ইবরাহীম খলিল : শীতের মিষ্টি রোদের সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও সর্বনাশা পদ্মানদীতে তেমন উতাল-পাতাল ঢেউয়ের ভাবমূর্তি নেই। শিমুলিয়া ঘাট থেকে পদ্মা সেতুর দিকে ছুটে চলা স্টিলের ট্রলারে মাথার উপর ছামিয়ানা টানানো প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে থাকা ৮ জনের ১৬টা চোখ তাকিয়ে আছে দূর থেকে আবছা আবছা দেখা যাওয়া সেতুর দিকে। উদ্দেশ্য, পদ্মা সেতুর এক নম্বর পিলার থেকে শেষ পিলার পর্যন্ত স্বচোখে দেখা।
৭ জানুয়ারি ২০২১ ইং সকাল সাড়ে ৮টায় মগবাজারের ওয়ারলেস রেললাইনের ৪২৩ নম্বর ভবনের সামনে থেকে সামসুল আরেফীন, কামরুজ্জামান হিরু, নাসির উদ্দিন শোয়েব, রফিকুল ইসলাম মিঞা এবং জাফর ইকবালসহ ৬ জন সংবাদকর্মীকে নিয়ে ছুটে চলল ১০সিটের একটি হায়েস। গাইট হলেন সহকর্মী এবং মাদারিপুরের গর্বিত সন্তান রফিকুল ইসলাম মিঞা ভাই। পথে পোস্তাগোলা এলাকা থেকে যুক্ত হলেন এইচ এম আক্তার এবং কামাল উদ্দিন সুমন। ঢাকা থেকে নতুন পিচ ঢালা হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটে চলল মাওয়া ফেরিঘাটের দিকে। বৃহস্পতিবার সকাল হওয়ায় জ্যামহীন রাস্তায় মাত্র ৪০ মিনিটে গাড়ি গিয়ে থামলো মাওয়া ফেরিঘাটের একটু আগে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা খাবার হোটেলের একটির সামনে। যাত্রাপথে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত চার লেনের সুবিশাল মহাসড়ককে কেউ তুলনা করলেন সিঙ্গাপুরের রাস্তার সাথে; কেউ বা তুলনা করলেন জ্যাকসন হাইটের সাথে। তবে রাস্তার পরিধি, ছান্দিক বাঁক দেশের অন্য যেকোন রোডের চেয়ে আধুনিক এবং ভ্রমণে আরামদায়ক বলে মত দেন সবাই।
মহাসড়কের দুই পাশে দেখা গেল ডজন ডজন হাউজিং কোম্পানির সাইনবোর্ড। এই সাইনবোর্ড দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে স্বপ্ন বুনাচ্ছেন আধুনিক স্যাটেলাইট শহরের। একই কারণে আশপাশের জমির দাম বেড়ে গেছে শতগুণ। সড়কের চাকচিক্যের কারণে গড়ে উঠা সাইনবোর্ড কতজনের যে পৌষমাস আর কতজনের সর্বনাশ হয়েছে কে জানে… …।
নিউ নিরিবিল বিক্রমপুর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট : আমাদের বহন করা গাড়ি যখন মাওয়া ফেরিঘাটের কাছাকাছি পৌঁছালো তখন থেকেই শোনা গেল খাবার হোটেল বয়দের হাক ডাক। আমাদের হোটেলে আসুন স্যার। এখানে সবচেয়ে ভাল পরিবেশ। সবচেয়ে বড় ইলিশ এখানে। অর্থাৎ কার আগে কে নিজেদের হোটেলে কাস্টমার ভিড়াতে পারবে সেই প্রতিযোগিতা। আমরা প্রথম যে ডাকলো তার হোটেলেই গেলাম। নাম ‘নিউ নিরিবিল বিক্রমপুর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’। গাড়ি থেকে নেমে হোটেলের ভেতর প্রবেশ করে নামের সঙ্গে পরিবেশের মিল পাওয়া গেল। হোটেলের ভেতরটা দুই ভাগে ভাগ করা। যাদের তারাহুড়া তারা হোটেলের সামনের অংশ বসে দ্রুত খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চলে যান। আর যারা পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বেড়াতে আসেন তারা পেছনের অংশে নিরিবিলি স্থানে বসেন। হাতে একটু সময় নিয়ে খাওয়া দাওয়ার কাজটি সারেন। পেছনের অংশের বাঁশের বেড়ার অর্ধেক অংশ তুলে রাখা। ফাঁকা অংশ দিয়ে যেমন বাইরে থেকে নির্মল বাতাস আসে; তেমনি দেখা যায় বাইরে প্রকৃতি এবং গ্রামের মনোরম দৃশ্য। আমরাও পেছনের অংশে বসেই বসলাম।
