আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: জমে উঠেছে সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাচন। কর্মী-সমর্থকদের মুখে- (অমুক মার্কায় দিলে ভোট,শান্তি পাবে এলাকার লোক, যোগ্য দেখে পক্ষ নিন, অমুক মার্কায় ভোট দিন, ভোট চাই ভোটারের,দোয়া চাই সকলের) এমন স্লোগান এখন সর্বত্রই। সাতক্ষীরা পৌরসভার ভোটের মাঠ এমন মুখরোচক প্রচারে সরগরম। বিভিন্ন গানের সুরে ও ছন্দ মিলিয়ে মেরর-কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে মন মাতানো প্রচারে এখন তুঙ্গে সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচনী এলাকার ওয়ার্ডগুলো। চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে সাতক্ষীরা পৌরসভায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী ভোট অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়ী হতে এক প্রার্থী অপর প্রার্থী কে টেক্কা দিতে প্রচারে প্রতিযোগিতায় মেতেছেন। আবার প্রক্ষের ভোটারদের ভয়-ভীতি, হুমকি প্রদান এমন অভিযোগও আছে সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনী মাঠে কাউন্সিলর প্রার্থীদের। কোন কোন ওয়ার্ডে প্রভাবশালী কাউন্সিলর প্রার্থীর ভয় কিংবা নগদ টাকা পাওয়ার লোভে কাজ করছে কিছু কর্মী। বাড়ি বাড়ি ভোট ও চাচ্ছে তারা। কে হতে পারে সাতক্ষীরার পৌর পিতা। সর্বস্তরে এনিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা।
সাধারণ জনগণ শান্তি চায়, চায় উন্নয়ন। তারা চায় না জলবদ্ধতা, চায় না হাটু পানিতে চলতে ফিরতে, ড্রেনের দূষিত ময়লা- আবর্জনা রাস্তার উপর এবং বাড়ির উঠান ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে এটাও তারা চায় না। তারা চায়, নাগরিক সেবা সমূহের সঠিক অধিকার।
বিগত ২০১৫ সালের সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন মোট ৭৯ হাজার ৬ হাজার ৩৪ জন ভোটারের মধ্যে ৫১ হাজার ৬শ ২০ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচন বিএনপি জামায়াতের প্রার্থী (ধানের শীষ প্রতীক) তাজকিন আহমেদ চিশতি ১৬ হাজার ৪শ ৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পাটির (লাঙ্গল প্রতীক) প্রার্থী মো. আজহার হোসেন পেয়েছিলেন ১২ হাজার ৮শ ৭৩ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠু ১২ হাজার ৫শ ৩২ ভোট পেয়ে ৩য় অবস্থানে ছিলেন এবং আওয়ামীলীগের (নৌকা প্রতীক) নিয়ে মো. সাহাদাৎ হোসেন ৯ হাজার ৭২ ভোট পেয়েছিলেন।
২০২১ সালে সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার ৮৯ হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৩ হাজার ৪১৮ জন ও নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৮০৬ জন। মেয়র প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী শেখ নাসেরুল হক,ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়ার তাজকিন আহমেদ চিশতি, জামায়াত মনোনিত জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ নুরুল হুদা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নাছিম ফারুক খান মিঠু ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ডা. এস.এম মুসতাফীজ উর রউফ এবং কাউন্সিলর পদে ৫৮জন, সংরক্ষিত ১২ জন, সহ মোট ৭৫জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। আগামী ১৪ ফেব্র্রুুয়ারি সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।
সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, সাতক্ষীরা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন শেখ আশরাফুল হক। পরপর দুইবার তিনি মেয়ার নির্বাচিত হন। এবারে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ আশরাফুল হকের ছেলে শেখ নাসেরুল হক। নৌকার সমর্থকরা জানান,গত ১২ বছর দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, আবার মাঠে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের একচেটিয়া সুযোগটাও পেয়েছে সরকার দলীয় পক্ষের লোকজন। এরফলে প্রথমবাবের মত যে ১০ হাজার নতুন ভোটার এবার ভোট কেন্দ্র্রে যাবেন তাদের অধিকাংশের ঝোকটা থাকবে নৌকার পক্ষেই। সাবেক মেয়র শেখ আশরাফুল হক দলমতের উর্দ্ধে উঠে পৌর এলাকার আমজনতার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি প্রতিদিনই ভোর থেকে পৌর এলাকার সাধারণ জনগনের বাড়ি বাড়ি যেয়ে তাদের হাড়ির খবর নিতেই। তাছাড়া তার ছেলে শেখ নাসেরুল হক ব্যক্তিগতভাবে ক্লিন ইমেজের মানুষ। তারা আরো জানান, সরকারের শরিক জাতীয় পাটির ভোটের বড় অংশটাই নৌকায় যেতে পারে। সবমিলিয়ে নৌকার অবস্থান এবার অনেক শক্তই হবে মনে করেন অনেকে।
বিগত ২০১৫ সালে সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী তাসকিন আহমেদ চিশতি বিজয়ী হন। এবার তার সম্বল মানুষের সাথে সদালাপ। পৌরসভায় গেলেই মিষ্টিমুখের কথা ভোলেননি কেউ। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে বিগত নির্বাচনের চেয়ে এবার তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। জামায়াতের ভোট না পেলেও তিনি জয়ী হতে পারবে বলে তার ভোটাররা মনে করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিম ফারুক খান মিঠু গত নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র প্রার্থী তাজকিন আহমেদ চিশতির থেকে ৩ হাজার ৯শ ৩৮ ভোটের ব্যবধানে ৩য় অবস্থানে ছিলেন। ভোটের পর থেকে বসে ছিলেন না। এলাকায় এলাকায় গেছেন সবসময়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাহায্য সহায়তা করেছেন। যুব সমাজের মধ্যে তার নিজস্ব একটা বলয় রয়েছে। ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেও তিনি অনেকেরই আস্থাভাজন। তাছাড়া রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অপশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতির চেয়ারে বসে আছেন। ফলে তাকে কেউ ছোট করে দেখছেন না।
নিবন্ধন বাতিল করায় নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারছে না জামায়াত। সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী জগ প্রতীকে নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশ স্বাধীনের সময় থেকে সাতক্ষীরাতে তাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তারাও এ পৌরসভা নির্বানে তাদের অবস্থান জানান দিতে চায়। দলটির প্রার্থী শেখ নুরুল হুদা সাবেক শ্রমিক নেতা। শহরেই তার বসবাস। ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে দীর্ঘ দিন এমডির পদে ছিলেন। এক জন ভাল মানুষ হিসেবে অনেকে তাকে মনে করেন। সকাল থেকে গভীর রাত পোর্যন্ত তিনি ভোটাদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন। ভোট চাচ্ছেন তাদের মহিলা কমীরাও। ফলে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তারাও। বিগত নির্বাচনে পিছিয়ে থাকা বিএপির প্রার্থী তাসকিন আহম্মেদ চিশচি জামায়াতের ভোট ব্যাংককে কাজে লাগিয়ে অনেকটায় জয় নিশ্চি করে। কিন্তু এবার তার জয়ে জামায়াতই ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ডা. এসএম মুসতাফীজ উর রউফ। দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে তিনি লড়ছেন সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে। ধীর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। ভোটও বাড়ছে বলে মনে করেন অনেকে।
নৌকার সমর্থকরা মনে করছেন জামায়াত মাঠে থাকলে বিএনপির ভোট কমতে পারে আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মনে করছে জামায়াত যত ভোট কাটবে ততই তার মেয়ার হওয়ার পথ সহজ হবে। ভোট বিশ্লেষকরা মনে করেন সুষ্ঠু ভোট হলে মেয়ার নির্বাচনে জামায়াত ফ্যাক্টর হতে পারে। তবে সবকিছুর ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …