মোঃ রাসেল হোসেন, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ
বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, তার আদর্শ ও অবদান সাধারণ মানুষ তথা ছাত্র যুবকের কাছে পৌঁছে দিতে এক অন্যরকম পথযাত্রা করেছেন যশোরের অহিদুল ইসলাম। খালি পায়ে ১০১ কিঃ মিঃ হেঁটে যশোর থেকে পদযাত্রা করে পৌঁছে গেছেন বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে।
বঙ্গবন্ধুর জম্মদিনে রওনা দিয়ে রোববার বিকালে জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
প্রতি কিলেমিটার যাত্রাশেষে তিনি একজনকে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ফুল, বঙ্গবন্ধুর বাণী সংবলিত মাথার ব্যান্ডকাপড় ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিতরণ করেছেন।
অহিদুল ইসলাম যশোর শহরের খড়কি পীরবাড়ি এলাকার মৃত শহিদুল ইসলাম ও সকিনা খাতুনের ছেলে। তিনি হামিদপুর আল হেরা ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। এ ছাড়া তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসিএসের সদস্য। অহিদুল ইসলাম অবশ্য নিম্নবিত্ত সংসারের সংগ্রামি সন্তানদের উদাহরণ। কারণ তাকে চলতে হয় টিউশনি করে। সেই টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনার সঙ্গে কাজ করছে হতদরিদ্র শিশুদের নিয়ে।
কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিতাহারা সংসারে কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। তবু স্বপ্ন দেখি দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। কাজ করছেন সমাজের পিছিয়ে সব বয়সী মানুষের জন্য। সামাজিক কাজের পাশাপাশি শিশুদের ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।
কয়েক বছর ধরে চলে তার এই মানবতার কাজ, যা করে এলাকায় নজরে এসেছেন তিনি। তার এই চিন্তাধারাকে কেউ কেউ সাধুবাদ জানালেও বিভিন্ন সময়ে শুনতে হয় কটাক্ষ অপমান।
তার পরও থেমে নেই তিনি। বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে আসতে হবে তরুণদের। এমনি উপলব্ধি করে তরুণ সমাজের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার অবদান পৌঁছে দিতে তিনি পথযাত্রা শুরু করেন।
তাই ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দিনে গত ১৭ মার্চ দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে থেকে শুরু করেন যাত্রা। যাত্রাপথে প্রয়োজনীয় পোশাক, শুকনা খাবারসহ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ফুল, বঙ্গবন্ধুর বাণী সংবলিত মাথার ব্যান্ডকাপড় ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা মিলে ১৫ থেকে ২০ কেজি বোঝা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন পথযাত্রায়। প্রায় চার দিনের ওই যাত্রা রোববার শেষ হয়েছে। এই সময়ে তিনি অতিক্রম করেন ১০১ কিলোমিটার পথ।
তিনি আরও বলেন, আমার বয়স যখন দেড় থেকে দুই বছর, তখন আমার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। প্রথমে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। আর স্বপ্ন বুনতে থাকি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে। স্বপ্নপূরণের চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে থাকি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসিএসের মাধ্যমে। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে যশোর থেকে পথচলা। কিন্তু পথচলা এত সহজ হয়নি। কে
হেঁটে হেঁটে না হয় পথ মাড়ালেন। কিন্তু খাবার বা রাতযাপনের জন্যও তো অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থ অহিদুলের ছিল না। তাই টিউশনে জমানো কিছু টাকা ও বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা নিয়ে তিনি প্রেসক্লাব যশোরের সামনে থেকে রওনা দেন। তার এই যাত্রায় খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৬০০ টাকা। যশোর থেকে নড়াইল। নড়াইল থেকে খুলনা। এভাবে একে একে ২০টি উপজেলা হেঁটে পা রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়।
গড়ে প্রতিদিন হেঁটেছি ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পথ। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্বাস্থ্য যতটা না খারাপ হয়েছে, তার চেয়ে খারাপ দশা পকেটের। দিনের বেলায় পথযাত্রা করতাম। আর রাতে বিভিন্ন মার্কেট-মসজিদ বা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে শুয়ে থাকতাম। হাঁটতে হাঁটতে একসময় পা ব্যথা হলেও মনের জোরে এগিয়ে গেছি।কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর সাম্যের বানী তিনি ৬৪ গিয়ে জেলায় পৌছে দিতে চান।
এবিষয়ে প্রেসক্লাব বসুন্দিয়ার সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন,যাত্রাপথে ছেলেটি আমার সাথে দেখা করেছে।ওর এই সাহসী উদ্যোগ দেখে আমি বিমোহিত। ওর জন্য শুভকামনা।