কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় আসামী পক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামীপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুর দু’টোয় সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীরের আদালতে এ যুক্তিতর্ক উপাস্থাপন শেষে পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপেেনর জন্য বৃহষ্পতিবার দিন ধার্য করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, সহকারি এটর্ণি জেনারেল শাহীন মৃধা, সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফ, সাবেক পিপি এড. ওসমান গণি, অতিরিক্ত পিপি এড. ফাহিমুল হক কিসলু, সাবেক পিপি এড. তপন কুমার দাস, সাবেক অতিরিক্ত পিপি এড. আজাহার হোসেন, এড. শহীদুল ইসলাম পিন্টু, অতিরিক্ত পিপি এড. সৈয়দ জিয়াউর রহমান বাচ্চু, এড. নাজমুন্নাহার ঝুমুর, এড. শাহানাজ পারভিন মিলি, এড. জিয়াউর রহমান, এড. ফারুক হোসেন (২) এড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহনেওয়াজ প্রমুখ।

আসামীপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন বাংলাদেশ হাইকোর্টের এড.শাহানারা আক্তার বকুল, এড. আব্দুল মজিদ(২), এড. মিজানুর রহমান পিন্টু, এড কামরুজ্জামান ভুট্টো, এড. মশিউর রহমান ফারুক, এড. সেলিনা আক্তার শেলি প্রমুখ।

বুধবার সকাল পৌনে ১১টায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে বাংলাদেশের অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনির, ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, সহকারি এটর্ণি জেনারেল শাহীন মৃধা বলেন, মামলার অভিযোগ গঠণের পর সাবেক সাংসদ ও বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর হাইকোর্টে গেলে তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

সে অনুযায়ি তিনি নিম্ম আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। তাই হাইকোর্টে যাওয়ার আগে আসামী হাবিবের কোন প্রকার বিচারিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ ছিল না। এ ছাড়া হাবিবের বিরুদ্ধে কোন কোন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছে তা তুলে ধরেন। úরিকল্পিতভাবে একই উদ্দেশ্যে ও একই বিষয়ে ৫০ জন আসামী যে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছিল তা সাক্ষীদের জবানবন্দির অংশ বিশেষ তুলে ধরেন তারা।

ঘটনার তারিখে সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরীর ১১১৭ নং সাধারণ ডায়েরীতে উল্লে¬খিত বক্তব্য তুলে ধরে তারা বলেন, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ছিল কলারোয়া থানা পুলিশের নীরবতায় কলারোয়া প্রেসক্লাবে, থানার সামনে ও থানার মধ্যে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালানো হয়। সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হাবিবকে থানা কমপাউন্ডের মধ্যে মারপিটের পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন সাংবাদিক হাবিবুর রহমানকে যেভাবে হত্যার হুমকি ও মহিলা ডেকে এনে ধর্ষণের মামলা দেওয়ার হুমকি দেয় তা আদালতকে অবহিত করা হয়।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে কোন প্রকার দালিলিক প্রমাণ ছাড়া সাফাই সাক্ষীদের (কেউ হত্যা ও নাশকতা মামলার আসামী আবার কেউ কলেজ শিক্ষক হয়েও শালিসদার) সাক্ষ্যর বিষয়টি এসএম মুনির তুলে ধরে বলেন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা এড. রুহুল কবীর রিজভি সাতক্ষীরা আদালতে সাবেক সাংসদ ও আসামী হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে অনুমতি না নিয়ে অসুস্থতার ভান দেখিয়ে লাঠি নিয়ে আদালতে ঢুকেছেন।

অথচ ফিরে যাওয়ার সময় যশোর বিমানবন্দরে ও ঢাকা বিমানবন্দরে তিনি লাঠি ছাড়াই ভালভাবে চলাফেরা করেছেন। ১১টা ৫০ মিনিটে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ আসামীপক্ষের আইনজীবী ও বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রাক্কালে আসামী পক্ষের আইনজীবী এড. কামরুজ্জামান ভুট্টো ও এড. মোশাররফ হোসেন ফারুকসহ কয়েকজন এসএম মুনিরকে কটাক্ষ করেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের এপিলেড ডিভিশনে ১৪৯ ধারার ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন এসএম মনির। মামলার আসামীর প্রত্যেককে কারাদন্ড সর্বোচ্চ ২৬ বছর হতে পারে তার স্বপক্ষে সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপিত জবানবন্দির আইনি ব্যাখা তুলে ধরেন এসএম মুনীর ও সুজিত চ্যাটার্জী। এরমধ্যে কোন রাজনৈতিক দল না করা বিবিসিতে সম্প্রচারিত হওয়া বাস চালক নজিবুল¬াহ’র জবানবন্দি ও তিনজন সাংবাদিক এর সাক্ষ্য দানের বিষয়টি বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

সর্বপরি এসএম মুনীর ও সুজিত চ্যাটার্জী বলেন, একটি রাষ্ট্রের বিরোধী দলীয় নেত্রীর উপর যদিও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাও হামলা করে সেটা যেন ক্ষমা না করা হয়। তাই দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান রাখতে সংশি¬ষ্ট সকল ধারা সহযোগে আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তারা।

অপরদিকে আসামীপক্ষের আইনজীবী এড আব্দুল মজিদ(২) বলেন, মামলার বাদি মোসলেমউদ্দিন কমান্ডার ২০০২ সালের ২ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করলে বিচারক দন্ডবিধির মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে প্রতিবেদন ও অপর অংশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলারোয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। দু’টি প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা না মিললেও বাদি একটি অংশে আদালতে নারাজির আবেদন করেন।

২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আসামীপক্ষের স্থগিতাদেশ খারিজ করে দিয়ে বাদির নারাজির আবেদনটি স্বচ্ছ অভিযোগ হিসেবে নিম্ন আদালত আমলে নিতে পারে হাইকোর্ট এমন আদেশ দেন। অথচ সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম বাদির জবানবন্দি ২০০ ধারায় রেকর্ড করে ২০২ ধারার পরিবর্তে ১৫৬(৩) ধারায় ২০০২ সালের ২ সেপ্টেম্বরের অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে যে আদেশ দেন তা হাইকোর্টের আদেশ এর ব্যাত্যয় ঘটেছে বলে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই আইনজীবী।

পরবর্তীতে এজাহারে বর্ণিত আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও সাক্ষীদের জেরার পর ঘটনার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আব্দুল মজিদ। পরবর্তীতে আব্দুল মজিদ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান দু’জন মৃত ব্যক্তির নামে ও ভুল নাম ঠিকানাসহ ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ায় পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৭ মে ৫০ জনের নাম উল্লে¬খ করে আদালতে একটি সম্পুরক অভিযোগপত্র দাখিলের কথা কথা তুলে ধরেন।

একইভাবে গত বছরের ৪ নভেম্বর বাদিকে রাষ্ট্রপক্ষ পূণঃসাক্ষীর আবেদন করলেও তারাই তা প্রত্যাহার করে নিলেও আসামীপক্ষ আবেদন করলেও বিচারক তা খারিজ করে দেওয়ায় তাকে জেরা না করতে পারার বিষয়টি বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে যশোরে ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়।

এ ঘটনায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লে¬খ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়।

পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লে¬খ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। পেনালকোর্ডের মামলাটি(টিআর-১৫১/১৫) সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন।

বৃহষ্পতিবার আসামীপক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য ধার্য দিন এর বিষয়টি নিশ্চিত করেন মুখ্য বিচারিক হাাকিম আদালতের পেশকার মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম। https://patradoot.ne

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।