শিশুকন্যা মারিয়া সুলতানা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল মারিয়া সুলতানার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তাকে প্রাথমিকভাবে লালন পালন করার জন্য স্থানীয় এক মহিলা মেম্বারের জিম্মায় রাখেন। পরে আইনগতভাবে শিশুটির অভিভাবকত্ব নির্ণয় করে তার কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
১৫ দিনের সন্তান হত্যা: গত ২৭ নভেম্বর সদর উপজেলার হাওয়ালখালিতে নিষ্ঠুর বাবা-মা সোহাগ হোসেন ও ফাতেমা খাতুন তাদের ১৫ দিন বয়সের একমাত্র পুত্রসন্তান সোহানকে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। তারা পুলিশের কাছে এ অপরাধ স্বীকার করে।
বাড়িতে কারাদণ্ড: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাদড়া গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামানকে এক বছর কারাদণ্ড দিয়ে কয়েকটি শর্তে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দ্বিতীয় আদালত) ইয়াসমিন নাহার। এ আদেশে ২০১৫ সালে ৩ কেজি গাঁজাসহ আটক হওয়া হাসানুজ্জামান ১০ নভেম্বর থেকে ১০টি শর্তে বাড়ি থাকবেন। এর মধ্যে রয়েছে মাদকবিরোধী প্রচারণা, বৃক্ষরোপণ, বাবা-মায়ের সেবা করা, মাদক গ্রহণ না করা এবং সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা।
একই আদালতের বিচারক ইয়াসমিন নাহার ২৪ নভেম্বর আশাশুনির মহিশাডাঙা গ্রামের গৌতম গাইন, মমতা গাইন ও লতিকা মণ্ডলকে ২০১৬ সালের এক মারামারির ঘটনায় ৩ মাস করে জেল দেন। তারাও একই শর্তে বাড়িতে থাকবেন, কারাগারে নয়।
অন্যদিকে গত ১৭ ডিসেম্বর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (চতুর্থ আদালত) মেহেদী হাসান মোবারক মুনিম কালীগঞ্জের বাজারগ্রামের মাদক ব্যবসায়ী কালু সরদারকে ৬ মাসের জেল দেন। তিনিও মাদকবিরোধী অভিযান প্রচারণা চালাবেন এবং বৃক্ষরোপণ করবেন এই শর্তে কারাগারে নয়, বাড়িতে থাকতে পারবেন বলে নির্দেশ দেয়া হয়।
অপরদিকে ২০১৮ সালে ১ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার হয়ে জেল খাটা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাদড়া গ্রামের ইমান আলীকে গত ২১ ডিসেম্বর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দ্বিতীয় আদালত) ইয়াসমিন নাহার ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। তবে তিনিও মাদকবিরোধী এবং বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারণাসহ ১০টি শর্তে বাড়িতে থাকবেন বলে আদেশে বলা হয়।