জাফর ইকবাল : দেশের যে কোনো নির্বাচনেই এখন জনগণের ন্যূনতম আগ্রহ নেই। ভোটার উপস্থিতিও হাতেগোনা। এটা গত একদশকেরও বেশী সময় ধরে চলে আসছে। চলতি বছরের শুরুতে উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনের পর সম্প্রতি শেষ হওয়া চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের সার্বিক চিত্র এখন দেশজুড়ে আলোচনার বিষয়। নির্বাচন নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনারসহ রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের বক্তব্য হচ্ছে, এভাবে নির্বাচন করে জানমালের ক্ষতির পাশাপাশি দেশের অর্থ অপচয়ের কোনো মানে নেই। সরকার তাদের ইচ্ছে মতো ‘অটোপাস’ দিয়ে দিলেই হয়। এমন ভোটে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্যাদা থাকবে না।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন অনিয়মের একটি মডেল। ভবিষ্যতে এই মডেল অনুসরণ করা হলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখা যাবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় শামিল হতে চাই। চসিক নির্বাচনে যে অরাজকতা দেখা গেছে, তাতে আমি হতাশ। আমার আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো এবং সাবধানবাণীতে কোনো কাজ হলো না। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনকালে মোট চারজনের প্রাণহানি প্রকারান্তরে চারটি পরিবারের প্রাণহানির নামান্তর। সহিসংতা, কেন্দ্র দখল, পুলিশের গাড়ি ও ইভিএম ভাঙচুর ইত্যাদি ঘটনা এই নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। এ ধরনের তাণ্ডব বন্ধ করতে আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ খুঁজে পেতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ব্যতীত তা সম্ভব হবে না। এ জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলের ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন। মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, চসিক নির্বাচনে ভোট পড়েছে শতকরা সাড়ে ২২ ভাগ মাত্র। এত অল্পসংখ্যক ভোট গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিয়ামক হতে পারে না। এই পরিস্থিতি নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার পরিচায়ক, যা গণতন্ত্রের জন্য এক অশনিসংকেত। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমরা সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারব না, তা মেনে নেয়া যায় না।
সূত্র মতে, শান্তির শহর’ বলে খ্যাত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিবার্চন অনুষ্ঠিত হলো রক্তপাত, প্রাণহানি, কেন্দ্র দখল ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে। নির্বাচনের পরিবেশ আগে থেকেই উত্তপ্ত ছিল। এ কারণে নির্বাচনের দিন সহিংস ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল নির্বাচন বিশ্লেষক, নাগরিক সমাজ ও প্রশাসনের তরফ থেকে। আশঙ্কা ও উত্তেজনা সত্ত্বেও দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যথাযথ নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আবারো চরমভাবে ব্যর্থ হলো নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন। এমনিতেই গত এক দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি দেশের মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে থাকে এবং সারাদেশে একযোগে একদিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেখানে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি পুলিশ এবং প্রশাসনের পক্ষপাত হয়তো এড়ানো যায়নি। কিন্তু প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে সে ধারা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি ভোটার ও নাগরিক সমাজের অনাস্থাকে এখন ভীতির পর্যায়ে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ প্রবণতা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, সে প্রশ্ন এখন প্রকট হয়ে উঠেছে। এ থেকে উত্তরণের কোনো রাজনৈতিক প্রয়াসও দেখা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, গত বছর অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে আশঙ্কা দেখা গিয়েছিল। ভোটের দিন তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের ভোটসহ ব্যাপক নির্বাচনী অনিয়মের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারপর বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন পরিবর্তনেরও দাবি উঠেছিল। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। সরকার বলেছিল, পরবর্তী স্থানীয় নির্বাচনে অন্তত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থেই অংশগ্রহণমূলক করে তুলবে। আদতে তা হয়নি। