সারাদেশেই সড়ক-মহাসড়কে হাজার হাজার সেতু-কালভাট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বন্যা, নকশা ও নির্মাণত্র“টি, গাড়ির ধাক্কা, অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি চলাচলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণেই সেতু-কালভার্টগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওসব ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তথ্য সংগ্রহে সেতু বিভাগের গাফিলতি রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত সেতু-কালভার্ট ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটছে। যদিও সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের দাবি, সেতু যে কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠুক না কেন তা মেরামতের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। সওজ অধিদপ্তর দেশের কোন সেতু কী অবস্থায় রয়েছে তা জানতে একটি সফটওয়্যার চালু করেছে। ‘ব্রিজ মেইনটেন্যান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা বিএমএমএস নামের ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাইকা সহায়তায় সওজের সেতুগুলোর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নতুন-পুরনো মিলিয়ে ২১ হাজার ৪৯২টি সেতুর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ওসব সেতুকে এ, বি, সি ও ডি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে এ ক্যাটাগরিতে থাকা সেতুর সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৩৩টি। ওসব সেতু ভালো অবস্থায় রয়েছে। বি ক্যাটাগরিতে রয়েছে ২ হাজার ৯৩৩টি সেতু। সেগুলো হালকা ক্ষতিগ্রস্ত আর ‘মেজর এলিমেন্টাল ড্যামেজ’ থাকা সেতুগুলোকে সি ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে। ওই ধরনের সেতুর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩০। আর ‘মেজর স্ট্রাকচারাল ড্যামেজ’ থাকা সেতুগুলোকে ডি ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে। সওজ অধিদপ্তরের নেটওয়ার্কে থাকা ডি ক্যাটাগরির সেতুর সংখ্যা ১ হাজার ৯০। বর্তমানে সি ও ডি ক্যাটাগরিতে থাকা ৫ হাজার ২৬টি সেতু ও কালভার্ট রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। আর জাতীয় মহাসড়কেই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা ৭৫২টি সেতুর অবস্থান। আর আঞ্চলিক মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে ১ হাজার ১৯৩টি। সওজ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার, সালেহপুর এবং নয়ারহাট সেতু তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ। তার মধ্যে নয়ারহাট সেতুটি নতুন করে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর সালেহপুর সেতুর নিচে এক পাশের (গার্ডার) বীমে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। সেই সাথে সেতুটি এক পাশে অনেকখানি দেবেও গেছে। যেকোন সময় সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর সঙ্গে সাভার ও দেশের দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। সেতুর উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তাতে ভোগান্তি পোহান হাজার হাজার যাত্রী। সাভারের আমিনবাজারের সালেহপুরে তুরাগ নদের ওপর নব্বইয়ের দশকে প‚র্ব ও পশ্চিম পাশে পাশপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। প‚র্ব পাশের সেতু ব্যবহার হয় রাজধানীতে যানবাহন ঢোকার জন্য। আর পশ্চিম পাশের সেতু ব্যবহার হয় রাজধানী থেকে যানবাহন বের হওয়ার জন্য। সেতুর নিচে এক পাশের (গার্ডার) বীমে ফাটলের কারণে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক লেন বন্ধ করে সংস্কারের কাজ করছে ঢাকা সড়ক বিভাগ। তাতে মহাসড়কটিতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে যানজট নিরসনে কাজ করছে পুলিশ। আর সেতুটি মেরামত করতে অন্তত ২ থেকে ৩ সপ্তাহ লাগবে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক বিভাগ। সূত্র জানায়, ঢাকার পোস্তগোলা সেতু গত বছরের জুনে সদরঘাটে লঞ্চডুবির ঘটনায় উদ্ধারকাজে অংশ নিতে আসা একটি জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর থেকে সেতুটি দিয়ে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলছে। এখনো ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে থাকা সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সওজের হিসাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে একটিও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু নেই। তবে চট্টগ্রাম-টেকনাফ মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংখ্যা ১৭টি। ওই তালিকায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাতামুহুরী সেতুও রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই সেতুটি জাপানের অর্থায়নে পুননির্মাণ করা হচ্ছে। যার কাজ চলতি বছরই শেষ হওয়ার কথা। তাছাড়া ঢাকা-সিলেট-তামাবিল জাতীয় মহাসড়কও চার লেনে উন্নীত করা প্রক্রিয়া চলছে। ওই মহাসড়কটিতে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ও কালভার্টের সংখ্যা ৫১টি। একইভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৪০টি, জয়দেবপুর-জামালপুর মহাসড়কে ২০টি, ঢাকা-রংপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কে ১০৭টি, সিরাজগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়কে ৪টি, রাজবাড়ী-খুলনা মহাসড়কে ৪৮ ও ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে ৫৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। দেশের প্রধান ৮টি জাতীয় মহাসড়কেরই এমন চিত্র। বাকি জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কে বিদ্যমান সেতুগুলোর অবস্থা আরো নাজুক। অভিযোগ রয়েছে, হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহে গড়িমসি করার কারণেই হঠাৎ করে একটা সেতুতে ফাটলের দেখা মেলে। তথ্য সংগ্রহে সেতু বিভাগের চরম গাফিলতি রয়েছে। আবার কোন সেতুতে ত্র“টি দেখা দিলেও তা মেরামত করতে গড়িমসি করে সেতু বিভাগ। মেরামতের বাজেট করতে করতেই সময় পার হয়ে যায়। বিশেষ করে বর্ষার আগে সড়ক ও সেতু মেরামত করার কথা থাকলেও প্রতিবছরই বর্ষা নামার পর মেরামতের ধুম পড়ে। তখন কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করেই কোটি কোটি টাকা বিল তুলে নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে সওজ এর ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, সালেপুরে দুই লেন বিশিষ্ট দুটি সেতু রয়েছে। তার মধ্যে সড়কের পূর্বপাশে অবস্থিত সেতুটির (সাভার হতে ঢাকাগামী লেন) এক পাশের গার্ডারে (বীম) ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমরা কাজ শুরু করা হয়েছে। কাজ শেষ হতে সময় লাগবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ। তবে যতো দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …