আক্তারুজ্জামান কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ-
করোনার কঠিন সময়ে মানুষকে সচেতন করতে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করেছেন। সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় সামর্থ্যবানদের সহায়তায় ত্রাণ তহবিল গঠন করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মোকাবেলা করেছেন আম্ফানের মতো দুর্যোগ। আবার করোনার মধ্যেই যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। করোনা মহামারির মধ্যে এসব কাজ থেকে উত্তরণ খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে দক্ষতার সঙ্গে সব কিছু সামলেছেন যশোরের কেশবপুরের ইউএনও নুসরাত জাহান।বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩০তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা তাঁর ওপর দেওয়া সরকারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি প্রাইজ পোস্টিং পেয়ে বদলি হয়েছেন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায়। সেখান থেকে গতকাল শনিবার টেলিফোনে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে।
নুসরাত জাহান বলেন, ‘করোনার কঠিন সময়টায় মানুষকে সচেতন করতে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে। এর মধ্যে খবর পেলাম, দিনের বেলায় নিয়ম মানলেও অনেক এলাকায় রাতে ও ভোরবেলায় লোকজন দোকান খুলছে, মিল চালু করছে। তখন আমাদের মনিটরিংয়ের পদ্ধতি বদলাতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কেশবপুর উপজেলায় দুটি টিম করে কাজ করেছি। একটিতে আমি ছিলাম, অন্যটিতে এসি ল্যান্ড নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমাদের কাজ শুরু হতো ভোর ৫টা-৬টার সময়। আবার অনেক সময় রাতে মানুষকে সচেতন করতে বের হতে হয়েছে। যারা সরকারি নির্দেশনা মানছিল না, তাদের জন্য মোবাইল কোর্ট করে সতর্ক করেছি।’ এ সময়টায় সামাজিক উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা চেয়ে ভালো সাড়া পেয়েছেন জানিয়ে নুসরাত জাহান বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে সামর্থ্যবান মানুষের কাছ থেকে একটি ফান্ডে অনুদান দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। ওই ফান্ডে সাড়ে সাত লাখ টাকা উঠেছিল। সেই টাকা দিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা করেছি।’ ইউএনও বলেন, ‘যাঁরাই ফান্ডে টাকা দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে বিশ্বাস ছিল, আমরা টাকাটা সঠিকভাবে খরচ করব। এই যে মানুষের বিশ্বাসের জায়গা, সেটা রক্ষা করে চলতে পেরেছি, এ কারণে পরিশ্রম হলেও তৃপ্তি লাগে।’ কেশবপুরে করোনার কঠিন সময়ের মধ্যেই প্রথম উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার প্রধান নির্বাহী হিসেবে এই নির্বাচনও দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘মহামারি আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। তার মধ্যে যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন, ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, সুবিধাভোগীদের জন্য তালিকা তৈরি, একই সুবিধাভোগী যেন বারবার সুবিধা না পায়—এসব নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। এসব সমস্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন, স্থানীয় রাজনীতিক, বিশিষ্ট সামাজিক নেতৃবৃন্দ এবং পুলিশের খুব ভালো সহযোগিতা পেয়েছি। তবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গেলে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকে। সরকার থেকে যতটুকু পেয়েছি, দিয়েছি। দুর্ভোগে পড়া প্রকৃত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে চেষ্টা করেছি। কেউ যাতে অকারণে বারবার ত্রাণ না পায়, সেদিকেও কড়া নজর রেখেছি।নিজের চার বছর বয়সী সন্তানের কথা উল্লেখ করে নুসরাত জাহান বলেন, ‘কাজ শেষে বাসায় ফিরলে শিশু বাচ্চাটাকে সঙ্গে সঙ্গে কাছে নিতে পারতাম না। এ সময় খুব খারাপ লাগত। করোনার সবচেয়ে সংকটের সময়টায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি বাসায় ছিলেন। তাঁদের সহযোগিতার কারণে অফিস সময়ের বাইরেও বেশি সময় কাজ করতে সমস্যা হয়নি।’