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা, অদক্ষতা এবং দুর্বল অবস্থানের চিত্রই ফুটে উঠেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন তার সর্বশেষ উদাহরণ। যেখানে আগের নির্বাচনগুলো সরকারিদলের পক্ষে প্রায় একতরফা হওয়ার কারণে নির্বাচনে সব ধরনের অনিয়ম সত্ত্বেও সংঘাত-সহিংসতা এমন প্রকট হয়ে উঠেনি। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে সে ধারায় নতুন বাস্তবতা দেখা গেলো। নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রার্থীরা টিকতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিলেও সরকারি দলের মনোনীত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা গোলাগুলি ও সংঘাতে প্রাণ গেল অন্তত ৫ জনের। এরা প্রায় সবাই সরকারিদলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক বলে জানা গেছে। নির্বাচনের প্রার্থী, সমর্থক এবং প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশিত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেয়ার উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ছিল। সে দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের পর প্রশাসনের নির্লিপ্তভাব, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি এবং বিরোধীদলের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ব্যত্যয় হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভোটকেন্দ্রের চিত্র থেকে সহজেই বোঝা যায়, ভোটের পুরো দৃশ্যপট ছিল সরকারিদলের প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের দখলে। তাদের কোন্দলের কারণে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপির অধিকাংশ এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভোটের গোপন কক্ষ সরকারি দলের এজেন্টদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া এবং ভোটকেন্দ্রেরে বাইরে অস্ত্র ও পেশিশক্তির মহড়া ইত্যাদির দায়ভার নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসছে, আগামী নির্বাচনের আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে এই নির্বাচনটি নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ ছিল। কমিশন এখানেও চরমভাবে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী ও সমর্থকদের ভূমিকা নজরে রাখার দায়িত্বও নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের একটি ইতিবাচক শান্তিপূর্ণ ঐতিহ্য আছে। এবারের নির্বাচনে তা ব্যাহত হলো।
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই নির্বাচন কমিশন সিরিয়াল কিলার। এই সিরিয়াল কিলার নিরাপদে ঘুরে বেড়াবে এটা কি কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে। সিরিয়াল কিলারের একটা মাত্র অবস্থান তাদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে বিচারের আওতায় আনা। তাদের এই অন্যায় আচরণ, গণতন্ত্র হত্যার জন্য বারে বারে প্রতিটি ক্ষেত্রে যখই চেষ্টা হয়েছে তখনই এই নির্বাচন কমিশন চরম ব্যর্থতার পিরচয় দিয়েছে। কেবল তাই নয় ৪২ জন সিনিয়র সিটিজেনরা পরিস্কার ভাবে দেখিয়েছেন তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। শুধু তাই নাই তারা দূর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।
চট্টগ্রামের নির্বাচন প্রসঙ্গে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সম্পর্ণূ ব্যর্থ। তাদের ব্যর্থতা তলানিতে এসে পৌঁছেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা যেখানে ভালো হওয়ার কথা সেখানে দিন দিন খারাপ হচ্ছে। চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী নির্বাচন ব্যবস্থার একটা খারাপ নজির তৈরি করল। প্রায় তিন দশকের মধ্যে চট্টগ্রামে এবার ভোটের দিন মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এটা লজ্জা ছাড়া কিছুই নয়। তিনি বলেন, খুন ও সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটার পরও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নির্বাচন বন্ধ কিংবা কারও প্রার্থিতা বাতিল করেনি। তারা শুধু ব্যর্থ নয়, চরমভাবে পক্ষপাতদুষ্ট ও দুর্নীতিগ্রস্ত।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে কিছু বলতে আর মন চায় না। চট্টগ্রামে এরচেয়ে খারাপ নির্বাচন আর কখনও হয়নি। রক্তাক্ত নির্বাচন। ভোটারদের ভোট দিতে দেয়া হয়নি। শত শত বহিরাগত কেন্দ্রের সামনে মহড়া দিয়েছে। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বৃহস্পতিবার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো অবাধ ও সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এ দায়িত্ব বর্তমান ইসি কোনো নির্বাচনেই সুচারুভাবে পালন করতে পারেনি। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোটের আগে যে ধরনের প্রচার লক্ষ্য করা গেছে ভোটের দিন সেই প্রতিফলন দেখা যায়নি। একচেটিয়া ফলাফল হলো। নির্বাচন কতটা নিখুঁত হয়েছে সেটা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন আছে। তাছাড়া ভোটের দিন ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে ফের প্রমাণিত হলো এ নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার যোগ্যতা রাখে না। ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে তারা স্বপ্নের রাজ্যে বাস করছে।
