জি,এ, গফুর, পাইকগাছা ॥ পাইকগাছা হাসপাতালে বিগত বছরের তুলনায় বর্তমানে সিজারিয়ান সেকশনের চেয়ে নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা দিন কে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সফলতা মুলত সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা ও সর্বোপরি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার ২০১৯ সালে ৮আগস্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব গ্রহনের পর উনার তদারকিতে কমেছে সিজারিয়ান সেকশন, বেড়েছে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব। এক যুগ আগেও মানুষ হাসপাতালে না গিয়ে ধাত্রীর মাধ্যমে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করাতেন। কিন্তু সম্প্রতি বছরগুলোতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর বাণিজ্যিক, অনেকে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ, প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারার ভয়ে অভিভাবকদের পীড়াপীড়িসহ নানাবিধ কারণে সিজারে সন্তান প্রসবের হার অনেক বেড়ে যায়। এর আওতায় পাইকগাছা হাসপাতালও। তারপরও বর্তমানে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছেন প্রসূতিরা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী গাইনী ডাক্তার, সিস্টারদের আন্তরিকতা, সেবারমান ও সচেতনা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচি গ্রহণে এমনটি হয়েছে। তবে কতিপয় অসৎ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক মানসিকতার কারণে, দিন দিনই বেড়েই চলছিল এই সিজার অপারেশনের সংস্কৃতি। অনেক ক্লিনিক সিজারে প্যাকেজ সিস্টেম করে দেয়। ১০০ রোগীর মধ্যে ৯০/৯৫ জনেরই সিজার করায় সরকারী হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলো। এছাড়া জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় পর্যায়ে পরিচালকদের (স্বাস্থ্য) বিষয়টি মনিটরিং করার কথা থাকলেও অনেকে তা সঠিকভাবে না করা জন্য দায়ী করেছেন সুধিসমাজ। তবে কারণ যা-ই হোক, তারা অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধ তথা স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের এই ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারকে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সরজমিনে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর প্রসূতি বিভাগে ২০১৯ সালে মোট রোগী ভর্তি হয় ১হাজার ৫শত ৪৭ জন। তার মধ্যে সিজারিয়ান ৪শত ৪জন, নরমাল ডেলিভারী ৪শত ৫৪ জন, রিফার্ড ৬০জন এবং সুস্থ হন ৬শ ২৯জন। ২০২০ সালে মোট রোগী ভর্তি হয় ১হাজার ৪শত ৮৮ জন। তারমধ্যে সিজারিয়ান ২শত ৩৫ জন, নরমাল ডেলিভারী ৫৯৭ জন, রিফার্ড ৭৬জন এবং সুস্থ হন ৫শ ৮০ জন। তথ্যা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালের সিজারের সংখ্যা অর্ধেকে নেমেছে এবং নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি লস্কর ইউপির আলমতলা গ্রামের খালিদা বেগম (২০) জানান, আমার স্বাভাবিক প্রসবে একটি ছেলে হয়েছে। আমার প্রসব ব্যাথা শুরু হলে সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হই। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সরা চেকআপ করে জানায় নরমালে সন্তান প্রসব হবে। সিজার করা লাগবে না। বাড়ির থেকে সিজারের জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু ডাক্তারা সাহস দিলে আমি নরমাল প্রসবের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নেই।গতকাল দুপুরে একটি পুত্র সন্তানের মা হই। আমি ও সে সুস্থ আছে। সিনিয়র সিস্টার, মিডওয়াইফসহ ওটি ইনচার্জ রীনা, হামিদা খাতুন, কালীসোম ও জয়ন্তী জানান, আমরা গাইনী কনসালটান্টের পরামর্শ অনুযায়ী নরমাল ডেলিভারী করার জন্য রোগীদের প্রোপার কাউন্সিলিং করি। এব্যাপারে গাইনী বিশেষজ্ঞ ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ সুজন কুমার সরকার জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদারের সহযোগীতায় প্রসূতি বিদ্যার নিয়ম মেনে স্বাভাবিক প্রসব বাড়ানোর একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি। যার ফলাফল শুধু খুলনা জেলা নয়, সমগ্র বাংলাদেশে ডেলিভারী সেকশানে মাইলফলক হবে বলে আশা করছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার এর সাথে আলোচনা কালে জানান, এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিশু ও মাতৃ মৃত্যু কমানো ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যার সুফল জনগণ পাচ্ছে। কোভিড -১৯ পরিস্থিতির মধ্যে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম। তারপরও বর্তমান আমাদের অর্জন সন্তোষজনক।তিনি আরো জানান, গর্ভকালীন চিকিৎসা সেবার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সকল সেবা ২৪ ঘন্টা চালু রয়েছে। তিনি সকলকে প্রসব পূর্ববর্তী, প্রসব পরবর্তী চেকআপের জন্য হাসপাতালে আসার আহবান জানান।
Check Also
সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন
ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা: ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …