কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
আলজাজিরার প্রতিবেদন সম্পর্কে সেনাপ্রধান বলেন, যা কিছু আপনারা শুনেছেন সেগুলোর কোনো প্রমাণ নেই, এগুলো হয়তো বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা কাটপিস ও অন্যান্য জিনিস সন্নিবেশিত করে তারা এগুলো করতেই পারবে, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।
প্রতিবেদনে সেনাপ্রধানের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেনারেল আজিজ প্রশ্নকারী সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আপনাকে প্রশ্ন করি, আপনার বিরুদ্ধে মামলা আছে, সাজা আছে, কিন্তু আপনি যদি গতকাল সাজা থেকে অব্যাহতি পেয়ে থাকেন, আপনার বিরুদ্ধে আর যদি কোনো মামলা রানিং না থাকে, আপনাকে কি ফিউজিটিভ (পলাতক) বলা যাবে আজকে? আপনাকে কি বলা যাবে আপনি সাজাপ্রাপ্ত? কারণ যখন আপনি অব্যাহতি পেয়ে যান কোনো একটা চার্জ থেকে, পরের দিন থেকে আপনি একটা যে কোনো মুক্ত একটা নাগরিকের মতো।
‘আমার ভাইদের সম্পর্কে যে অপপ্রচারগুলো এসেছে সেটার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া আছে এবং খুব শিগগিরই আমার পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটা সংবাদ সম্মেলন করে সবকিছু জানানো হবে’-যোগ করেন সেনাপ্রধান আজিজ।
তিনি আরও বলেন, আমি সেনাপ্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি, আমার অবস্থান, আমার দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। কী করলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে, কী করলে আমার যে দায়িত্ববোধ আমাকে যে দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে সেটা খর্ব হতে পারে আমি সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ ওয়াফিবহাল।
জেনারেল আজিজ বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে মালয়েশিয়ায় যখন দেখা করেছি, তখন তার নামে কোনো মামলা ছিল না। যে একটা ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ মামলা ছিল সেটা থেকে অলরেডি অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। সে অব্যাহতি মার্চ মাসে হয়েছিল, আমি এপ্রিল মাসে গিয়েছিলাম।
‘এখানে আলজাজিরা যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দিয়েছে। কারণ সেদিন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে না কোনো সাজা ছিল, না তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল। তার আগে তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা ছিল তা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।’
ভ্রমণের সময় আলজাজিরা কীভাবে চিত্র ধারণ করল- সে বিষয়ে জানতে চাইলে সেনাপ্রধান বলেন, আমি সেনাপ্রধান হিসাবে মনে করি যখন অফিসিয়াল ক্যাপাসিটিতে কোথাও থাকব, তখন আমার নিরাপত্তা অফিসিয়ালি করা হয়ে থাকে। যেখানে যাই হোস্টকান্ট্রি করে থাকে এবং সেখানে আমার অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
‘কিন্তু যখন আমি কোথাও ব্যক্তিগত সফরে থাকি, হয়তো আসার সময় ট্রানজিটে কোনো আত্মীয় স্বজনের কাছে যাই, সে সময় অফিসিয়াল কোনো প্রটোকল ব্যবহার করা কখনও সমীচীন মনে করি না। আমি মনে করি সেটা অপচয় এবং সেটা আমার জন্য উচিৎ নয়। সেই ক্ষেত্রে সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি কিছু করে থাকে সেটা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য।’
আলজাজিরার প্রতিবেদনটি তৈরিতে বাংলাদেশের যারা যুক্ত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে জেনারেল আজিজ বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তেমন কিছু হয়তো করার থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে। আমি নিশ্চিত, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যারা আছে বা সংস্থা যারা আছে তারা হয়তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচার করে আলজাজিরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আলজাজিরার ওই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বাংলাদেশে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। আবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি টেলিভিশন চ্যানেলটিতে প্রচারিত প্রতিবেদন ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফরম থেকে সরানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়।
তবে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য কিনা এবং আর্জি অনুযায়ী আদালত চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে কিনা, সে বিষয়ে হাইকোর্টে মতামত দিচ্ছেন ছয় অ্যামিকাস কিউরি।