হোটেলের সামনে গাড়ি পার্ক করেই রফিক ভাই মেন্যু জিজ্ঞেস করলেন। পছন্দের খাবার পাওয়ায় সেখানেই নাস্তা করে নৌকার ঘাটের দিকে রওয়ানা হলাম। আর বলে গেলাম ফেরার পথে এখানেই দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সারবো। আমরা খাবার হোটেল থেকে ৫ মিনিট হেঁটে মাওয়াঘাটে পৌঁছে গেলাম। গাইড সহকর্মী রফিকুল ইসলাম মিঞা ভাই ৩ নম্বর ফেরিঘাট থেকে ছামিয়ানা টানানো প্লাস্টিকের চেয়ারপাতা একটি ট্রলার ভাড়া নিলেন। শর্ত,পদ্মা সেতুর প্রথম পিলার থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের দেখিয়ে আবার এই ঘাটে ফিরিয়ে আনবে। শর্ত অনুযায়ী বেলা এগারটার দিকে ট্রলার আমাদের নিয়ে পদ্মার মাঝখানের দিকে যাত্রা শুরু করলো।
শীতের শান্ত সকালে পদ্মার ছোট ছোট ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ ভেঙে যখন আমাদের ট্রলার এগুচ্ছিল তখন মনে পড়ছিল- শিল্পী আবদুল আলিমের গানের কথা-সর্বনাশা পদ্মা নদী তোর কাছে শুধাই; বল আমারে নদীরে তোর কুল কিনারা নাই… … ‘কিংবা পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের কিছু আলোচিত ডায়ালগ। সকাল পার হওয়া আদো দুপুরের আলতো রোদের ঝাঁঝ সামিয়ানা ভেদ করে শরীরে লাগায় এক অন্য রকমের শিহরণ অনুভূত হতে লাগলো। আমাদের কেউ কেউ নৌকার সামনের মাথায় গিয়ে পদ্মা নদীর ঢেউ গণনা আবার কেউ কেউ সেলফি তোলার দিকে মন দিলো। যাত্রাপথে মাঝে মাঝেই স্পিডবোট আর বড় লঞ্চের ঢেউ এসে আমাদের ট্রলাকে নাচিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল।
ট্রলার ছাড়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে যখনই নদীঘাটের বাঁক পেরিয়ে মাঝ নদীতে আসলো তখনই এক-দেড় কিলোমিটার দূরে দাড়িয়ে থাকা পদ্মা সেতুর আবছা ছায়া দেখা গেল। তখনি সবার মধ্যে শুরু হলো বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস। সেতুকে পেছনে রেখে শুরু হলো সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা। ট্রলার যতই ব্রীজের কাছাকাছি আসতে লাগলো বাড়তে থাকলো সেলফি তোলার মাত্রাও।
ট্রলারের মাঝির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছিল ১ নম্বর পিলার থেকে শেষ পর্যন্ত দেখবো। কিন্তু এক নম্বর পিলারতো মাটির উপর। তাই আমাদের আর ১ নম্বর পিলার দেখা হলো না। এছাড়া মাঝের আরও কয়েকটি পিলারে নম্বর না থাকায় ওই পিলারগুলো গণনা করা গেল না। অগ্যতায় আমাদের পদ্মা সেতুর পিলার গণনা শুরু হলো ১৩ নম্বর থেকে। আমাদের ট্রলার ১২ এবং ১৩ নম্বর পিলারের মাঝ বরাবর সেতুর নিচ দিয়ে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে গেল। আমাদের শরীরে পড়লো বহু কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর ছায়া। এসময় রফিক ভাইয়ের উচ্ছাস ছিল চোখে পড়ার মতো। কারণ আমাদের দলে থাকা ৮ জনের মধ্যে একমাত্র রফিক ভাই পদ্মা সেতুর সরাসরি সুফলভোগী। তার বাড়ি মাদারীপুর। আর আমাদের কারো বাড়ি ময়মনসিংহে কারো নারায়ণগঞ্জে আবার কারো ঢাকা এবং চাঁদপুরে।
