শাবান মাস হলো সিয়াম বা রমজানের প্রস্তুতির মাস। এ মাসে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ স. অধিক পরিমাণে সালাত আদায় করতেন এবং সিয়াম পালন করতেন; পবিত্র রমজান মাসের প্রস্তুতি হিসেবে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে প্রতি বছর হাজির হয় পবিত্র মাহে রমজান। তাইতো বিশ্ব মানবতার মাঝে এ মাসে আত্মশুদ্ধির চেতনা জাগ্রত হয়। শুধু আত্মশুদ্ধিই নয়; বরং এ মাসে সিয়াম সাধনার ফলে রোজাদারের দৈহিক সুস্থতাও ফিরে আসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান ও হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ফার্মেসি সূত্রে জানা যায়, এ মাসে প্রায় সব ধরণের রোগ প্রশমিত থাকে। দেহ ও মনের প্রশান্তির মাস তাই রমজান।
রমজান বা রমাদান আরবি শব্দ। হিজরি বর্ষের নবম মাসের আরবি নাম রমাদান। উর্দু, ফারসি, হিন্দি ও বাংলা উচ্চারণে এটি হয় রমজান। রমাদান বা রমজান শব্দের অভিধানগত অর্থ হলো প্রচ- গরম, উত্তপ্ত বালু বা মরুভূমি, মাটির তাপে পায়ে ফোসকা পড়ে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, ঝলসে যাওয়া, কাবাব বানানো, ঘাম ঝরানো, চর্বি গলানো, জ্বর, তাপ ইত্যাদি। রমজানে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় রোজাদারের পেটে আগুন জ্বলে; পাপতাপ পুড়ে ছাই হয়ে রোজাদার নিষ্পাপ হয়ে যায়; তাই এ মাসের নাম রমজান। (লিসানুল আরব)।
রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি : হজরত উম্মে সালমা র. বর্ণনা করেন, নবী করিম স. বলেন, ‘রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস, রমজান আমার উম্মতের মাস।’ হজরত আয়িশা সিদ্দিকা র. বর্ণনা করেন, ‘রাসুল স. বলেছেন, যারা রজব মাসে ভূমি কর্ষণ করল না, শাবান মাসে বীজ বপন করল না, তারা রমজান মাসে (ইবাদত ও পুণ্যের) ফসল তুলতে পারবে না।’ নবীজি স. সাধারণত রজব মাসে ১০টি নফল রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি নফল রোজা রাখতেন; যাতে রমজানে ৩০টি রোজা অনায়াসে রাখা যায়। রজব ও শাবান মাসে নবী করিম স. বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করতেন। নবী-পতœী উম্মুল মুমিনীনগণ বলেন, রজব মাস এলে আমরা বুঝতে পারতাম নবীজি স. ইবাদত-বন্দেগির আধিক্য দেখে।
রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। শবে কদরে কোরআন নাজিলের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। রাসুল স. রমজান মাসে পুরো কুরআন শরিফ হজরত জিবরাইল আ.-কে একবার শোনাতেন এবং জিবরাইল আ.-ও নবী করিম স.-কে পূর্ণ কুরআন একবার শোনাতেন। বড় বড় সাহাবিরাও রমজানে প্রতি সপ্তাহে সমগ্র কুরআন একবার তিলাওয়াত করতেন।
বিশ্ব স্রষ্টা আল্লাহর ওপর ইমান আনায়নের পরই ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় আমল হলো যথাক্রমে সালাত ও সাওম। কুরআনের সঙ্গে সাওম ও সালাতের সম্পর্ক সুগভীর। রাসুল স. বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন আর আমি তোমাদের জন্য তারাবির সালাত সুন্নত করেছি; অতএব যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে সাওম পালন করবে ও রাতে তারাবির সালাত আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এমন পবিত্র হবে; যেমন নবজাতক মাতৃগর্ভ থেকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়। (নাসায়ি, প্রথম খ-, ২৩৯ পৃষ্ঠা)।
তারাবির ২০ রাকাত সালাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। পুরুষের তারাবির সালাত মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। আর মাহিলাদের জন্য বাড়িতে আদায় সুন্নাত।
তাই রাসুলুল্লাহ স. একদা শাবান মাসের শেষ দিনে সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ্য করে মাহে রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রতি একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এ মাসে সহ¯্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লাহর সান্নিধ্য কামনা করে, সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। আর এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ (মিশকাত)
লেখক : বিলাল মাহিনী, প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সম্পাদক : সিংগাড়ী আঞ্চলিক গণগ্রন্থাগার ও ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, অভয়নগর, যশোর।
আজীবন সদস্য : নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট।
bhmahini@gmail.com
০১৭৩৫-১৭৬২৮৬