আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবাতা রিপোট:: চতুর্থ ধাপে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী সাতক্ষীরা পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী— প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার শেষদিন ছিল গতকাল শুক্রুবার (১২ ফেব্রুয়ারী)। এদিন গণসংযোগের পাশাপাশি মিছিল ও জনসভা করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের বেধে দেয়া সময় অনুযায়ী শুক্রুবার রাত ১২টার পর থেকে সব ধরনের নির্বাচনি প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকা। এ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে মক ভোটিং। প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তে প্রচারণায় মুখরিত ছিল গোটা সাতক্ষীরা পৌর এলাকা। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
অপরূপ সাজে সেজেছে সাতক্ষীরা শহর। পোষ্টার, ব্যানার, প্রচার, প্রচারনার উৎসব, প্রার্থীদের সহাবস্থান আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক, ভোটারদের অদম্য আগ্রহ, প্রার্থী এবং কর্মি সমর্থকদের মাঝে চমৎকার সমঝোতা। সর্বপরি ভোটারদের আদর, আপ্যায়ন, মুল্যায়ন সবই যেন একাকার। গতকাল ছিল প্রচার প্রচারনার শেষ দিন। শেষ মুহুর্তে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করার প্রানন্তকর চেষ্টা করেছেন। রাত পোহালেই উৎসবের, প্রতিযোগিতা আর প্রতিদ্বন্দিতার নির্বাচন। দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, শান্ত, নিরিবিলি সাতক্ষীরা। আর সাতক্ষীরা জেলার প্রাণনেন্দ্র সাতক্ষীরা শহর। পৌরবাসির নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করনের দায়িত্ব পৌরসভার। সামগ্রিক ভাবে নাগরিক সুবিধা, মেয়র এবং কাউন্সিলরদের দক্ষতা, যোগ্যতা, সততা, গ্রহন যোগ্যতার বিষয়টি যেমন ভোটারদের মোক্ষম ভাবনা, পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্বাস, দলীয় প্রার্থী, দলীয় সমর্থন ও ভোটারদের ভোটাধিকারের বিষয়টি ভাবনার। সাতক্ষীরা শহরের সড়ক এবং সংযোগ সড়কের পাশাপাশি মহলায় মহলায় পোস্টারের শোভা মাইকিং, গনসংযোগ সবই ছিল উৎসবের আর আহবানের ক্ষেত্র।
নির্বাচনকে অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনের ঘোষনায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিশেষ ধরনের উৎসবের সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরার আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়ার মত। যে কোন ধরনের বিশৃংখলা রোধে শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশি টহল, পুলিশি অবস্থান ভোটারদের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাউদ্দিন গতকাল পৌরসভার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। ভোটকেন্দ্র গুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করনে পুলিশ সুপারের নির্দেশনা, কর্মতৎপরতা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে বিশেষ আস্থা বিরাজ করছে। গতকাল শহরের প্রতিটি এলাকায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী মিছিল, পথসভা, শোডাউন, শোভাযাত্রা করেছে। প্রচার প্রচারনার শেষ দিনেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের সামান্যতম ঘাটতি ছিল না। নির্বাচনী তফশিল ঘোষনা, প্রতিক বরাদ্ধ সহ দীর্ঘ কয়েকদিনের প্রচার প্রচারনা এবং গণসংযোগ এর সময় গুলোতে প্রার্থী ও প্রার্থীদের কর্মি সমর্থকের মধ্যে কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেমন ঘটেনি অনুরূপ প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীদের আচরন বিধি লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেনি। সামগ্রিক ভাবে নির্বাচনী পরিবেশ অতি উৎসবমুখর। আগামীকাল বিশ্ব ভালবাসা দিবস। আর ভালবাসা দিবসে ভোটাররা কোন মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভালবাসা আর ভাললাগায় আবদ্ধ করেন সেটাই দেখার বিষয়। কেবল পৌরবাসি নয়, সাতক্ষীরা জেলার বিশ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কোন মেয়র প্রার্থী এবং কোন কোন কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয়ের হাসি হাসবেন।
