ভারী অস্ত্রে রাজপথে ট্রাম্প সমর্থকরা বাইডেনের শপথ আজ নজিরবিহীন নিরাপত্তায়

নজিরবিহীন বিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন জো বাইডেন অভিষেকের আগে অভ্যন্তরিণ হুমকির কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন অস্থায়ী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার। এ দিকে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মার্কিনীরা। প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে ভার্জিনিয়া অঙ্গ রাজ্যে ভারী অস্ত্র হাতে দাপটের সঙ্গে রাজপথে মহড়া দেয় অনেকে ও ট্রাম্পের এক দল সমর্থক।
নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন জো বাইডেন। এদিন সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ হামলা এড়াতে ওয়াশিংটনে মোতায়েন ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজার সদস্যের নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। আর্মি সেক্রেটারি রায়ান ম্যাকার্থি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, তিনি এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ গার্ড সদস্যদের মধ্য থেকে কোনও হুমকির প্রমাণ দেখেননি। ভয়েজ অব আমেরিকা, ওয়াশিংটন পোস্ট ফক্স নিউজ।
রাজধানী ওয়াশিংটনের বেশিরভাগ রাস্তা এবং মেট্রো স্টেশনগুলোর পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ জাতীয় উদ্যান হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল মলও বন্ধ করে দিয়েছে। ভার্জিনিয়া রাজ্য থেকে শহরে প্রবেশের সেতুগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আরও সহিংসতার হাত থেকে রক্ষার জন্য হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা পুরো এলাকাজুড়ে অবস্থান করছেন। তীব্র নিরাপত্তা উদ্বেগ সত্ত্বেও বাইডেন অনুষ্ঠানটি ঐতিহ্যবাহী স্থানেই করার পরিকল্পনা করছেন।
আসন্ন বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য যোগাযোগ পরিচালক কেইট বেডিংফিল্ড এবিসি-র ‘দিস উইক শো-তে বলেছেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ বুধবার (২০ জানুয়ারি) ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম পাশে বাইরের দিকে পরিবারের সঙ্গে বাইবেলে হাত রেখে শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘বাইডেন এবং তার দলের যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছেন।’
বুধবার একটি ‘নতুন প্রশাসন’ আসবে ট্রাম্প তা মেনে নেয়া সত্ত্বেও নিজের পরাজয় মেনে নিতে বা বাইডেনকে অভিনন্দন জানাতে অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ১৬০ বছরের মার্কিন ঐতিহ্য উপেক্ষা করে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প বুধবার সকালে একটি বিদায়ী লাল গালিচা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। এরপর প্রেসিডেন্টের বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ে তিনি ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা।
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের আগে অভ্যন্তরীণ হুমকির কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন দেশটির অস্থায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার।
পেন্টাগনের (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) এই অস্থায়ী প্রধান সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টে জো বাইডেনের অভিষেক ঘিরে সম্ভাব্য নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের সুরক্ষায় সহায়তা করতে ২৫ হাজারেরও বেশি ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের ব্যাকগ্রাউন্ড পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে আর এই কাজে এফবি আই সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করছে।
“যদিও আমাদের কাছে অভ্যন্তরীণ হুমকির কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই তারপরও বড় ধরনের নিরাপত্তা ইভেন্টের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা স্বাভাবিক, রাজধানীকে সুরক্ষিত করতে ‘কোনো পাথরই উল্টে দেখতে’ বাকি রাখছি না আমরা,” বিবৃতিতে বলেছেন মিলার। মিলার জানিয়েছেন, এই কাজে এফবি আইয়ের সহায়তার প্রশংসা করেন তিনি।
৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলা চালিয়েছিল। ওই ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হন ও মার্কিন আইনপ্রণেতারা আত্মরক্ষার্থে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য হন। এই ঘটনার জেরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ক্যাপিটল ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।
বড় ধরনের নিরাপত্তা জোন ঘোষণা করে সেখানে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বেঁয়ে ওঠা যাবে না এমন নিরাপত্তা বেড়া দিয়ে এগুলোর ওপর কাঁটাতার লাগানো হয়েছে।
