॥ জামশেদ মেহ্দী॥
গত ৩০ ডিসেম্বর ছোট-খাটো আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো একটি বিদস। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এটিকে পালন করেছে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে। বিএনপি ও নাগরিক ঐক্য এটিকে পালন করেছে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে। আর বামপন্থী কয়েকটি দল এটিকে পালন করেছে ‘কালো দিবস’ হিসেবে। আওয়ামী লীগ যখন এটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, তখন সেই ঘোষণাকে সোনার পাথর বাটি বলে ভ্রম হয়। কারণ কয়েকদিন আগে পুলিশ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ঐ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে পুলিশ তথা প্রশাসনের পূর্বাহ্নিক অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকাশ্য সভা বা সমাবেশ করা যাবে না। সভা-সমাবেশ বা মিছিল করতে গেলে পুলিশের পূর্বাহ্নিক অনুমতি লাগবে। অতীতে এই ধরনের কোনোরূপ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। তারপরও ২০১৪ সালের পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বড় বড় বিরোধী দল যথা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে কোথাও কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অবশ্য ২০১৮ সালে নির্বাচনের খাতিরে ঐক্যফ্রন্টকে কয়েকটি সভা করতে দেওয়া হয়েছিল। যাই হোক, পুলিশের আলোচ্য বিজ্ঞপ্তিটি সংবিধানের ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এই ৩টি অনুচ্ছেদে যথাক্রমে চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং সংগঠনের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখিত এই বিজ্ঞপ্তি সম্পূর্ণভাবেই গণতান্ত্রিক রাজনীতির এবং সাংবিধানিক শাসনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একদিকে বিরোধী দল সভা-সমাবেশ ও মিছিল করার অনুমতি পায়নি। কিন্তু অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী ঘরানার দলসমূহ শহরব্যাপী মিছিল-মিটিং করে বেড়িয়েছে। দৈনিক ‘প্রথম আলোর’ ২৯ ডিসেম্বর অনলাইন সংস্করণের খবরে প্রকাশ, ২৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নীলফামারী সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের নগর জামে মসজিদ থেকে উপজেলা নায়েবে আমীরসহ ১৯ জামায়াত নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের অভিযোগ, তারা নাকি নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক কোনোদিন মসজিদে করা হয় না। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর রোববার নাটোর জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলোয়ার হোসাইনসহ ১৫ জামায়াত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
জামায়াতের বিরুদ্ধে এই ধরনের গ্রেফতার হরহামেশাই চলছে। কয়েকদিন আগে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ময়মনসিংহ সফরে যান। তাকে প্রকাশ্যে কোনো সভা করতে দেওয়া হয়নি। ফলে কর্মীদের সাথে ঘরোয়া বৈঠক করে তিনি ঢাকা ফিরে আসেন।
এই ধরনের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। এই রকম শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে গণতন্ত্রের বিজয়। আসলে এটি গণতন্ত্রের বিজয় নয়, এটি আসলে গণতন্ত্রের মুমূর্ষু অবস্থা। অতি সম্প্রতি ২-৪ জন ভাষ্যকার মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে গেছে। আসলে গণতন্ত্র নয়, রাজনীতিই লাইফ সাপোর্টে গেছে। বিষয়টি তিন মাস আগে সঠিকভাবেই বর্ণনা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতি দিয়েছিলেন। ঐ বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার গত ১১ বছর পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিশূন্য করে দেশকে একটি ব্যর্থ, অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। গত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জরুরি আমলের সরকার দেশকে রাজনীতিশূন্য করার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, বর্তমান সরকার বিগত ১২ বছরে সেই সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। দেশের বিরাজমান এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশবাসীর সাথে আমরাও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বর্তমান সরকার গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে ব্যালট পেপারে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকে ব্যাপকভাবে সিল মেরে বাক্স ভরে সরকারি দলের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করে অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। বর্তমান সংসদকে কোনোভাবেই নির্বাচিত সংসদ বলা যায় না। এই সংসদে বিরোধী দল বলতে কিছুই নেই। বর্তমান সংসদও ব্যর্থ ও অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।”