এদিকে প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরা পৌরসভায় সবকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। ইতোমধ্যে ভোটের সব ধরণের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে শনিবার নির্বাচনের সরঞ্জাম বিতরণ করা হবে। স্ব স্ব কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা তাদের নির্বাচনের সরঞ্জাম গ্রহণ করে কেন্দ্রে চলে যাবেন। নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব ও বিপুল সংখ্যক আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকবে। ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
২০২১ সালে সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার ৮৯ হাজার ২২৪ জন ভোটাধিকার তাদের ভোট প্রদান করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৩ হাজার ৪১৮ জন ও নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৮০৬ জন। মেয়র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ নাসেরুল হক, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক পৌরমেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, জামায়াত মনোনিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও শেখ. নুরুল হুদ,স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠু এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ডা. এসএম মুসতাফীজ উর রউফ । এছাড়া সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মোট ৭৫ জন প্রার্থী তাদের মোনানয়নপত্র দাখিল করেন।
বিগত ২০১৫ সালের সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন মোট ৭৯ হাজার ৬ হাজার ৩৪ জন ভোটারের মধ্যে ৫১ হাজার ৬২০ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচন বিএনপির প্রার্থী (ধানের শীষ প্রতীক) তাজকিন আহমেদ চিশতি ১৬ হাজার ৪৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল প্রতীকে) মো. আজহার হোসেন পেয়েছিলেন ১২ হাজার ৮৭৩ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠু ১২ হাজার ৫৩২ ভোট পেয়ে ৩য় অবস্থানে ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) নিয়ে মো. সাহাদাৎ হোসেন ৯ হাজার ৭২ ভোট পেয়েছিলেন। মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত শেখ নাসেরুল হক, প্রতীক-নৌকা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মনোনীত তাজকিন আহমেদ চিশতির প্রতীক-ধানের শীষ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী ডা. এস.এম মুসতাফীজ উর-রউফের প্রতীক-হাতপাখা। স্বতন্ত্র প্রাথী নাছিম ফারুক খান মিঠুর প্রতীক-নারকেল গাছ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থ জামায়াত শেখ. নুরুল হুদার প্রতীক-জগ।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর (০১,০২ ও ০৩) নং ওয়ার্ডের প্রার্থী জ্যোৎস্না আরার প্রতীক-চশমা,তাজিনা আক্তারের প্রতীক-আনারস (০৪, ০৫ ও ০৬) নং ওয়ার্ডে অনিমা রাণী মন্ডলের প্রতীক-আনারস,ফরিদা আক্তার বানুর প্রতীক-জবা ফুল,মরিয়ম পারভীনের প্রতীক-টেলিফোন, মোছাঃ রওশন আরার প্রতীক-চশমা। (৭,৮ ও ৯) নং ওয়ার্ডে ফারহা দীবা খান সাথীর প্রতীক-বলপেন,গুলশান আরার প্রতীক-চশমা,মোছাঃ রাবেয়া পারভীনের, প্রতীক-জবা ফুল,মোছাঃ রুবিনা জামান খান চৌধুরীর প্রতীক-আনারস এবং সাহিদা আক্তারের প্রতীক-অটো রিক্সা।
