কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি শারীরিক প্রতিবন্ধী মর্জিনা বেগম (৩৫) অভাবের তাড়নায় তার দুই সন্তানকে মাত্র ২৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রাম।
মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী ও সাত সন্তানকে নিয়ে শিমুলতলা গ্রামের ছোট্ট একটি ঘরে বাস করেন প্রতিবন্ধী মর্জিনা বেগম। উপার্জনক্ষম কেউ নেই বলে প্রতিনিয়ত টানাপড়েনে চলে তার সংসার। দুবেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হয় মর্জিনাকে। বাবার বাড়ি ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় খেয়ে না খেয়েই কাটে তাদের দিন।
মর্জিনার সাত সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ও চার মেয়ে। অভাবের কারণে কোনো সন্তানকেই স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি। এমনকি অপুষ্টিতে ভুগে মৃত্যু হয়েছে তার এক সন্তানের। বাকিরাও ভুগছে অপুষ্টিতে। উপায় না দেখে জন্মের পরপরই বিক্রি করে দেন দুই নবজাতককে। কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ও খলিলগঞ্জ এলাকায় দুই সন্তানকে বিক্রি করে মর্জিনা পান কেবল ২৩ হাজার টাকা।
এ প্রসঙ্গে মর্জিনা বেগম বলেন, ‘অভাবের কারণে বাচ্চা দুইটাকে পোষানি দিছং। মুই পঙ্গু, মোর স্বামীও পঙ্গু। কামাই করবার পাই না তাই কোলের দুইটা ছাওয়াক পোষানি দিছং। যে টাহা পাইচং তাও শ্যাষ। এলা বাকি বাচ্চাগুলাক কী খায়্যা বাচাং?’
প্রতিবেশী বানেছা বলেন, ‘অভাবের কারণে তারা (মর্জিনা দম্পতি) দুইটা বাচ্চা পোষানি দিছে। কী করবে কন, ভাত কাপড় দিবের পায় না। মর্জিনার হাত-পা অবশ। উয়ার ভাতার তো পাগলা জোগলা মানুষ। কামাই কইরবার পায় না, খায় কী?’ একই এলাকার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘খলিলের (মর্জিনার স্বামী) জমি জমা নাই, সরকারের দেওয়া গুচ্ছ গ্রামে থাকে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজ করবার পায় না। আশপাশের লোকজন যা দেয় তা-ই খায়। মাঝে মধ্যে চেয়ারম্যান-মেম্বার কিছু দেয়। এ ছাড়া খলিলের শ্বশুর মাসে কিছু ধান চাউল দিয়ে সহযোগিতা করে। বাচ্চাগো ভরণপোষণ করবের না পাইরা দুডা বাচ্চাক বেঁচে খাইছে।’
বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মঞ্জু হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঘটনা শোনার পর তিনি সংযোগটি কেটে দেন। পরে এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলার চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের খলিল দুটো কন্যা সন্তানকে বিক্রি করেছে। এটা দুঃখজনক ব্যাপার। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন ও অভাবী মানুষের জন্য কাজ করছে। ওই ইউনিয়নের মেম্বার-চেয়ারম্যানদের উচিত ছিল তাদের পাশে দাঁড়ানোর। তারা পাশে না থাকলে আমাকে জানা তো, আমি নিজে দ্রুত ব্যবস্থা নিতাম।’
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে জান্নাত রুমি বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিতে লোক পাঠিয়েছি। বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, ‘সরেজমিন পরিদর্শন করে এ বিষয়ে মন্তব্য করব।’