সরকারী ছত্রছায়ায় সাংবাদিক বোরহান উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানব বন্ধন

ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা:  নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায়  মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন  সাতক্ষীরা অনলাইন প্রেসক্লাব। মুজাক্কিরের খুনিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দেন তারা। নইলে বৃহত্তর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেয়া হয় মানববন্ধন থেকে। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ , বিডিনিউজ২৪ এর জেলা প্রতিনিধি শরিফুল্লাহ কায়ছার সুমন, চ্যানেল ২৪ এর জেলা প্রতিনিধি আমেনা বিলকিচ ময়না, সাপ্তাহিক সূযের আলোর সম্পাদক  আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরি,শহিদুল ইসলাম,আলিমুর খান বাবলু,মীর খায়রুল আলম সহ কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশ নেয়।

আজ সোমবার (২৩ ফেব্রয়ারি)সকাল ১১ টায়  শহরের নিউমাকেট( আলাউদ্দীন চত্ত্বর)  এর সামনে প্রধান সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বক্তরা বলেন গত শুক্রবার বিকেলে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চাপরাশির হাটে বসুরহাট পৌর মেয়র কাদের মির্জা ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহের সময় গুলিবিদ্ধ হন মুজাক্কির। গুরুতর অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার মারা যান তিনি। এদিকে, মুজাক্কির হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে সারাদেশে কর্মরত গণমাধ্যম-কর্মীরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। দাবি জানান, প্রকৃত খুনিরা যাতে ছাড় না পায়।

গণমাধ্যম-কর্মীরা জানান, আমরা যারা এই পেশার সঙ্গে জড়িত তাদের কোন নিরাপত্তা নেই।  এই সরকারের আমল সাগর রুনি থেকে শুরু করে আজ পযন্ত কোন সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি।

১৯৯৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত অনেক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর একটিরও বিচার আমরা পাইনি। একটি হত্যাকাণ্ড ঘটলে আমরা কিছুদিন প্রতিবাদ করি। এরপর  আবার একটি ঘটনা ঘটলে সেই ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়।

এখন পাঠকদের সামনে গত ১৫ বছরে সাংবাদিক হত্যার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরছি-

১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল :
১৯৯৬ সালের ৮ জুন সাতক্ষীরার পত্রদূত সম্পাদক শ.ম আলাউদ্দীন খুন হন।
১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল খুন হন।
২০০০ সালের ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠের যশোর প্রতিনিধি শামছুর রহমান কেবল তার কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল :
২০০৪ সালের  ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হন দৈনিক সংবাদের খুলনা ব্যুরো প্রধান ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক সাহা।
২০০৪ সালের ২ মার্চ কেরানীগঞ্জে দি নিউএজের সাংবাদিক আবদুল লতিফ পাপ্পু নিহত হন।

২০০৪ সালের ২৭ জুন নিজের অফিসে নিহত হন খুলনার দৈনিক জন্মভূমির সম্পাদক হুমায়ূন কবির বালু।

২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুর্জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক দীপাংকর চক্রবর্তী নিজ বাসায় নিহত হন।

২০০৪ সালে খুন হন দৈনিক সংগ্রামের খুলনা প্রতিনিধি বেলাল হোসেন।

২০০৫ সালের ২৯ মে কুমিল্লার দৈনিক মুক্তকণ্ঠের রিপোর্টার গোলাম মাহমুদ নিহত হন।

ঠিকাদারী চক্রের বিরুদ্ধে লাগাতার রিপোর্ট করে ২০০৫ সালের ৫ নভেম্বর দৈনিক সমকালের ফরিদপুর ব্যুরো প্রতিনিধি গৌতম দাস খুন হন।

২০০৯ থেকে ২০১২ সাল :
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় খুন হন এনটিভির ভিডিও এডিটর আতিকুল ইসলাম আতিক।

২০০৯ সালের জুলাই মাসে ঢাকার পাক্ষিক মুক্তমনের স্টাফ রিপোর্টার নূরুল ইসলাম ওরফে রানা খুন হন।

২০০৯ সালের আগস্ট মাসে গাজীপুরে সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক সময়-এর নির্বাহী সম্পাদক এমএম আহসান হাবিব বারি খুন হন।

২০০৯ সালের ডিসেম্বরে রূপগঞ্জে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সংবাদদাতা ও রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আবুল হাসান আসিফ খুন হন।

২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল খুন হন বিশিষ্ট সাংবাদিক সাপ্তাহিক ২০০০-এর সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানী।

২০১০ সালের ৯ মে গুপ্তহত্যার শিকার হন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাম্যান শফিকুল ইসলাম টুটুল।

২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে খুন হন বরিশালের মূলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ী।

২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি পল্টনে  নিজ বাসায় খুন হন প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক জনতার সহ-সম্পাদক ফরহাদ খাঁ ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুন।

২০১১ সালের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পোর্টকলোনি এলাকায় দৈনিক আজকের প্রত্যাশা, সাপ্তাহিক সংবাদচিত্র ও আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার সাংবাদিক মাহবুব টুটুলকে হত্যা করা হয়।

২০১১ সালে একইদিন  উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাসার বাসিন্দা সাপ্তাহিক বজ্রকণ্ঠের সাংবাদিক আলতাফ হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

২০১১ সালের  ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ কুকরাইল এলাকায় গলা কেটে হত্যা করা হয় দৈনিক ভোরের ডাকের গোবিন্দগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ফরিদুল ইসলাম রঞ্জুকে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিজ বাসায় খুন হলেন এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক  সাগর সরওয়ার।

সাগর-রুনি হত্যার ৯ বছর, ৭৮ বারেও জমা পড়েনি প্রতিবেদন

২০১২ সালের বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি নিজ ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘটনাস্থলে এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা ফলাফল এখনো ৯ বছরেও শূন্য রয়েছে।

২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তের জন্য প্রথম ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম তদন্তভার নেন। এরপের ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ওই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৭ বছরের ২১ মার্চ তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার ৮ আসামির দুই জন বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল ও কথিত বন্ধু তানভীর রহমান জামিনে আছেন। অপর ছয় আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম, এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিল ও আবু সাঈদ কারাগারে আটক আছেন। আসামিদের মধ্যে তানভীর জামিনে আছেন। এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার ৮ জনের কেউই এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল হক ও পলাশ রুদ্র পাল ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেয়। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান এ পাঁচ জনকে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র হত্যার ঘটনায় র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এ পর্যন্ত ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

kopotakkho24   ভাল লাগলে আমাদের চ্যানেল subscribes  করবেন

Check Also

তালায় ইউপি পরিষদ কক্ষে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

তালা প্রতিনিধি তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও আতাউর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী রমজান আলী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।