প্রমাণ ছাড়া জিয়ার খেতাব কেড়ে নেয়া হলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে : বুলবুল

জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেছেন এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক ও বিএফউজে আওয়ামী লীগ অংশের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে পরে কোনো অন্যায় করবেন না তাও ভাবা যাবে না। তবে তার খেতাব কেড়ে নেয়ার কথা বলার আগে সরকারের মন্ত্রীদের উচিত ছিলো এটা প্রমাণ করা যে বঙ্গবন্ধুর খুনের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। এটা মুখে বললেই হবে না প্রমাণ করতে হবে। আর প্রমাণ ছাড়া খেতাব কেড়ে নেয়ার কথা বললে শুধু বিভ্রান্তিই তৈরি হবে। এ জন্য কমিশন গঠন করে তদন্ত হওয়া দরকার ছিলো বলেও মনে করেন তিনি।

রোববার রাজধানীর ইআরএফ মিলনায়তনে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ওপেন ডায়ালগ বাংলাদেশ (ওডিবি) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র এ সাংবাদিক এসব কথা বলেন।

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উর্দুকে বাঙালির উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো। পাকিস্তানি শাষক শ্রেণি বাংলাকে হিন্দুদের আর উর্দুকে মুসলমানদের ভাষা বলে একটি বিভাজন তৈরি করে। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট ভাষার বিরুদ্ধে নয়। তাই বাংলা ভাষার আন্দোলন উর্দুর বিরোধী ছিলো না। এটা ছিলো মূল্যবোধের আন্দোলন। অধিকারের আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় প্রধান আলোচক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, বাঙালি এবং বাংলা ভাষায় যারা বিশ্বাস করে তারা বিশ্বাস করে ভাষা শহিদদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, এই ভূখন্ডে আত্মত্যাগী মানুষ যেমন রয়েছে তেমনি বিশ্বাস ঘাতকও রয়েছে। এটা প্রমাণ হয়েছে ১৯৭১ সালে। ১৯৭৫ সালেও পথভ্রষ্ট বাঙালি প্রমাণ করেছে বিশ্বাস ঘাতকতার বিজ আমাদের রক্তে রয়েছে। তবে এই সংখ্যা খুবই কম। বাঙালি ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত ছিলো বলেই ভাষা আন্দোলন হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কেউ সম্মুখে যুদ্ধ করেছেন, কেউ খাবার দিয়ে, কেউ থাকার জায়গা দিয়ে, কোনো মা-বোন সেবা দিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধকে সামগ্রিকভাবে ভাবতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলেও দাবি জানান তিনি।

বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আব্দুল হাই বলেন, বাংলা ভাষার সর্বজন স্বীকৃত একটি রীতি থাকতে হবে। একই ভাষার বিভিন্ন বানানরীতি বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভেকেট গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, হাইকোর্টে যে জাজমেন্ট লেখা হয় তা ইংরেজিতে। এটা সাধারণ মানুষ বোঝে না। ইংরেজি অশুদ্ধ হলেও তা আমরা ব্যবহার করে আসছি। পৃথিবীর বৃহত্তম শুদ্ধতম ভাষার মধ্যে বাংলা দ্বিতীয়। মনের ভাব প্রকাশ করতে হলে বাংলার চেয়ে ভালো ভাষা আর হতে পারে না।

বক্তারা বলেন, ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে তাকে উপার্জনের মাধ্যম করতে হবে। এটা করা না গেলে বিদেশি ভাষার প্রতি মোহ কাটবে না। বিদেশি ভাষার প্রতি আমরা বেশি আকৃষ্ট কারণ সেগুলো শিখে কর্মক্ষেত্রে ভালো উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।

ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইমক্যাব) সভাপতি বাসুদেব ধর-এর সভাপতিত্বে ও কার্যনির্বাহী সদস্য আমিনুল হক ভূইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইমক্যাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ, কোষাধ্যক্ষ মাছুম বিল্লাহ, কার্যানির্বাহী সদস্য আবু আলী প্রমুখ।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।