‘পুলিশ হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের শিকার’ যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বুধবার তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনারী কেয়ার ইউনিট থেকে ঢাকায় রেফার করা হয়। এরপর বিকেলে শামস উল হুদা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে করে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর আগে, সোমবার (১১ জানুয়ারি) পুলিশ কনস্টেবলকে মারধরের অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে (হেফাজতে থাকার ১৯ ঘণ্টা পর) তিনি মুক্ত হন। এরপর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাতে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারীতে ভর্তি করা হয়।
সোমবার রাতভর হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে বিপুকে পুলিশ বেধড়ক মারপিট করেছে এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের।
মাহমুদ হাসান বিপু অভিযোগ করেছেন, আমি কনস্ট্রেবলকে লোকজনের হাত থেকে রক্ষা করেছি। অথচ পুলিশ এসে হঠকারিভাবে এসে আমাকেও ধরে নিয়ে আসে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী নেতৃত্বে পুলিশ চোখ বেঁধে দুই দফা বেধড়ক মারপিট করেছে। অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে বলেছে, আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদার গ্রুপ করিস; শ্যূট করে দেবো!’
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাইন্সে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদা পোশাকে পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহিদমিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ কয়েকজন সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়। তখন নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। খবর পেয়ে পুলিশ ইমরানকে উদ্ধার করে। এ সময় মাহমুদ হাসান বিপুসহ অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেয় পুলিশ। সোমবার রাতভর আটকে রাখার পর আন্দোলন-বিক্ষোভের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ বিপুকে মুক্তি দেয়।
ঘটনার শিকার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু জানান, সোমবার শহীদ মিনার এলাকায় সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্য নারী নিয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসেছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন তাদের মারপিট করে। হট্টগোল দেখে পাশের শেখ আবু নাসের ক্লাব থেকে এগিয়ে যান। তিনি বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। তিনি মারপিটে জড়িত নন। কিন্তু পুলিশ তাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে তুলে নিয়ে যায়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে পুলিশ লাইনে আটকে রেখে রাতভর বেধড়ক মারপিট করেছে। তার হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। তার সারা শরীরে কালশিটে পড়ে গেছে। দুই পা ফেটে গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে তাকে মুক্তির পর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বুধবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। স্টেডিয়ামে এসময় যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ নেতৃবৃন্দ তাকে বিদায় জানান।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানিয়েছেন, মাহমুদ হাসান বিপু’র সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে বেদম প্রহার করা হয়েছে। তার প্রেসার, ডায়াবেটিস রয়েছে। রক্তে প্লাটিলেট এক লাখের নিচে নেমে এসেছে। চার সদস্যের মেডিকেল টিম তাকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করেছে। মেডিকেল টিম তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের একাধিক টিম গভীর রাতে তার বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ শাহীন চাকলাদার এমপির প্রেসসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। যা সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে।
যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটকে রেখে মারপিট করা হয়েছে। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের আটক করেছে। আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ হাসান বিপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকালে শারীরিকভাবে আঘাতের কোনো বিধান নেই। মঙ্গলবার বিকেলে নেতাদের জিম্মায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তির আগ পর্যন্ত নির্যাতনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এখন এই অভিযোগ করা হচ্ছে। যেহেতু অভিযোগ এসেছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।