নির্বাচনে জানমালের ক্ষতি না করে সরকারের প্রতি অটোপাসের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে জাতীয়পার্টি। দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, যেভাবে এইচএসসিতে অটোপাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে- তেমনিভাবে নির্বাচনে মানুষের জানমালের ক্ষতি না করে অটোপাসের ব্যবস্থা করুন।
সদ্য সমাপ্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘রক্তাক্ত’ নির্বাচন আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশনকে আমরা সবসময় বলে আসছি এটি নিরপেক্ষ কোনো সংগঠন নয়। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন আওয়ামী লীগের একটা লেজুড়ভিত্তিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার কোনো ব্যক্তিত্ব নেই, সংবিধান অনুসারে তার এই প্রতিষ্ঠানকে চালানোর কোনো ক্ষমতা নেই। আপনারা দেখেছেন চট্টগ্রামে একেবারে রক্তাক্ত নির্বাচন হয়েছে। কয়েকজন মারা গেছে। বিরোধী দল অর্থাৎ বিএনপির কোনো এজেন্টকে কেন্দ্রে থাকতে দেয়া হয়নি। তাদের শারীরিক অত্যাচার করে বের করে দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিএনপি নেতারা নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে। তারা নামেমাত্র নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করতে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। মির্জা ফখরুলের এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, যেখানে কেন্দ্রে তাদের এজেন্টই ছিলো না সেখানে এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ অবান্তর ও ভিত্তিহীন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, লুটপাটে ব্যস্ত। উনার তো সুষ্ঠু ভোটের দরকার নাই, কিছু লোককে প্রশিক্ষণ দেবে এজন্য টাকা বরাদ্দ দরকার। ইভিএম মেশিন একটা জালিয়াতির মেশিন। সেই মেশিন কিনতে হবে, এজন্য উনার টাকা দরকার। আর সেই টাকা লোপাট করবেন তিনিসহ অন্যান্য কমিশনার। সিইসির কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আপনি নিজের আত্মা বিক্রি করেছেন। আপনি নাকি আমলা ছিলেন, ডিসি ছিলেন? এত বড় ক্রীতদাস্ত ক্রীতদাসরাও তো মাঝে মাঝে মালিকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে বিদ্রোহ করেন। আপনার মতো এ ধরনের ক্রীতদাস আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সাবেক সচিব ও কলাম লেখক আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিকল্প নেই, সে নির্বাচন জাতীয় বা স্থানীয় যে পর্যায়েই অনুষ্ঠিত হোক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্যের অধিকারী হলেও এ সময়ে জনগণের কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র পিছিয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর থেকে দেশে গণতন্ত্র চর্চার অনুকূল পরিবেশের অভাব দেখা দেয়। বিরোধী দলগুলোর, বিশেষ করে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানে নানারকম বাধা প্রদান করা হয়। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হয়। তাদের অনেকে কারাগারে অন্তরিন থাকেন। শত বাধা-বিপত্তির মুখে বিএনপিসহ বিভিন্ন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও সে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শাসক দল আওয়ামী লীগের অধীন নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ফলাফল দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। শুধু যে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণহীন ও সুষ্ঠু হয়নি তা নয়, এ দুটি সংসদ নির্বাচনের মধ্যবর্তী এবং একাদশ সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০১৫, পৌরসভা নির্বাচন ২০১৫, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০১৬, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২০ এবং চলমান উপ-নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
Check Also
বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন
দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …