আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবাতা রিপোট: হ্যালো, আমি বিকাশ থেকে বলছি। করোনায় ছাত্র ছাত্রীদের ১০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেয়া হচ্ছে। বিকাশ একাউন্টে এ ঠাকা ঠুকবে। আপনি কি অনলাইনে আবেদন করেছেন। না করলে আমাদের কাছে তথ্য দিলে ফ্রি আবেদন করে দিব। আপনার আইডি নম্বর, আপনার সোনা মনির জন্ম নিবন্ধন বলেন। এখান থেকে একটি নম্বর যাচ্ছে কাউকে বলবেন না, নম্বরটা বলেন। এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ৪ দিনে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে করোনায় শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করছে চক্রটি।প্রতারকেরা গ্রাহকের ভোটার আইডি কার্ডের নাম, নম্বর, পিতার নাম জানতে চায়। বলা হয় আপনার নাম্বারে একটি ম্যাসেজ যাবে, পিন নাম্বারটি বলুন। এরপর একটি ম্যাসেজ আসলো তো আপনার একাউন্টে থাকা টাকা ক্যাশ আউট হয়ে গেল। আর এজন্য তারা প্রথমেই বিকাশ এজন্টদের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিকাশ জমার ব্যালেন্স জেনে নেয় প্রথমে। আবার অনেক সময় কোন টাকা না পাঠিয়েই একধরণের ম্যাসেজ পাঠানো হচ্ছে গ্রাহকের মোবাইলে। যাতে একটি নিদির্ষ্টি পরিমাণ টাকা ক্যাশ ইন হওয়ার বার্তা থাকে। এরপর মোবাইলে ফোন করে বিকাশ এজেন্ট পরিচয়ে বলা হয় যে, ভুলক্রমে আপনার বিকাশ নম্বরে এই টাকাটি চলে গেছে। দয়া করে এটি ফেরত দিলে অনেক উপকৃত হতাম। কথার জালে ব্যালেন্স না দেখে টাকা সেন্ড করে দিলেই গ্রাহক প্রতারকের খপ্পরে পরে যাচ্ছে অনেকে। এভাবেই নানা কৌশলে বিকাশ গ্রাহকদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকেরা।
করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা সরকারি অনুদান দেয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। আর এই গুজবে বিশ্বাস করে রবিবার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঢল নেমেছিল সাতক্ষীরা শহরে। ফটোকপি ও অনলাইন সার্ভিসের দোকানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রত্যয়ন নিতে শহরের স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় যায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এমনকি শহরে অবস্থান না করা শিক্ষার্থীরাও আবেদনের জন্য ফিরে এসেছে। অতিরিক্ত মানুষের চাপে শহরে লেগে যায় যানজট। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়
কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানশিক্ষকরা জানান, গত বছরের মতো এ বছরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ অনুদানের জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। দুরারোগ্য ব্যাধি ও দৈব দুর্ঘটনার শিকার শিক্ষক-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীরা এই অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। দুস্থ, প্রতিবন্ধী, গরিব ও অনগ্রসর ছাত্র-ছাত্রীরা অগ্রাধিকার পাবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া সংস্কার, আসবাবপত্র, খেলার সামগ্রী এবং পাঠাগার উন্নয়নের জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারবে। আগামী ৭ মার্চ আবেদনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে এটি করোনা প্রণোদনা বা স্টুডেন্ট ভাতা না।
শিক্ষার্থীরা জানায়, করোনাকালীন স্টুডেন্ট ভাতা হিসেবে ১০ হাজার টাকা প্রদান করার কথা শুনে তারা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে অনলাইনে আবেদনের জন্য ভিড় করেছেন। কিন্তু নির্ধারিত ওয়েবসাইটে ঢোকা যাচ্ছে না। এ ছাড়া কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে প্রত্যয়ন দিলেও কোনো প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন জানায়, ১০ হাজার টাকা ভাতা দেয়ার কথা শুনে মাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে।
সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদ্রাসার ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রতনার মা জানান, ১০ হাজার টাকা ভাতা দেয়ার কথা শুনে মাদ্রাসায় এসে বিনামূল্যে প্রত্যয়ন পত্র নিলেও কম্পিউটারে দোকানে সেই আবেদন করতে ২শ টাকা খরচ হয়েছে। তবে বেশির ভাগ কেউ আবেদন করতে পারিনি।
মহামারি করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে এমন ভুয়া তথ্য প্রচার করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই গুজবে বিশ্বাস করে গত শনিবার,রবিবার ও আজ সোমবার দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঢল নামে।
এদিকে, অনুদান নিয়ে প্রতারণা এড়াতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত রোববার (৭ মার্চ) সতর্কবার্তা জারি করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনুদান প্রদানের সংশোধিত নীতিমালা ২০২০ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। আবেদন যাচাই-বাছাই করে সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনুদানে দেওয়া হবে। এই বিষয়ে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি সর্তকতামূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সরকারের দেওয়া বিশেষ অনুদান প্রদানের নামে অনলাইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারক চক্র ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, বিকাশ নম্বর ও গোপন পিন ইত্যাদি চাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পরিচয় দিয়ে ফোনগুলো করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ অনুদান বিষয়ে কাউকে ফোন দেওয়া হয়নি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র, বিকাশ নম্বর ও গোপন পিন সংক্রান্ত কোনো তথ্যও চাওয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনুদান প্রদানের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে সেখানে টাকার পরিমাণ উল্লেখ ছিল না। তাছাড়া নীতিমালা ও শর্ত অনুসারে সবাই আবেদনের যোগ্যও না।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তাদের কাছে করোনার কোনো অনুদানের কাছে চিঠি আসেনি। একটি মহল গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে স্বার্থ হাসিল করতে চায় বলে তার মনে হয়।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …