প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে কলারোয়ায় তার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় জামিনে থাকা তিনজন আসামীর সময়ের আবেদন না’মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একইসাথে আসামীদের ৩৪২ ধারায় মতামত গ্রহণ শেষে ১৪জন সাফাই সাক্ষী দেওয়ার আবেদন করলে মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. হুমায়ুন কবীর ১১জনের আবেদন মঞ্জুর করে বুধবার সাক্ষীর দিন ধার্য করেছেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আসামীরা হলেন, সাবেক যুবদল নেতা আব্দুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম ও মো. আলাউদ্দিন। এছাড়া এ মামলায় আরো ১৩ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, সহকারি এটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা ও সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফ, সাবেক পিপি এড. তপন কুমার দাস, সাবেক পিপি এড. ওসমান গনি, এড. ইউনুস আলী, অতিরিক্ত পিপি এড. ফাহিমুল হক কিসলু, এড. সাবেক অতিরিক্ত পিপি এড. আজাহার হোসেন এড. শহীদুল ইসলাম পিন্টু, এড. ওকালত আলী প্রমুখ।
আসামীপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশ হাইকোর্টের এড. শাহানারা আক্তার বকুল, এড. আব্দুল মজিদ (২), এড. মিজানুর রহমান পিন্টু, এড. কামরুজ্জামান ভুট্টো প্রমুখ।
মামলার কার্যক্রম শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষে বাংলাদেশেরে অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সুজিত কুমার চ্যাটার্জী বলেন, তিনজন আসামী অসুস্থতার কথা উল্লে¬খ করে তাদের আইনজীবী সময়ের আবেদন করেছেন। আবেদনে ওইসব আসামী কোথায় চিকিৎসাধীন, কি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তাই তাদের সময়ের আবেদন না’মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এছাড়া আসামীপক্ষের আইনজীবী এড. আব্দুল মজিদ (২) সাক্ষী শহীদুল ইসলাম, আনছার আলী ও জোবায়দুল হক রাসেলকে জেরা করার জন্য আবেদন জানান। রাষ্ট্রপক্ষ আইনি ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাতে আপত্তি জানালে আসামীপক্ষের আবেদন না’মঞ্জুর করা হয়। একপর্যায়ে ৩৪২ ধারা মোতাবেক কাঠগোড়ায় উপস্থিত ৩৪জন আসামী নিজেদের নির্দোষ দাবি করলে তাদের সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, এড. আব্দুস সাত্তার ও অ্যাড. আব্দুস সামাদসহ কয়েকজনের পক্ষ থেকে ঢাকার এড. রুহুল কবীর রিজভি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলন, ঢাকা সিআউডি’র অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলাম, যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাহাপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, একই উপজেলার বরণডালি গ্রামের কাজী রফিকুল ইসলাম, মেহেরপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ মোড়ল, জেলার শার্শা উপজেলার রাজনগর গ্রামের বুলবুল ম-ল, একই উপজেলার সামটা গ্রামের কুতুবউদ্দিন, কলারোয়া উপজেলার ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের সরেজিৎ ভট্টাচার্য, গদখালি গ্রামের মোবারক আলী মোড়ল, একই গ্রামের মোস্তফা ফারুকুজ্জামান, জেলার তালা উপজেলার মহল¬াপাড়ার শেখ শফিকুল ইসলাম, যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বড়খলসী গ্রামের শরিফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা শহরের মাষ্টারপাড়ার মনিরুজ্জামান মনি সাফাই সাক্ষী দেওয়ার আবেদন জানালে বিচারক সাবেক শিক্ষামন্ত্রি এহসানুল হক মিলন, ঢাকা সিআউডি’র অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলাম ও সরোজিৎ ভট্টাচার্যকে বাদ দিয়ে বাকী ১১জন সাক্ষীর শুনানীর জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন। আসামী পক্ষ সাফাই সাক্ষী দেওয়ার আবেদন জানানোয় আইনগত কারণে মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা যায়নি।
অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, জামিনে থাকা তিনজন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একইসাথে তিনজন সাক্ষীকে জেরা করার আসামীপক্ষের আবেদন না’ মঞ্জুর করেছে আদালত। একইসাথে ১১জনের সাফাই সাক্ষীর জন্য বুধবার দিন ধার্য করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই সাফাই সাক্ষী শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হতে পারে।
আসামীপক্ষের আইনজীবী এড. আব্দুল মজিদ বলেন, তিনজন সাক্ষীকে জেরা করার জন্য তারা আবেদন করলেও আদালত তা না’মঞ্জুর করে। এছাড়া জামিনে থেকে নিয়মিত হাজিরা দিলেও মঙ্গলবার অসুস্থতার কারণে তিনজন আসামীর জামিন না’মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জারির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একইসাথে ১৪ জন সাফাই সাক্ষীর মধ্যে ১১জনের আবেদন মঞ্জুর করে বুধবার শুনানীর জন্য দিন ধার্য করেছে আদালত।
প্রসঙ্গত: ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে মাগুরায় ফিরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়।
এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামী করে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লে¬খ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন।
২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগস্ট আসামীপক্ষ মামলা তিনটির কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত করেন। দীর্ঘ তিন বছর পর আসামী পক্ষের মিসকেস খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট পেনালকোর্ডের মামলাটি(টিআর-১৫১/১৫) ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। বিষ্ফোরক দ্রব্য আইন ও অস্ত্র আইনের মামলা দু’টি গত ১৭ডিসেম্বর বিচারপতি মোস্তফাজামান ইসলাম ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম মোল¬ার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আসামীপক্ষের স্থগিতাদেশ ও আপিল খারিজ করে দেয়। মামলায় ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ৫০জন আসামীর মধ্যে ১৩ জনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়া তিনজনের মঙ্গলবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।