উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ (ভিডিও)

ক্রাইমবাতা রিপোট:   শ্যামনগর উপজেলার নৈকাটি এলাকায় ভাঙন কবলিত উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভাঙন কবলিত অংশে ডাম্পিংসহ প্লেসিংয়ের কাজে কার্যাদেশ অনুযায়ী বালু ভর্তি পর্যাপ্ত বস্তা ব্যবহার না করার অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়া ‘মার্কিং’ না করাসহ বস্তাগুলোতে বালু কম দেয়া ছ্ড়াাও ঠিকাদারের পরিবর্তে সাব-ঠিকাদার ও শ্রমিক সর্দার দিয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। তবে সংস্কারকৃত অংশের প্রাক্কলিত ব্যয়সহ কাজের বিবরণ নিয়ে কোন তথ্য দিতে অপারগতা জানালেও পাউবো’র দাবি কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, আম্পানের আঘাতে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত নদী কালিন্দী পাড়ের ৫ নং পোল্ডারের পরানপুর, নিদয়া ও নৈকাটিসহ বেশ কয়েকটি অংশের বাঁধ। শুরুতে কাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদার কাজ করতে অপারগতা দেখালে নুতনভাবে ঠিকাদার নিয়োগের পর ফেব্রুয়ারী মাসের শুরু থেকে সেখানে ‘স্লোব’ প্রটেকশন এর জন্য ডাম্পিংসহ বস্তা প্লেসিং এর কাজ শুরু হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ অতিশয় ভাঙন কবলিত নৈকাটি অংশে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারে গুনগত মান রক্ষা করা হচ্ছে না। সিন্ডিকেট করে যেনতেনভাবে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করছে সাব ঠিকাদার নিযুক্ত শ্রমিক সর্দার ও তার লোকজন। আর তদারকির দায়িত্বে থাকা পাউবো’র পক্ষ থেকেও সংস্কার কাজ নিয়ে আপত্তি তোলা হচ্ছে না। ফলে মারাত্বক ভাঙনমুখে থাকা সীমান্তবর্তী ঐ অংশের বাঁেধর সংস্কার কাজে গুনগত মান রক্ষা না করার অভিযোগ তুলে বাঁধের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমত সংশয় ও শংকার কথা জানিয়েছে তারা।
সরেজমিন পরিদর্শনে শুক্রবার যেয়ে দেখা যায়, শ্রমিক সর্দার দাকোপের সফিকুল ইসলাম গাজীর নেতৃত্বে ১৩/১৪ জন শ্রমিক নৈকাটি অংশের ভাঙনে বস্তা প্লেসিং এর কাজ করছে। দীর্ঘক্ষণ সেখানে পাউবোর কোন প্রতিনিধির উপস্থিতি না মিললেও সকালের দিকে গননার কাজে দ্ইু ব্যক্তি ছিল জানিয়ে শ্রমিক সর্দার বলেন, ঠিকাদারের কোন লোক নেই। সাব-ঠিকাদারের নিকট থেকে তারা শুধু বস্তা প্লেসিং এর কাজ পেয়েছেন। রাতের বেলা ওই এলাকা থেকে দুই হাজার বস্তা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া নিয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করলেও কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা রাতে ঘুমাচ্ছিলেন বলে জানান। এদিকে পরিদর্শনকালে লক্ষ্য করা যায় বালুভর্তি বস্তা প্লেসিং এর জন্য নৌকায় উঠানো হলেও সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হওয়ায় বস্তা ভর্তি নৌকা মাঝ নদীতে নিয়ে নোঙর করে রাখা হয়। এক পর্যায়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর নৌকা ভাঙনমুখে নিয়ে বস্তাগুলো নদীতে ফেলা হয়।
