মিয়ানমারে মুখ খুললেই গ্রেফতার এবার আটক সু চির ‘ডান হাত’ * ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার আভাস সেনাবাহিনীর

সেনা শাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই গ্রেফতার করা হচ্ছে মিয়ানমারে । চলছে নানা হয়রানি, ব্যাপক দমনপীড়ন।

অভ্যুত্থানের দিন থেকে এপর্যন্ত (পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার ) ১৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৩ জনই দেশটির নেত্রী ও সদ্য সাবেক স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির দল এনএলডির এমপি ও নেতাকর্মী।

১৪ জন মানবাধিকার কর্মীও। শুক্রবার নতুন করে সুচির ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত উইন থেইনকেও আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পরদিন শুক্রবার ভোরেই তাকে আটক করে পুলিশ। সেনা সরকারের গ্রেফতার-নির্যাতন আতঙ্কে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে দেশটির তরুন-যুব সমাজ।

বিক্ষোভ দূরের কথা ভয়ে দল বেঁধে আড্ডায় নামছে না। মিয়ানমারে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। এদিন সকালেই নভেম্বরের নির্বাচনে নির্বাচিতদের আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভোরেই ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী।

নির্বাচনে ‘কারচুপি’ হয়েছে অভিযোগ করে এ অভ্যুত্থান ঘটান রোহিঙ্গা গণহত্যায় অভিযুক্ত সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং। মূলত এরপর থেকেই চলছে গ্রেফতার অভিযান। ওই দিনই অভিযান চালিয়ে সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও নির্বাচিত এমপি ও দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়।

সর্বশেষ ইয়াঙ্গুন থেকে গ্রেফতার করা হলো সু চি’র দল এনএলডির শীর্ষস্থানীয় ৭৯ বছর বয়সী নেতা উইন তেইনকে। রয়টার্সকে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে নিজের গ্রেফতারের কথা নশ্চিত করেন সু চি’র ডান হাত বলে পরিচিত এই নেতা।

তেইন জানান, বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার নেপিদোতে নিয়েছে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। গ্রেফতারের আগে স্থানীয় ইংরেজি ভাষার এক সংবাদমাধ্যমে সেনাবাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণকে ‘নট ওয়াইজ তথা অবিবেচনাপ্রসূত’ পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করেন তেইন।

তবে কি অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা বলেননি তিনি। পুলিশ বলেছে, তাকে সংবিধানের ১২৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তার অন্তত ২০ বছরের জেল দেয়া হতে পারে। ঘন্টায় ঘন্টায় সেনা-পুলিশের সাঁজোয়া টহল চলছে দেশটির আনাচে-কানাচে।

সন্দেহ হলেই জেলে! ইতমধ্যে অভ্যুত্থানবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে যোগ দিয়েছে চিকিৎসক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তবে পুলিশের হাতে আটকের ভয়ে রাস্তায় নামছে না তারা। নামলেই গ্রেফতার!

এদিকে প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য ক্ষমতা নেয়ার কথা বললেও ক্ষমতা আরও দীর্ঘস্থায়ী করার আভাস দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আরও অন্তত ছয় মাস ক্ষমতায় থাকার এই ইঙ্গিত দিয়েছেন সেনা সরকারের প্রধান জেনারেল মিং অং হ্লাইং।

জাকার্তা পোস্ট জানায়, বুধবার রাজধানী নেপিদোতে দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, আগামী বছরের (২০২২) আগস্ট নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়ে আবারও উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে অং সান সু চির মুক্তির দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা বাহিনী।

তবে দেশটির শান্তি ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। কঠোর বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্টও।

বন্দিদের মুক্তি ও ক্ষমতা ছাড়তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার। বাইডেন বলেছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উচিত ক্ষমতা ছাড়া এবং অভ্যুত্থানে আটক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া। ক্ষমতা গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার প্রথম পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।