ইংরেজিতে একটি শব্দ আছে। সেটি হলো চৎড়ঢ়যবঃরপ অর্থাৎ যিনি সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এক্ষেত্রে জামায়াতের আমীর সঠিকভাবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ১/১১ অর্থাৎ ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জেনারেল মঈনুদ্দিন কর্তৃক ক্ষমতা দখলের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে বিরাজনীতিকরণ করা বা রাজনীতিশূন্য করা। ১/১১-এর আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তি এবং আধিপত্যবাদী শক্তিকে নির্মূল করা। তাদের এই কাজ করার পেছনে মদদ জুগিয়েছিল একাধিক বিদেশি শক্তি। এগুলোর মধ্যে একটি ছিল পরাশক্তি, একটি পশ্চিমা শক্তি এবং প্রতিবেশী আঞ্চলিক শক্তি।
এটি ছিল তাদের একটি মাস্টারপ্ল্যান। সে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী মঈনুদ্দিন, ফখরুদ্দিন ও মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে কেয়ারটেকার সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামে ৩ মাসের জন্য ক্ষমতায় আনা হলেও তাদের মেয়াদ অবৈধভাবে বৃদ্ধি করে ২ বছর পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখা হয়। ১/১১-তে জেনারেল মঈনের ক্ষমতা দখলের পেছনে যে বিদেশি শক্তিদের মদদ ছিল এবং বিদেশি শক্তিসমূহের সাথে যে আলাপ-আলোচনা ও সলাপরামর্শ করেই মঈন ক্ষমতা দখল করেছিলেন, সেটি গত ২৬ ডিসেম্বর দৈনক প্রথম আলোর ৮ম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনধর্মী ভাষ্য থেকে বোঝা যায়। ঐ ভাষ্যে সেই সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিসের একাধিক বক্তব্য থেকে বোঝা যায়। এর সমর্থনে আগে-পরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস এবং রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের ভূমিকা রয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে মেয়াদ শেষে পদত্যাগ করে। কিন্তু তার আগে থেকেই ভারত-মার্কিন যোগসাজশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার ব্লু প্রিন্ট রচিত হয়। ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারণকে কেন্দ্র করে ক্লিনটন পরিবারের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে টেলিফোন সংলাপের একপর্যায়ে হিলারি যা বলেন সেখান থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়, সে নির্বাচনে একটি বিশেষ দলকে ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে আমেরিকা ও ভারতের ভূমিকা ছিল।
সেখান থেকেই রাজনীতিশূন্য করার শুরু। বিরাজনীতিকরণের প্রথম ধাপ ছিল জেনারেল মঈনের ক্ষমতা দখল। দ্বিতীয় ধাপ হলো কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা তথা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল। অথচ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেছে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। অনুরূপভাবে ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে।
দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থাৎ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকেই দেশে গণতন্ত্র খর্ব করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারপরও দেশে গণতন্ত্র এবং রাজনীতির কিছুটা অবশিষ্ট ছিল। এরপর দুটি নির্বাচন হয়েছে। দুটি নির্বাচনই হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এবং দুটিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিজয়ের মাধ্যমে নির্বাচনে বিশাল কারচুপি উৎকট আকারে ধরা পড়েছে। বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া হিসেবে জাতীয় সংসদে রাজনীতিকদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে এবং ব্যবসায়ী ও আমলাদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এর পাশাপাশি সংসদে বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা কমতে কমতে নগণ্য পর্যায়ে এসেছে। তার পাশাপাশি সরকারের প্রচ- দমননীতির ফলে সংসদের বাইরে বিরোধীদলীয় রাজনীতিকে খোলা আকাশের নিচ থেকে নির্বাসন দিয়ে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করা হয়েছে। যেটুকু রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটি হলো প্রেস ক্লাবের সামনে, পুলিশ বক্সের পাশে মাঝে মাঝে মানববন্ধন করা।
