রাজশাহীতে ১৭ মাস ধরে শিক্ষানবিশ নারী আইনজীবীকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত চিকিৎসককে বিবাহের শর্তে জামিন দেয়া হয়েছে। বুধবার রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিচারক মনসুর আলমের উপস্থিতিতে ৫০ লাখ টাকার দেনমোহরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
জামিনপ্রাপ্ত চিকিৎসকের নাম সাখাওয়াত হোসেন রানা (৪০)। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ। ডা. রানার আগের সংসারে স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়ে করতে তাকে নগদে ২৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে এবং বাকি রাখা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। আর চিকিৎসক রানার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর পোরশা উপজেলায়।
রাজশাহী মহানগরীর টিকাপাড়া এলাকায় তিনি ভাড়া থাকেন চিকিৎসক রানা।
ওই নারী আইনজীবী কোর্ট এলাকার ভাড়া থাকেন। তিনি রাজশাহী জেলা জজ আদালতের শিক্ষানবিশ আইনজীবী। ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, প্রায় দেড় বছর আগে ডা. রানার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কিছু দিনের মধ্যেই ডা. রানা তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর একদিন কৌশলে তাকে ধর্ষণ করেন এবং সেই ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখেন।
তারপর সেই ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ১৭ মাস ধরে তাকে ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ গত ২৫শে জুলাই দুপুরে ডা. রানা ওই নারীর ভাড়া বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চান। এ সময় ওই নারীর বান্ধবী পুলিশের জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল দেন। এছাড়া তিনি আশপাশের লোকজনকে বিষয়টি জানান।
তখন এলাকাবাসী ওই চিকিৎসককে আটকে রাখেন। পরে রাজপাড়া থানা পুলিশ গিয়ে কিছু ভিডিও চিত্র উদ্ধার করে। এরপর ওই নারী ওই ঘটনায় ওই নারী আইনজীবী বাদী হয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের মামলা করেন। এই মামলার আসামি আজকে ওই নারীকে বিবাহের শর্তে আদালত থেকে জামিন পান।
বিয়ের পর ভুক্তভোগী ওই নারী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ডা. রানার বাবা গত সোমবার তার ছেলেকে বিয়ে করতে আমাকে প্রস্তাব দেন। অনেক কিছু ভেবে আমি রাজি হই। এরপর সেদিনই আদালতে একটি পিটিশন করা হয় যে, মামলার বাদী এবং আসামি বিয়ে করতে চান। আসামিকে যেন জামিন দেয়া হয়। এ দিন বিচারক আসামিকে বুধবার আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। বিচারক সিদ্ধান্ত দেন, আদালতেই তাদের বিয়ে হবে। সে অনুযায়ী আজ ডা. রানাকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এরপর বিচারকের সামনেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ওই নারী জানান, বিয়েতে তার পক্ষে আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম এবং রানার বন্ধু মাসুদুজ্জামান কাজল সাক্ষী হয়েছেন। রানার পক্ষে তার বাবা মোখলেসুর রহমান, ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম এবং হুমায়ুন কবীর নামে আরেকজন সাক্ষী হয়েছেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আদালত ডা. রানার জামিন মঞ্জুর করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি আদালতের হাজতখানায় ছিলেন। কাগজপত্র প্রস্তুত হলে বিকেলেই তিনি ছাড়া পাবেন।