সবার উচ্ছ্বাসের মধ্যে ব্রিজের নিচ দিয়ে দক্ষিণ দিকে যাওয়া শুরু করলো ট্রলার। আর এই সুযোগে আমি পায়ের জুতা-মোজা খুলে নদীর ঠাণ্ডা পানিতে পা ভিজিয়ে রাখলাম। আমার এই অবস্থা দেখে কামাল উদ্দীন সুমন ভাই চোখের ইশারায় বিপজ্জনক অবস্থার সংকেত দিলেন। আমিও তার কথা মতো ভয়ে দ্রুত পা তুলে নিলাম এবং নৌকার মাথায় বসে মনোযোগের সাথে আবার পিলার গুণতে শুরু করলাম। এরমধ্যে কেউ ছবি কেউ সেলফি তোলায় ব্যস্ত রইলো। আমরা যারা পদ্মা নদীতে একেবারেই নতুন তারা কৌতূহল ভরে রফিক ভাইয়ের কাছ থেকে নানা রকমের তথ্য জানতে থাকলাম। রফিক ভাই সানন্দে আমাদের সবার প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন।
বেলা যখন ১২টা তখন পদ্মা সেতুর পিলার গুণতে গুণতে-৪০ নম্বর পিলার পর্যন্ত পৌছালাম। তখন আমাদের ট্রলার বাম দিকে মোড় নিলো। সামনে দেখা গেল পিলার নম্বর-৪১ এবং ৪২। তখন রফিক ভাই জানালেন সামনে চর থাকায় নৌকা নিয়ে ব্রিজের শেষ মাথায় যাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমাদের যেতে হবে শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝির ঘাটে। ট্রলার বাম দিয়ে মোড় নেয়ার সময় দেখলাম কিছুটা চরের ওপর ৪২ নম্বর পিলারের অবস্থান। এবং এই পিলার থেকে ব্রিজের মাথা দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে চলে গেছে। এক মাথা চলে গেছে শরীয়তপুর অন্য মাথা চলে গেছে মাদারীপুরের দিকে। নৌকায় বসে আরও জানতে পারলাম পদ্মা ব্রিজের অফিসিয়েল নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ তৈরি করা হয়েছে কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে। সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ( ২০ হাজার ২০০ফুট) প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার ( ৫৯ দশমিক ৪ ফুট)। নকশাকার: অঊঈঙগ, নির্মাণকারী: চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ, নির্মাণ শুরু:৭ ডিসেম্বর, ২০১৪,নির্মাণ শেষ: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ (আনুমানিক)। চালু: ২৬ মার্চ, ২০২২ (আনুমানিক)।
ট্রলার বাম দিকে মোড় নিয়ে আরও কিছুক্ষণ এগিয়ে চললো। মিনিট দশেক পূর্ব দিকে গিয়ে ডান দিকে আমাদের নিয়ে থামলো শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝির ঘাটে। আমরা হুড়মুড়ি দিয়ে নামলাম। আগেই জানা গিয়েছিল মাঝিরঘাটে খাটি গরুর দুধের চা পাওয়া যায়। শুরু হলো গরুর দুধের চায়ের দোকান খোঁজার পালা। বেশ একটা সময় ট্রলারে বসে থাকায় কারো কারো প্রকৃতির ডাক দিলো। এরমধ্যে রফিক ভাই আক্তার ভাইকে নিয়ে যান গরুর দুধের চায়ের দোকানের সন্ধানে। তাদের পিছনে আমরাও। এরমধ্যে হিরু ভাই মোরালি (এক প্রকার মিষ্টি) কিনে সবাইকে দিলেন। আমরা মোড়ালি ভাগ করে খেতে খেতে এগিয়ে যাই চায়ের দোকানের দিকে। মজা করে খেয়ে সবাই চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো পানি পানে। পানিতে প্রচুর আয়রণ থাকায় দুয়েকজন কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করলো।
