মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক : দুনিয়াতে কোনো মানুষ বিখ্যাত হয়ে জন্মায় না। স্বীয় চেষ্টা-সাধনা, ত্যাগ-কুরবানি, অসীম ধৈর্য ও কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মানবসমাজে পরিচিত হয়ে ওঠেন, খ্যাতি অর্জন করেন। দীন কায়েমের পথে কাযী শামসুর রহমান এমনি নিবেদিতপ্রাণ এক ব্যক্তিত্ব। যার চেহারায় কখনো ছিল না মলিনতা বা বিষাদের ছায়া। উত্থান-পতন আর ঘাত-প্রতিঘাতে তিনি ছিলেন পাহাড়ের মতো অনড়-অটল। জীবনের একটি মুহূর্তও অলসভাবে কাটিয়ে দেননি তিনি।
সাংগঠনিক ও সামাজিক যে কোনো কাজেই তিনি ছিলেন সদা সচেতন ও সিরিয়াস। দায়িত্ব পালনে সবসময় থাকতেন সজাগ ও সচেতন। যা বুঝতেন, তা প্রচারে ও প্রতিষ্ঠায় একান্তভাবে লেগে থাকতেন।
দাওয়াতী বক্তৃতায় আল কুরআন হাতে রাখতেন আর তা থেকে কিছু মৌলিক বিষয় বার বার উল্লেখ করতেন। যেমনÑ “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকতে হবে, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে, এরাই সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)। “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে।” (সূরা আলে ইমরান : ১১০)। “হে মুমিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা আল-বাকারা : ২০৮)। “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ^াস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে, তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে।” (সূরা আল-বাকারা : ৮৫)। “ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন।” (সূরা আলে ইমরান : ১৯)।
বই বিতরণ এবং পত্রপত্রিকার মাধ্যমে দাওয়াতী কাজে তাঁর ভূমিকা ছিলো উৎসাহব্যঞ্জক। সাথে একাধিক ব্যাগ রাখতেন। তাফসির, হাদীস, ইসলামী সাহিত্য, পত্রপত্রিকা, সহযোগী সদস্য ফরম ইত্যাদিসংবলিত একটা ব্যাগ এবং পরিধানের উপযোগী জামা-কাপড় সব সময় সঙ্গে রাখতেন। রাখতেন মোমবাতি, দিয়াশালাই, কাগজ-কলম, জরুরি ওষুধ সবকিছুই। ১৯৮৬ সালে প্রথম এমপি হওয়ার পূর্বে তিনি বেশির ভাগ সময়ই বাইসাইকেলে সফর করতেন। অনেক সময় তিনি এক সপ্তাহকাল বাড়ি থেকে বের হয়ে বিভিন্ন থানায় সাংগঠনিক সফরে ব্যস্ত থাকতেন। একজন যোগ্য ব্যক্তির খোঁজে বেশ সময় দিতেন। সংগঠনের উন্নতি-অগ্রগতির চিন্তাই তাঁর জীবনের প্রধান মিশনে পরিণত হয়। সাতক্ষীরা জেলায় আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি নির্বাচন করলেন যোগ্য সংগঠক ও ত্যাগীব্যক্তিত্ব জনাব ইজ্জত উল্লাহ ভাইকে। ডা. নুরুল আমীনকে খুলনা থেকে আশাশুনিতে, মৌলভী আব্দুল জলীল ভাইকে সাতক্ষীরায় আনা ছিল তাঁর আন্দোলনের বাগিচা সুশোভিত করার অনবদ্য প্রয়াস।
মরহুম কাযী শামসুর রহমান ছিলেন অত্যন্ত গতিশীল মানুষ। অনেক বেশি কাজ করতেন তিনি। অনেকে তাঁর গতির সাথে তাল মেলাতে পারতেন না। কাজে অলসতা আদৌ বরদাশত করতে পারতেন না। এক অজুতে কয়েক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। তাহাজ্জুদ নামাজও পড়তেন তিনি। যত রাত করে ঘুমান না কেন, শেষ রাতের নামাজ-জিকির-দোয়া ছিল তাঁর নিয়মিত অভ্যাস। সাহাবীদের চরিত্রের সাথে তাঁর চরিত্রের ছিলো অপূর্ব মিল। এ যেন ‘দিনের বেলায় ঘোড় সাওয়ার ও রাতের জায়নামাজের দরবেশ।’ দীন কায়েমে এমন নিবেদিতপ্রাণ মর্দে মুজাহিদ আজ এদেশে বেশি বেশি দরকার।
মরহুম কাযী শামসুর রহমান তিন-তিনবার এমপি ছিলেন। কোনো শত্রুও তাঁর অর্থনৈতিক ব্যাপারে কথা বলার সাহস পায়নি কোনোদিন। দেশ-বিদেশ থেকে দাওয়াত এসেছে কাযী সাহেবকে দেখার জন্য। সৌদি আরব, আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান, ভারতসহ বহু দেশে তিনি সফর করেছেন। যাবতীয় ব্যয় ভার তাঁদের। রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে তিনি হজও করেছেন।
মানুষ দোষ-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। মরহুম কাযী ভাইও দোষ-ত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিলেন না। তিনি চলে গেছেন অনেক দূরে। রেখে গেছেন অনেক স্মৃতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর নেক কাজগুলো কবুল করুন এবং মানবিক ঘাটতিগুলো ক্ষমা করে দিন। আর সাতক্ষীরায় ইসলামী আন্দোলনের অগ্রগতিতে কাযী ভাই-এর শূন্যতা দূর করার মতো যোগ্য লোকদের শামিল করুন, আমীন।
“হে প্রশান্ত চিত্ত! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট ফিরে এসো সন্তুষ্ট হয়ে ও সন্তোষজনকভাবে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।”- আল কুরআন।
লেখক : কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …