মদ্যপান ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে করা পৃথক দুটি মামলায় জামিন পেলেও সহজে কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম।
ইরফান সেলিমের মুক্তির বিষয়ে তার আইনজীবী প্রাণনাথ রায় বলেন, ‘মদ্যপান ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দুটি মামলায় ইরফান সোলম জামিন পেয়েছেন। তবে কলাবাগান থানায় করা মারামারির মামলায় চার্জশিট জমা দেয়নি ডিবি পুলিশ। আবার অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে করা দুই মামলায় আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট (চূড়ান্ত প্রতিবেদন) দাখিল করলেও আসামির দায়মুক্তির আবেদনের মঞ্জুরের কপি এখনও দেননি আদালত।’
আইনজীবী প্রাণনাথ রায় বলেন, ‘আবেদন মঞ্জুর হলে সেই কপি কারাগারে দিলে ওই দুই মামলা থেকে মুক্তি মিলবে। তবে মারামারির মামলায় চার্জশিট না দেওয়া পর্যন্ত এই মামলা টেনে নিয়ে বেড়াতে হবে। তাই কবে নাগাদ কারাগার থেকে ইরফানকে বের করা যাবে, সে বিষয়ে সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে ডিবি পুলিশের মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদকে সস্ত্রীক মারধর করার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। দ্রুতই এই মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হবে।
জব্দ করা পিস্তলের বিষয়ে যা বলছে পুলিশ
ইরফান সেলিমের ‘শয়নকক্ষ’ থেকে র্যাব যে পিস্তলটি উদ্ধার করেছিল, সেটি আসলে সেখানে ছিল না বলে পুলিশের তদন্তে জানানো হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছে, ‘তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি যে, উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রটি (পিস্তল) ইরফান সেলিমের এবং মাদক ও মদ তার। যে কক্ষ থেকে পিস্তলটি জব্দ করা দেখানো হয়েছে, সেই কক্ষে অনেক মানুষ যাতায়াত করে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য এবং সমাজে তার মানসম্মান ক্ষুণ্ন করাসহ সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে কে বা কারা জব্দকৃত পিস্তলটি মোহাম্মদ ইরফান সেলিমের ২৬ নম্বর চাঁন সর্দার দাদাবাড়ির চতুর্থ তলার অতিথি কক্ষে রেখেছেন, তার কোনও সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ তাই ইরফান সেলিমকে ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে তার দেহরক্ষী জাহিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার একটি মামলা হয়। নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন— ইরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ, হাজী সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দীপু ও গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরও দুই-তিন জন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৫ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াসিফ আহমদের মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় হাজী সেলিমের গাড়ি। ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে পেছন পেছন এলে কলাবাগানের ট্রাফিক সিগন্যালে হাহী সেলিমের গাড়ি থেকে দুই-তিন জন নেমে ওয়াসিফ আহমদ খানকে ফুটপাতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে গালাগাল করে ও হুমকি দেয়। পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। পথচারীরা এই দৃশ্য ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। পরে পুলিশ হাজী সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার ও গাড়ি জব্দ করে।
পারিদন ২৬ অক্টোবর মামলা দায়েরের পর সেদিন দুপুরে র্যাব পুরান ঢাকায় চকবাজারে ২৬ দেবীদাস লেনে হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালায়। র্যাব হাজী সেলিমের ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেয়। বাসায় অবৈধভাবে মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুই জনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন। পরে ২৮ অক্টোবর র্যাব-৩ এর ডিএডি কাইয়ুম ইসলাম চকবাজার থানায় ইরফান সেলিম ও দেহরক্ষী জাহিদের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি করে মোট চারটি মামলা দায়ের করেন।