সারাদেশে গমের আবাদ বাড়লেও সাতক্ষীরাতে হ্রাস পাচ্ছে: ৪ বছরে আবাদ নেমেছে অর্ধেকে

আবু সাইদ বিশ্বাস: ব্যাপক চাহিদা থাকায় দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য ফসল গমের আবাদ বেড়েছে। হারানো গৌরভ ফিরিয়ে আনতে দেশের কৃষি যোদ্ধাগণ গম আবাদে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ফলে চলতি মওসুমে দেশে গম উৎপাদনের পরিমাণ ১৫ লাখ টন ছাড়াতে পারে বলে আশাবাদী মাঠ পার্যায়ের কৃষিবিদগন। গমের বহুবিদ ব্যবহার ও মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর এ চাহিদার পরিমাণ প্রায় ১৫% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে দেশ গমে প্রায় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। সরকারী হিসাব মতে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে দেশে গমের উৎপাদন হয়েছিল ১৯ লাখ ৮ হাজার টন। আর এখন তা ১৩-১৪ লাখ টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বর্তমানে দেশে ৭০ লক্ষ টন বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১১.৫৩ লক্ষ টন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর নতুন নতুন চর জাগায় গম চাষে ক্ষেত্র বাড়ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে এবার প্রায় আড়াই লাখ টন গম উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর। তবে এবার শীতের পরিমাণ কম থাকায় গম উৎপাদন নিয়ে কিছুটা সংশয়ে রয়েছে চাষিরা। এদিকে সারা দেশে গমের আবাদ বাড়লেও হ্রাস পাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলাতে। গত ৪ বছরে জেলাতে গমের আবাদ কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) দেশে গম আমদানি হয়েছে ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন। তাই গমের উৎপাদন বাড়িয়ে কমপক্ষে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরের পর্যায়ে পৌঁছানোর দাবী জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। গমের উচ্চফলনশীল নতুন জাত ও আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল গ্রহণের ফলে সম্প্রতি গমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে । চলতি রবি মওসুমে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের পনে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে শোয়া ১৪ লাখ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মূলত গম আবাদে সেচ ব্যয়ও খুবই কম। যেখানে আমাদের দেশে বোরো আবাদ ও উৎপাদন ব্যায়ের প্রায় ৩৩%-এরও বেশী সেচ ব্যায়, সেখানে গমের ক্ষেত্রে তা ১০%-এরও কম। পাশাপাশি আমাদের প্রকৃতিনির্ভও কৃষি ব্যবস্থার জন্যও গম যথেষ্ট উপযোগী। যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ধানের চেয়ে গম অনেক বেশী প্রতিরোধক্ষম ও টেকসই। আর এসব কারণেই সারা দেশের মত দক্ষিনাঞ্চলেও গম আবাদ গত কয়েকটি বছর যাবৎ বেড়ে চলতি মওসুমে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে দেশে গম আবাদের ইতিহাস খুব বেশী দিন আগের নয়। বিশেষ করে দক্ষিনাঞ্চলের জেলাগুলোতে তা মাত্র একযুগ আগে শুরু হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে অপ্রচলিত এ খাদ্য ফসল আবাদে কৃষকদের আগ্রহ লক্ষণীয়ভাবে বাড়তে শুরু করেছে। সত্তরের দশকে দেশে সামান্য কিছু জমিতে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত ‘খেরী, আইপি-৫২ ও আইপি-১২৫’ জাতের গম-এর আবাদ শুরু করেন কৃষকগন। পরিবর্তীতে কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি আবহাওয়া পরিস্থিতি ও উৎপাদন অনুকূল পরিবেশের কথা চিন্তা করে এবং কৃষকের বিষয়টিও বিবচনায় নিয়ে বিদেশ থেকে ‘কল্যাণ সোনা’ ও ‘সোনালিকা’ জাতের মধ্যম মানের ফলনশীল গমবীজ আমদানী করে। আমদানীকৃত ঐসব বীজ দিয়ে আবাদ সম্প্রসারন কার্যক্রম শুরু করে কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর। স্থানীয় জাতের তুলনায় এসব গমের উৎপাদন প্রায় তিনগুন বেশী হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আগ্রহও বৃদ্ধি পায়।

সাতক্ষীরা সদরের আগরদাড়ি,ঝাওডাঙ্গা, তালা ও পাটকেলঘাটায় বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, দিগন্ত জুড়ে দুলছে গাঢ় সবুজের গম ক্ষেত। আগরদাড়িগ্রামের গমচাষী আব্দুল মাজেদ জানান, গম চাষাবাদ খুব সহজ এবং স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক ফসল। তিনি এবছর দুই বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হবে বলে তিনি আশা করছেন। কিন্তু দাম নিয়ে শঙ্কায় তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় গমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ মে. টন। সদরে আবাদ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯২৫ মে. টন। কলারোয়ায় আবাদ হয়েছে ১১০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮৫ মে. টন। তালায় আবাদ হয়েছে ২২০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৭৫ মে. টন। দেবহাটায় আবাদ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ মে. টন। কালিগঞ্জে আবাদ হয়েছে ৭০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪৫ মে. টন। আশাশুনিতে আবাদ হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০৫মে. টন এবং শ্যামনগরে আবাদ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ মে. টন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে জেলায় গমের আবাদ হয় ২১৩৩ হেক্টর জমিতে। যেখানে চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় গমের আবাদ হয়েছে ১০৫০ হেক্টর জমিতে। ফলে ৪ বছরে জেলায় গমের আবাদ কমে অর্ধেকে এসেছে।

জেলা কৃষি উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, জেলায় ধান চাষের পাশাপাশি কৃষকরা গম চাষ করে থাকেন। গম চাষে ঝুঁকি কম থাকে। চাষীদের মাঝে গম চাষে আগ্রহী করতে জেলা কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।