গত সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চরম ডানপন্থি উগ্রবাদীরা ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য সেজে উপস্থিত থাকার বিষয়ে আলোচনা করেছে, এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক করেছে এফবি আই।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনটিতে অভিষেক অনুষ্ঠানে হামলার নির্দিষ্ট কোনো ছক শনাক্ত করা হয়নি বলে পোষ্ট জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কোনো হামলাকারী বর্তমান বাহিনীর সদস্য কিনা এটি দেখতে এফবি আইয়ের সঙ্গে কাজ করছে তারা আর বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের সুরক্ষায় নিয়োজিত প্রায় ১০ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনার মধ্যে কারও ব্যাকগ্রাউন্ড আরও পরীক্ষা করে দেখার দরকার আছে কিনা সিক্রেট সার্ভিস তা যাচাই করে দেখছে।
শপথ অনুষ্ঠাকে ঘিরে থাকা এলাকার সুরক্ষায় সহায়তা করতে ডাকা প্রত্যেক ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ব্যাকগ্রাউন্ড কর্তৃপক্ষ কেন যাচাই করে দেখছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের অস্থায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার গেইনার সোমবার বলেছেন, “এটি বিচক্ষণ পদক্ষেপ হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এফবি আই ও অন্যান্যরা।”
তিনি বলেছেন, ভিতর থেকে কোনো হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ দেখেননি তিনি, কিন্তু শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য হুমকি থাকায় কর্তৃপক্ষ কোনো কিছুই নজরদারির বাইরে রাখতে চাইছে না।
কর্তৃপক্ষ কয়েকদিন ধরে রাজধানীর ওয়াশিংটন ন্যাশনাল মলসহ বেশ কয়েকটি বড় পার্কে প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া ও ভার্জিনিয়ার মধ্যেবর্তী পোটোম্যাক নদীর সেতুগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ বুধবারের অভিষেক অনুষ্ঠান সামনে রেখে ওয়াশিংটন ডিসির এক ডজনেরও বেশি সাবওয়ে স্টেশনও বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্তত একটি বাস কোম্পানি অভিষেকের আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাস ভ্রমণ স্থগিত রেখেছে, বাইডেনের অভিষেকের সপ্তাহটিতে এয়ারবিএনবি রাজধানীতে হোম-শেয়ারিং রিজার্ভেশন বাতিল করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইনগুলি ডিসি এলাকার ফ্লাইটের জন্য নতুন নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে।
এছাড়া উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মার্কিনিরা। আজ বুধবার বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান। আর এ অনুষ্ঠানের সময় যতই এগিয়ে আসছে ঘুমোটভাব ততই বাড়ছে। রাজপথে সাধারণ মানুষের চলা ফেরাতেও অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম অবস্থানে ট্রাম্পের সশস্ত্র সমর্থকরা। প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে ভারী অস্ত্র হাতে দাপটের সঙ্গে রাজপথে মহড়া দেয় অনেকে।
এদিন সামরিক পোশাকের আদলে বিশেষ পোশাকে ভার্জিনিয়ার রাজপথে বেরিয়ে আসে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একদল সমর্থক। তাদের সবারই হাতে ছিল সংক্রিয় আধুনিক অস্ত্র। বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের বিরোধিতায় তারা অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ করেন। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ডও।
একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করছি। কোনো ধরনের সহিংস আচরণ কেউ করেনি। তবে নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের সঙ্গে যা করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’
বিক্ষোভকারীরা এক পর্যায়ে গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মহড়া দেয়। তাদের কণ্ঠে ছিল ‘কিপ আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’।
ট্রাম্পের শাসনামলে নানা কারণেই ক্ষুব্ধ কৃষ্ণাঙ্গরা। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে দীর্ঘদিন ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটরস বা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন উত্তপ্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশি নির্যাতনে এক কৃষ্ণাঙ্গ নিহতের ঘটনার জেরে ট্রাম্পের ওপর যতটুকু আস্থা ছিল তাও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সোমবারের বিক্ষোভে কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
নামে বেনামের ব্যানারে গাড়ি নিয়ে মহড়া দেন তারা। কিন্তু পুলিশকে কোনো ধরনের অ্যাকশনে যেতে দেখা যায়নি। আজ বুধবার শপথ নিতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। আর এতেই শেষ হচ্ছে ট্রাম্পের অধ্যায়। আজ সকালেই ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাচ্ছেন বলে খবরে জানা গেছে।
ট্রাম্পের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নাশকতার আশঙ্কায় জোরদার করা হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা হুমকির জেরে ক্যাপিটল হিলে জারি করা হয়েছে লকডাউন। তবে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের পরও নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। আগামী কয়েকদিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সব ধরনের সভা সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।