স্টাফ রিপোর্টার :
বাজার-ঘাটে যত্রতত্র চোখে মিলছে পলিথিন। এমনকি প্রশাসনের নাকের ডগায় পরিবহন বিপনন হচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিষিদ্ধ এবং পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকারী পলিথিন উৎপাদন ও বিপনন ইদানিং চলছে জোরেশোরে। সরেজমিনে যশোর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা এবং শিল্পশহর নওয়াপাড়া ও আশেপাশের বাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায় হরহামেশা। পরিবেশ আইন লংঘন করে কিছু অসাধু ব্যবসয়ী ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পলিথিন উৎপাদন করে বাজারজাত করছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এতে পরিবেশ আবারও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন তারা। কিছু ব্যবসায়ী বিপনন সুবিধার জন্য বেছে নিয়েছেন এই পলিথিন এবং সাধারণ জনগণও তা সাদরে গ্রহণ করছেন। এতে আবারও ক্ষতিকারক অপচনশীল পলিথিন পরিবেশের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যশোর সদর এবং বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রতিটি বাজারের দোকানদাররা পলিথিন ব্যবহার করছেন। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও যশোর সদরের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জানান, পলিথিন প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টের জন্য হুমকিস্বরূপ। পরিবেশ সচেতন অভয়নগরের ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্রের সম্পাদক ও অধ্যক্ষ শিল্পী সব্যসাচী বিশ্বাস জানান, পরিবেশ নষ্টকারী এই নিষিদ্ধ পলিথিন অভয়নগরের বিভিন্ন বাজারে যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে। অথচ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা এ সকল বাজার ও ব্যবসায়ীদের কাছাকাছিই অবস্থান করেন। তবুও তারা এই পলিথিন ব্যবহার রোধে কোনো প্রকার ভূমিকা নিচ্ছেন না কেনো বুঝে আসছে না।
সচেতন মহল ধারণা করছেন, প্রশাসন ব্যবাসায়ীদের কাছ থেকে নিজেরা ফায়দা লুটে নিয়ে তাদেরকে সুযোগ করে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে শিল্প শহর নওয়াপাড়ার কয়েকজন ব্যবসায়ী দোকানদারকে পলিথিন বাজারজাত বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রশাসনকে আমরা কোনো মাসোয়ারা দিই না। তবে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পলিথিন নিয়ে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে অভিযান না থাকার কারণে আমরা পলিথিন বিক্রি করি। পরিবেশের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ব্যবসায়ীরা বলেন, পরিবেশ দূষণ হয় ঠিকই তবে সরকার যদি পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, তবেই সম্ভব। তিনি আরও বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন, বিপনন এবং সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া একান্ত জরুরী।
পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী মাস্টার বাবলুর রহমান জানান, এককালে বুড়িগঙ্গা ¯্রােতাসিনী নদীর তীর ঘেষে গড়ে উঠেছিল রাজধানী ঢাকা। সেই বুড়িগঙ্গা আজ নিষিদ্ধ পলিথিনের শিকার হয়ে মরতে বসেছে। অপরদিকে ভৈরব নদের তীরে গড়ে উঠেছিল ঐতিহ্যবাহী জেলা যশোহরসহ রূপদিয়া, সিঙিয়া, নওয়াপাড়া, ফুলতলা, দৌলতপুর, খুলনাসহ বিভিন্ন হাট-বাজার ও প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পলিথিনের কবলে নদী আজ কঙ্কালসার খালে পরিণত হতে চলেছে।
অভিযোগ আছে লোকজন তাদের পলিথিন, আবর্জনা, ময়লা, মলমুত্র, ট্যানারীর বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে নদীতে নিক্ষেপ করে। তাছাড়া শিল্প শহর নওয়াপাড়া ও খুলনার ফুলতলা বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদীতে চামড়া মিল, জুট মিল, সার-সিমেন্ট মিল, অটো রাইস মিলসহ বিভিন্ন মিল কলকারখানা থেকে নির্গত পচা জল ও বর্জ্য-ধোয়া প্রতিনিয়ত দূষিত করছে পরিবেশ। বিগত দিনে এ নদীর পানিতে হাতমুখ ধোয়া ও গোসলসহ রান্নার কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতো। চরম দূষণের কারণে পানি ব্যবহারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি শিল্পশহর নওয়াপাড়া এলাকায় ভৈরব নদী খনন কাজ চলছে। পুনরায় যাতে নদী দূষণ না হয় সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সকল মহলকে সজাগ দৃষ্টি রাখার দাবি জানিয়েছেন যশোরের সচেতন মহল, অভয়নগরের সিংগাড়ী আঞ্চলিক গণগ্রন্থাগার, ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, ভৈরব চিত্রা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, পরিবেশ বাদী ও সংস্কৃতিক কর্মীরা।