তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও শেষের দিকে হাল ছেড়ে দিয়ে ঘরেই বসেছিল আর নির্বাচনের দিন সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের দিন বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছে, ইভিএম মেশিন ভেঙ্গে দিয়েছে, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলামের ছেলেসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে। তবে, একটি সহিংসতা হয়েছে দুই ভাইয়ের মধ্যে। এতে এক ভাই আরেক ভাইকে হত্যা করেছে। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তুনির্বাচনটাকে কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য বিএনপির যেভাবে মাঠে থাকার প্রয়োজন ছিল, তা তারা ছিল না।’
বিএনপি’র অভিযোগগুলো গৎবাঁধা, মুখ রক্ষার জন্য ও নাচতে না জানলে উঠান বাঁকার মতো উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘বেশিরভাগ জায়গায় বিএনপির এজেন্ট যায়নি। নির্বাচনের সময় তারা এজেন্টেকে বের করে দিয়েছে এ ধরণের অভিযোগ করছে, কিন্তু এজেন্ট তো যায়ই নি, বের করবে কাকে?’
সার্বিকভাবে বাংলাদেশে সিটি করপোরেশন নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবসময় ছোটখাট ঘটনা ঘটেছে, যা পশ্চিমবাংলাসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও ঘটেছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘২০১৮ সালে কোলকাতা সিটি করপোরেশন এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেছে। এমনকি কোলকাতা সিটি নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী রূপা গাঙ্গুলির উপস্থিতিতেই তার নির্বাচনী প্রচারণা মিটিং ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল, তাকে দৌড়ে একটা ঘরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। সে ধরণের ঘটনা এখানে ঘটেনি।’
করোনার মধ্যে ভোটার উপস্থিতি একটু কম ছিল এবং এসময় খুব বেশিসংখ্যক ভোটার উপস্থিতি আশা করাও সঠিক নয় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯৯৪ সালের পর কার্যত বিএনপি কখনো জয়লাভ করেনি। ২০১০ সালে প্রতীকবিহীন নির্বাচনে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু সাহেবকে তারা মনোনয়ন দিয়েছিল যিনি সারাজীবন আওয়ামী লীগ করেছেন, বিএনপির আহ্বানে ‘হায়ারে খেলতে’ গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে তার কাজ ও বঙ্গমাতার নামে ফাউন্ডেশন ও স্কুল পরিচালনার ফলে আওয়ামী লীগের বহুলোক তারপক্ষে কাজ করেছিল বলে তিনি জিতেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, ’৯৪ সালের পর থেকে তারা কোনো জয় পায়নি, এবারও তাদের কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী জয়লাভ করেনি। চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগেরই ঘাঁটি।’
মন্ত্রী কবে করোনার টিকা নেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনার টিকা অগ্রাধিকার অনুযায়ী আমার অবস্থান কোথায় আমি জানি না। তবে, যেহেতু ৫৫ বছরের বেশি বয়সের সবাই টিকা পাবে এবং আমার বয়স ৫৫ এর বেশি, তাই আমি টিকা পাওয়ার যোগ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগে জনগণকে দিয়ে পরে আমরা নেব। আমি মনে করি, জনগণকে টিকা দেয়ার পর যারা ফ্রন্ট লাইন ফাইটার বা যাদের টিকা পাওয়া খুবই জরুরি তাদের পর আমাদের অধিকার। আমি মনে করি, জনগণের অধিকার আগে।
আলোকচিত্র সাংবাদিকতার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবাদের সাথে ছবি যোগ হলে পূর্ণতা আসে। আলোকচিত্র শিল্পীরা কোনো একটা ঘটনা বা মুহূর্তকে যেভাবে জীবন্ত করে তোলেন সেটা কালের অসাধারণ সাক্ষী হয়ে থাকে। আলোকচিত্র সাংবাদিকদের তোলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধিকার আন্দোলন কিম্বা দেশ বিভাগের সময়কার কিম্বা তারও আগের বহু ছবি কালজয়ী হয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা এবং সাধারণ সম্পাদক কাজল হাজরা এসময় সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে মন্ত্রীর সহায়তা চান। এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নাসিম সিকদার, ইয়াসিন বাবুল, যুগ্ম-সম্পাদক জীবন আমীর, শেখ হাসান, অর্থ-সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোবারক হোসেন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রফিক উদ্দিন এনায়েত, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আজিজ ফারুকী, নির্বাহী সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, মো: হারুন-অর-রশীদ রুবেল, জাহিদুল ইসলাম সজল এবং আবদুল্লাহ আল মমীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।