চায়ের দোকানে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আবার ট্রলারে উঠার পালা। কিন্তু বাধ সাধলো নদীর পাড়ে বসা শাক-সবজির দোকান। সকাল বেলায় ক্ষেত থেকে তোলে আনা টাটকা শাকসবজির লোভ সামলানো গেল না। সবাই কিছুক্ষণের জন্য মেতে উঠলো শাক-সবজি কেনায়। এরমধ্যে সামসুল আরেফীন ভাই কিনলেন ক্ষেত থেকে সদ্য তুলে আনা টাটকা কলাই শাক আর টমেটো, জাফর ভাই আর নাসির উদ্দীন শোয়েব ভাই কিনলেন ৪টা কচি লাউ আর কয়েক কেজি টমেটো। এরমধ্যে আমিও কিনে ফেললাম ৪০ টাকায় সাড়ে সাত কেজি ওজনের কচি লাউ। মজার বিষয় হলো সবাই আমার সাড়ে সাত কেজি ওজনের লাউ দেখে সন্দেহ পোষণ করতে লাগলো যে, লাউ আদৌও কচি ( খাওয়ার উপযুক্ত) কি-না। সবাই বিশ্বাস না করলেও লাউ বিক্রেতা আশ্বস্ত করলেন যে, এই লাউ বড় জাতের এবং কচি হবেই। অতিশয় বড় হওয়ায় এই লাউ নিয়ে পুরো রাস্তাজুড়ে চললো রশিকতা, মশকরা। চললো লাউ নিয়ে ছবি তোলার হিড়িক। রশিকতার এক পর্যায়ে ট্রলার মাওয়া ঘাটে ভিড়ার সাথে সাথেই কামাল উদ্দিন সুমন ভাই বড় লাউয়ের বড় বোটা দিয়ে কান চুলকানোর কাজটাও সেরে নিলেন। তাতে সাহায্য করলেন কামরুজ্জামান হিরু ভাইসহ আরও অনেকে। এই কাজের সাক্ষী রাখতে ভুল করলেন না নাসির উদ্দিন শোয়েব ভাই। তিনি মোবাইলে তুলে রাখলেন সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি। সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি করলেন রফিকুল ইসলাম মিঞা ভাই। অবশ্য লাউ নিয়ে এত সব কাণ্ডে স্বাদ কিছুটা কমে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আমরা যখন পদ্মা সেতু দেখে মাওয়া ঘাটে ফিরলাম ততক্ষণে সূর্য মাথার ওপর। ঘড়ির কাটা দেড়টার ঘরে। দ্রুত মাওয়াঘাটের মসজিদে নামাজ সারলাম আমরা সবাই। নামাজের পরেও আমাকে পড়তে হয়েছে বড় লাউ নিয়ে প্রশ্নের মুখে। এত বড় লাউ কয় টাকায় কিনলেন। লাউ রান্নার জন্য সোল মাছ কেনা আছে কি-না ইত্যাদি ইত্যাদি। চারদিক থেকে প্রশ্নবান থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম আমরা সবাই।
নামাজের পর আমরা ফিরলাম সেই ‘নিউ নিরিবিল বিক্রমপুর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে’। হোটেলে এসে এবার দুপুরের খাবার খাওয়ার পালা। পদ্মাপাড়ে এলাম আর ইলিশ খাবো না তা কি করে হয়। অবশ্য আমাদের আগেই পরিকল্পনা করা ছিল যে, পদ্মাপাড়ে আমাদের দুপুরের মেন্যু হবে ইলিশ মাছ এবং ইলিশের ডিম ভাজা, সাথে থাকবে ইলিশ মাছের ভর্তা। সাথে যোগ হলো বড় বড় বেগুন ভাজা, ছোট মাছের তরকারি আর ঘন ডাল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ শ’ টাকায় দুইকেজির বেশি ওজনের দুটি ইলিশ কিনে হোটেলের কর্মচারীদের কাছে দিয়ে দেই। সাথে সাথেই তারা শুরু করে দেয় প্রক্রিয়াজাত করার কাজ। এখানে বলে রাখা ভালো- হোটেল বয়দের একজন রফিক ভাইয়ের পরিচিত হওয়ায় আমরা কিছুটা বাড়তি খাতির যত্ম পাই। যা হউক ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাত করার সময় আমরাও ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকি ইলিশ মাছ খাবারের উপযোগী করে তোলার কার্যক্রমের দৃশ্য। এরমধ্যে হিরু ভাই ছবি তুলতে ভুল করলেন না। আর যাওয়া আসার পথে কোন ইভেন্টই বাদ যায়নি রফিকুল ইসলাম মিঞা ভাইয়ের মোবাইল ক্যামেরায়।