সাধারণ সদস্য (কাউন্সিলরের মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডে,মো. আব্দুস সেলিম, প্রতীক-ডালিম,রাশিদ হাসান চৌধুরী (চৌধুরী বাবু), প্রতীক -টেবিল ল্যাম্প, মো. কায়ছারুজ্জামান হিমেল, প্রতীক -স্কু ড্রাইভার,শেখ জুলফিকার রহমান উজ্জল, প্রতীক –পাঞ্জাবি,এ.কে.এম আহসান আজীম, প্রতীক -ঢেড়শ,নুরুল ইসলাম, প্রতীক -উট পাখী,মো. আছাদুল ইসলাম, প্রতীক –গাজর,মো. আব্দুর রাজ্জাক, প্রতীক –ব্লাক বোর্ড,শেখ রশিদুর রহমান, প্রতীক –ব্র্রিজ,সেলিনা আক্তার, প্রতীক -পানির বোতল। কাউন্সিলর ২নং ওয়ার্ডে মো. আহসানুল কাদির, প্রতীক -টেবিল ল্যাম্প, মো. তালিম হোসেন, প্রতীক -উট পাখী,সৈয়দ মাহমুদ পাপা, প্রতীক ডালিম। কাউন্সিলর ৩নং ওয়ার্ডে কামরুল কবির চৌধুরী, প্রতীক ব্রিজ,মো. আইনুল ইসলাম নান্টা, প্রতীক –ব্লাক বোর্ড,মো. আনোয়ার হোসেন, প্রতীক -উট পাখী,মো. ইব্রাহীম, প্রতীক -পানির বোতল,মো. সুমন রহমান, প্রতীক–-পাঞ্জাবি, শেখ আব্দুস সেলিম, প্রতীক -টেবিল ল্যাম্প। কাউন্সিলর ৪নং ওয়ার্ডে কাজী ফিরোজ হাসান, প্রতীক -পাঞ্জাবি, শেখ আছাদ আহম্মদ, প্রতীক -উট পাখী, শেখ আফজাল হোসেন, প্রতীক -টেবিল ল্যাম্প,শেখ মাহমুদ হাসান, প্রতীক -ব্রিজ। কাউন্সিলর ৫নং ওয়ার্ডে মো. আবু সাঈদ, প্রতীক-ব্রিজ,মো. আব্দুর রাজ্জাক, প্রতীক -ফাইল কেবিনেট, মো. আব্দুল মালেক, প্রতীক-ব্লাকবোর্ড বোর্ড,মো. আমিরুল ইসলাম, প্রতীক -টেবিল ল্যাম্প,মো. ফারুক হোসেন, প্রতীক –পাঞ্জাবি,মো. মিজানুর রহমান, প্রতীক-ডালিম,মো:শহিদুল ইসলাম, প্রতীক -উট পাখী, মো. শাহিনুর রহমান, প্রতীক -গাজর, শেখ আনোয়ার হোসেন মিলন, প্রতীক -পানির বোতল। কাউন্সিলর ৬নং ওয়ার্ডে মো. কামরুজ্জামান, প্রতীক -পানির বোতল,মো. রফিকুল ইসলাম, প্রতীক -উট পাখী,মো. শহিদুল ইসলাম, প্রতীক -টেবিল ল্যাম্প,শেখ মারুফ আহম্মেদ, প্রতীক –ডালিম,শেখ মাহমুদ হোসেন, প্রতীক-ব্রিজ। কাউন্সিলর ৭নং ওয়ার্ডে শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালু, প্রতীক -পানির বোতল,মো. শাহাব উদ্দীন, প্রতীক -ঢেড়শ,এস.এম জাহানুর হুসাইন, প্রতীক -পাঞ্জাবি,মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রতীক -ডালিম,মো. জাহেদুল ইসলাম, প্রতীক টবিল ল্যাম্প,মো. রেজাউল করিম, প্রতীক -উট পাখী। কাউন্সিলর ৮নং ওয়ার্ডে মো. শফিকুল আলম বাবু, প্রতীক -পাঞ্জাবি,মো. আনারুল ইসলাম, প্রতীক -উট পাখী, মো. মনিরুজ্জামান মনির, প্রতীক -পানির বোতল,মো. শওকত আলী, প্রতীক –ডালিম। কাউন্সিলর ৯নং ওয়ার্ডে শেখ শফিক উদ-দৌলা সাগর, প্রতীক -উট পাখী,মো. জিল্লুর রহমান, প্রতীক -টেবিল ল্যাম্প,মো. আবিদুল হক, প্রতীক -পাঞ্জাবি,এম.এ রাজ্জাক, প্রতীক -ডালিম।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা পৌরসভার সর্বত্রই এখন চলছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। আগামী পাঁচ বছরের জন্য কে হবেন পৌর পিতা, এনিয়ে হাট-বাজার, দোকান পাট, শপিংমল ও চায়ের স্টলসহ সর্বত্রই চলছে আলোচনা। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন অফিসার মো. নাজমুল কবীর জানান, অবাধ,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরণের আয়োজন করা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ভোটারা যাতে নির্বিগ্নে ভোট কেন্দ্রে যেয়ে তার পচ্ছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন তার জন্য সবধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।