মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের নিন্দায় সরব বিশ্ব। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এ অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। তবে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত চীনের এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ মিয়ানমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। প্রেস নোটের মাধ্যমে পরবর্তীতে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সোমবার সুচিকে গ্রেপ্তারের ঘটনার পর গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন। ওদিকে, আল জাজিরার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে ভারত পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখছে। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়ার প্রতি ভারতের সমর্থন সব সময়ই অবিচল ছিল।
আমরা বিশ্বাস করি যে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত থাকবে। আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান- সুচি
সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি। তার দল মিয়ানমার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) ফেসবুক ভেরিফাইড একাউন্টে তার পক্ষে একটি বিবৃতি প্রকাশ হয়েছে সোমবার। তাতে সুচির পক্ষে পোস্টে বলা হয়েছে, জনগণের সামরিক অভ্যুত্থান মেনে নেয়া উচিত হবে না। তাদের উচিত এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা। ফেসবুকে এই একাউন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময় ব্যবহার করেছে এনএলডি। সেখানে পোস্ট করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। তবে এ বিষয়ে এনএলডির কোনো পদস্থ কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সোমবার ভোরে অং সান সুচিকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। তারপর থেকে তাকে কোথায় রাখা হয়েছে বা তিনি কেমন আছেন তা জানা যাচ্ছে না। এই অভিযানে সেনাবাহিনী এনএলডির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও কর্মীদেরও আটক করেছে। ফেসবুকে অং সান সুচির নামে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তবে তাতে তার কোনো স্বাক্ষর নেই। এতে সুচি বলেছেন, সেনাবাহিনীর এই কর্মকান্ড দেশকে আবার স্বৈরাচারের অধীনে নিয়ে যাবে। জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই এটা মেনে নেবেন না। এর প্রতিবাদ জানান। সর্বান্তকরণে দেশে সেনাবাহিনীর এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন। বিবৃতিটি ইস্যু করেছেন এনএলডির চেয়ারম্যান উইন হতেইন। এর নিচে তার হাতের লেখা একটি নোট রয়েছে। ফলে এই বিবৃতি যে যথার্থ তা পরিষ্কার এবং এতে অং সান সুচির ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।
গণতন্ত্র হত্যার নিন্দা জানাই: রোহিঙ্গা নেতা
বাংলাদেশে থাকা এক রোহিঙ্গা নেতা মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সম্প্রদায় মিয়ানমারে গণতন্ত্রকে হত্যার এই ঘৃণ্য চেষ্টার নিন্দা জানাই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি তারা যাতে এগিয়ে আসে এবং যেকোন মূল্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।
সেনাঅভ্যুত্থানের নিন্দায় যুক্তরাষ্ট্র
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সব আটক নেতাদের মুক্তি দাবি করেছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি এবং উন্নয়নের প্রতি বার্মার জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। সামরিক বাহিনীর তাদের পদক্ষেপ থেকে এখনি সরে আসা উচিত।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী মারিজ পেইনি বলেন, আইনের শাসন মেনে চলতে, আইনি প্রক্রিয়ায় চলমান দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তিতে এবং বেসামরিক সব নেতা ও অন্য যাদের বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে সামরিক বাহিনীকে আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে কড়া ভাষায় নেতাদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে।
ভোটে জালিয়াতির কারণেই এই পদক্ষেপ: মিয়ানমার সেনাবাহিনী
অং সান সুচিসহ সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তারের কারণ জানিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গত বছরের নির্বাচনে জালিয়াতির কারণেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
ওদিকে, শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর সেনাবাহিনী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। সামরিক বাহিনী পরিচালিত টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিও ভাষণে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে ঘিরে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার ও প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার পর এ অভ্যুত্থান ঘটল।