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ হলো দুপুর আড়াইটার মধ্যে। এবার ঢাকায় ফেরার পালা। রয়েছে অফিসের তাড়া। সন্ধ্যায় অফিসে ঢুকতে হবে। কিন্তু বাধ সাধলো কামরুজ্জামান হিরু ভাইয়ের মুন্সীগঞ্জের বিখ্যাত মিষ্টি খাওয়ার আবদার। সেই দশ বছর আগে মুন্সীগঞ্জে পুরাতন মাওয়াঘাটের পাশের বাজারে কালারবিহীন সুস্বাদু খাটি মিষ্টি খেয়েছিলেন। আমাদেরকেও সেই মিষ্টির দাওয়াত দিলেন। আমরাও নাছোরবান্দা। হিরু ভাইয়ের দাওয়াত মিছ করবো না আমরা কেউই। মজার বিষয় হলো দশ বছর আগের খাওয়া মিষ্টির স্বাদ মুখে লেগে থাকলেও ঠিকানাটা ঠিক মনে নেই। এবার সেই মিষ্টির দোকান খোঁজে বেরিয়ে পড়া। এক-ওকে জিজ্ঞেস করা। কেউ বলেন সেই মিষ্টির দোকান শিমুলিয়া বাজারে। আবার কেউ বলেন হলুদিয়ায়। আমরা গাড়িতে ওঠে প্রথমেই চলে গেলাম শিমুলিয়া বাজার পার হয়ে হলুদিয়াবাজারে। কিন্তু মিষ্টির কাক্সিক্ষত দোকানের দেখা মিললো না। অগ্যতায় ফিরে এসে মেইন রোড ধরে ঢাকার দিকে ছুটে চলা। গাড়ি মূল রাস্তা দিয়ে চলছে কিন্তু জাফর ইকবাল ভাই সেই মিষ্টির বায়না ছাড়লেন না। আবার শুরু হলো মিষ্টির দোকানের খোঁজ। শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল সেই কাক্সিক্ষত মিষ্টির দোকান।
গাড়ি থেকে নেমে খাবার টেবিলে বসতেই দুইটা করে রসগোল্লা দিল কারিগর। শুরুতে হিরু ভাইয়ের কথায় যে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল তার বাস্তবতা পাওয়া গেল মিষ্টি খাওয়ার পর। ব্যতিক্রমধর্মী এবং অনন্য স্বাদের মিষ্টি খেতে পেরে সবার বাহবা পেলেন ঢাকার ফকিরাপুলের ছেলে কামরুজ্জামান হিরু ভাই। আমরা দুইটা করে খাওয়ার পর আরও দুইটা করে খেলাম এই মিষ্টি। মিষ্টি খাওয়া শেষ হলে বাসার জন্য দুই কুড়ি করে মিষ্টি কিনে নিল সবাই। সঙ্গে দুই কেজির দইয়ের হাড়ি। মজার বিষয় হলো- সারাদেশে কেজি দরে মিষ্টি বিক্রি হলেও এখানে বিক্রি হয় কুড়ি দরে। অথাৎ বিশ পিচ মিষ্টির দাম দুইশ’ টাকা। জাফর ভাইয়ের তদবিরে আমাদের অবশ্য দুই শ’ টাকায় ২৫ পিচ দিয়েছিলেন বেচারা দোকানদার।
মিষ্টি পর্ব শেষ করতে করতে আসরের আজান হয়ে যায়। ঢাকায় ফেরার তাড়া বাড়তে থাকে। ড্রাইভার সাহেব দক্ষতার সাথে ড্রাইভিং করে মাগরিবের আজানেরর আগেই আমদের ঢাকাতে পৌঁছে দেন। যথাসময়ে অফিসে প্রবেশ করি আমরা সবাই।
Check Also
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কর্মশালায় সাংবাদিকদের দাওয়াত নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় হাওর না থাকলেও হাওরের ১০০ বছর এবং আমাদের করণীয়” বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত …