বিশেষ প্রতিনিধি: কালিগঞ্জে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ভুল ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে অসুস্থ করার পর পরিকল্পিত ভাবে বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মনিরুল ইসলাম (২৮) নামে এক গ্রামডাক্তারের বিরুদ্ধে। তবে এঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ওই গ্রামডাক্তারকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত গৃহবধূর পিতা উপজেলার ইন্দ্রনগর গ্রামের মৃত আলম গাজীর ছেলে নুরুজ্জামান (৫০) জানান, উপজেলার নলতা ইউনিয়নের কাজলা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী শেখের ছেলে গ্রামডাক্তার মনিরুল ইসলাম স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার মেয়ে আমেনা খাতুনকে (২২) প্রায় দু’বছর পূর্বে বিয়ে করে। তাদের সংসারে ৩ মাস বয়সের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে স্বামী গৃহে অবস্থান করলেও পুত্র সন্তান হওয়ার পর সন্তানকে বুকের দুধ দিতে না পারাকে কেন্দ্র করে স্বামীর সাথে মনোমালিন্য ও শারীরিক নির্যাতনের কারণে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেয় আমেনা খাতুন। এক পর্যায়ে প্রথম স্ত্রী জান্নাতুল বেগম (২৫) ও শ্যালক কাজলা গ্রামের মৃত নওশের মেম্বরের ছেলে আরিজুল ইসলাম (৪৫) এর কু-পরামর্শে দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনাকে মেরে ফেলার কৌশল হিসেবে বুকের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ওষুধ ও ইনজেকশন প্রয়োগ শুরু করে গ্রামডাক্তার মনিরুল। ভুল ওষুধ প্রয়োগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমেনা খাতুনকে প্রথমে নলতা এলাকার শানপুকুরে একটি ভাড়াবাড়িতে নিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে সাতক্ষীরায় ‘একতা ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত নার্সদের কক্ষ থেকে সরিয়ে দিয়ে বিষাক্ত ইনজেকশন মিশিয়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে খিচুনি শুরু হয় এবং নাক মুখ দিয়ে গ্যাজা বের হতে থাকে। এসময় ওই ক্লিনিকের চিকিৎসকের পরামর্শে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ মার্চ দুপুর ২ টার দিকে ওই গৃহবধূ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরপর গ্রামডাক্তার মনিরুল ও তার সহযোগীরা ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। খবর পেয়ে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে গ্রামডাক্তার মনিরুলকে আটক করে কালিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ওই দিন রাতে এঘটনায় কালিগঞ্জ থানায় অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। মেয়ের পিতা নুরুজ্জামান বলেন, আমি খুব গরীব মানুষ। মোটেও লেখাপড়া জানি না। সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ কাগজে কী লিখে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছে তা আমি জানি না। আমি মেয়েকে হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং আমার নিরপরাধ মেয়েকে যারা হত্যা করেছে সেই জামাই মনিরুল ও তার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি চাই।
কালিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক সেলিম রেজা জানান, এঘটনায় গ্রামডাক্তার মনিরুল ইসলামকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গৃহবধূর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তরা করা হয়েছে। পরবর্তীতে নিহতের পিতা এটাকে হত্যাকান্ড হিসেবে উল্লেখ করে অভিযোগ দেয়ার উদ্যোগ নেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই এব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।