বিএনপি-জামায়াত তো দূরের কথা, বামপন্থী নেতা হায়দার আকবর খান রনো পর্যন্ত বলেন যে, দীর্ঘকাল ধরে সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া না থাকার ফলে রাজনৈতিকশূন্যতা বা বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়া ষোলোকলায় পূর্ণ হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের বহু বিতর্কিত নির্বাচনের পর। এ সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, এটি কোনো নির্বাচনই হয়নি। মাত্র একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। ঐ নির্বাচনে ২১৩টি ভোট কেন্দ্রে ভোট পড়েছে শতকরা একশত ভাগ। তিনি প্রশ্ন করেন, এটি বাস্তবে সম্ভব? ৫৯০টি কেন্দ্রে শতকরা একশত ভাগ ভোট পড়েছে শুধুমাত্র নৌকায়। আপনারাই বলুন, এটিও কি সম্ভব? হাফিজ উদ্দিন খান যোগ করেন, ৩০ ডিসেম্বর যে এরকম একটি খারাপ নির্বাচন হলো তার প্রতিবাদে ৩১ ডিসেম্বর বা ১ জানুয়ারিতে কাউকে আমরা রাস্তায় নামতে দেখলাম না। অথচ অতীতে এদেশে নির্বাচনি কারচুপির অভিযোগে কত বিরাট বিরাট ঘটনা ঘটেছে। মাগুরায় মাত্র একটি আসনে উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে এমন প্রবল আন্দোলন হয়েছিল যে, তৎকালীন সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ৭৬৮৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশ। এটি একটি অবাস্তব ব্যাপার। সেই ধারাবাহিকতা আজও চলছে। এই তো সেদিন ঢাকা-১৮ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে হুদা কমিশনের ফলাফল মোতাবেক ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাস্তবে এর চেয়েও কম। গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ আসনের নির্বাচনে হুদা কমিশনের ফলাফল মোতাবেক ভোট পড়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সবচেয়ে তাজ্জব হওয়ার মতো ব্যাপার হলো এই যে, গত বছরের ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে হুদা কমিশনের ফলাফল মোতাবেক ভোট পড়েছিল মাত্র ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। ৩ লাখ ২১ হাজার ২৭৫ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৫ হাজার ৯৯৫ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে বিএনপি পেয়েছে ৮১৭ ভোট। আর জাতীয় পার্টি পেয়েছে ৯৭ ভোট। সিরাজগঞ্জ উপনির্বাচনে ধানের শীষে পড়েছে ৪৬৮ ভোট।
এসব কারণে শুধুমাত্র জনগণই নয়, একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব দল গণতন্ত্র তো পরের কথা, একেবারে রাজনীতি থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর যেখানে দিনের ভোট রাতে হয়েছে, সেখানে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৬১ শতাংশই হলেন ব্যবসায়ী। এখানে পলিটিশিয়ান সংসদ সদস্য হলেন মাত্র ৫ শতাংশ। এই হিসাব ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির। পাশাপাশি ভারতের বর্তমান পার্লামেন্ট বা লোকসভায় রাজনীতিবিদদের অনুপাত হলো ৩৯ শতাংশ। বাংলাদেশে এর আগের পার্লামেন্ট অর্থাৎ ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্টের সংসদ সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের অনুপাত ছিল ৫৯ শতাংশ। এই অনুপাত বাড়ছে।
এই ধরনের অনেক পরিসংখ্যান আমাদের হাতে আছে। আরো পরিসংখ্যান দিয়ে পাঠকদের ভারাক্রান্ত করতে চাই না। যে দেশে জাতীয় নির্বাচন বা উপনির্বাচনে ভোট পড়ে শতকরা ১০০ শতাংশ অথবা মাত্র ৫ শতাংশ, যে দেশে ৩০০ জন এমপির মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ হলো পলিটিশিয়ান, সেই দেশে সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, গণতন্ত্র তো অনেক আগেই নিহত হয়েছে। রাজনীতি এখন অন্তিম যাত্রাপথে। রাজনীতির মৃত্যুঘণ্টা বেজে উঠেছিল ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি। রাজনীতি এখন লাইফ সাপোর্টে। কবে ভেন্টিলেশন খুলে নেওয়া হয় এবং কবে রাজনীতিকে শবাধারে ঢুকিয়ে কবে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেওয়া হয়, সেটি দেখার জন্য দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জনগণ অপেক্ষা করছেন।