পিয়ার মুন্সি নামের এক ব্যক্তি জানান নৈকাটি অংশের ৮০ মিটার জায়গায় প্লেসিং এর কাজে আট হাজার বেশী বস্তা ব্যবহারের কথা ছিল কার্যাদেশ অনুযায়ী। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে পাউবো’র সাথে মিলে ঠিকাদারের লোকজন সেখানে মাত্র ছয় হাজার বস্তা ব্যবহার করছে। তিনি আরও জানান বস্তা কম ব্যবহারের কৌশল হিসেবে শুরু থেকে গননা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে তাতে মার্কিং-ই করা হয়নি।
আজগর আলীসহ নৈকাটি গ্রামের কয়েকজনের দাবি, বস্তা গননার কাজে স্থানীয় কাউকে রাখা হয়নি গননায় ফাঁকি দেয়ার কৌশল হিসেবে। তাদের অভিযোগ, পাশের নদীর ভাঙন খাড়াভাবে একেবারে বাঁধের গোড়ায় পৌছে গেছে। এমতাবস্তায় কাজের গুনগত মান রক্ষা না করায় নিকট ভবিষ্যতে সংলগ্ন অংশ আবারও ভাঙনমুখে পড়ার শংকায় রয়েছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদারের পরিবর্তে সাব-ঠিকাদার সংস্কার কাজ করলেও কার্য্যক্ষেত্রে কেবলমাত্র শ্রমিক সরদার ও তার লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। সরাসরি ঠিকাদারের পরিবর্তে একাধিক হাত হয়ে শ্রমিক সর্দার কাজ করায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুরু থেকে গননা না করে বস্তা প্লেসিংয়ের মাধ্যমে তারা বড় ধরনের অনিয়ম করেছে বলেও দাবি তাদের। স্থানীয়রা কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় শেষ মুহূর্তে মাত্র ৯৪৬টি বস্তায় মার্কিং করা হয় বলেও জানান তারা।
এদিকে স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেছে নৈকাটি এলাকার ভাঙন মেরামতের জন্য নিয়ে আসা বস্তা থেকে গত চার দিন পুর্বে প্রায় দুই হাজার বস্তা গভীর রাতে অন্যত্র সরিয়ে নেয় পাউবো’র লোকজন। মার্কিং না করার সুযোগে বেঁচে যাওয়া ঐসব বস্তা স্থানীয় প্রফুল্ল জোয়ারদারের বাড়ি থেকে সরিয়ে নেয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হলে শেষ মুহূর্তে মাত্র ৯৪৬টি বস্তা গণনাকালে মার্কিং করা হয়।
নৈকাটির ভাঙন কবলিত অংশে ডাম্পিংসহ প্লেসিংকৃত বস্তায় মার্কিং না করাসহ অনেক ক্ষেত্রে বস্তায় কম বালু ব্যবহারের অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। একইসাখে ভাঙনপ্রবণ ওই এলাকার বাঁধ মেরামতে যথাযথ গুনগত মান রক্ষায় পাউবোসহ ঠিকাদারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য মাননীয় পানি সম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তুরিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছে তারা।
নৈকাটি এলাকার বাঁধ সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের দায়িত্বে থাকা সেকশন অফিসার তম্ময় হালদার জানান, পাউবো কতৃপক্ষ সরাসরি ঠিকাদারের থেকে কাজ আদায় করছে। পাশের একটি অংশে কাজের বস্তা নৈকাটি এলাকায় থেকে যাওয়ায় সেগুলো সরানো হয়। দিনে কাজের চাপ থাকায় রাতে সেসব বস্তা নির্দিষ্ট এলাকায় পৌছে দেয়া হয়। এদিকে ‘বস্তা মার্কিং করা মুখ্য বিষয় নয়-দাবি করে পাউবোর ওই কর্তা জানান, বস্তাগুলো যথাযথভাবে ডাম্পিং ও প্লেসিং হয়েছে কিনা তা জরুরী। বস্তা গননার কাজে স্থানীয়দের না রাখা হলেও দুই জন প্রতিনিধি তাদের বস্তা গণনা শেষে অনুমতি দিলে শ্রমিকরা সেসব বস্তা প্লেসিং করেছে বলেও দাবি তার।

https://youtu.be/aHLYIB190MU

kopotakkho24

ভাল লাগলে আমাদের চ্যানেল subscribes  করবেন

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।