সাতক্ষীরায় ত্রাণের দাবীতে মানব বন্ধন: ৫ লক্ষ শ্রমিক বেকার

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলার নিম্ন আয়ের প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ পড়েছে বিপাকে। মানুষ বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় আয় কমে গেছে। বিশেষ করে সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় পরিবহনের চালক ও শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। এতে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ত্রাণের দাবিতে সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা-যশোর মহাসড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিন করেছে। দ্রুত সরকারিভাবে তাদের সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সরকারী হিসাব মতে ৩৬ লাখ পরিবারে মধ্যে ৩৫ লাখ পরিবার স্বল্প আয়ের যারা বিভিন্ন পেশায় জড়িত থাকলেও বর্তমান করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাকি এক লাখ পরিবার কৃষক যারা সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ। তাদেরকে ১০ কোটি টাকার প্রণাদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে জেলাতে ২৩ লক্ষ মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে বিভিন্ন সড়কে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ রিকশা, ভ্যান, হ্যালোবাইক, অটোরিকশা, ঘোড়ার গাড়ি ও মালবাহী গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ওই আয় দিয়ে তাদের প্রতিদনের বাজার করতে হয়। করোনা আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারায় তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। ফলে পরিবার নিয়ে এসব নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তারা বাঁচার তাগিদে গাড়ি নিয়ে বের হলে পুলিশের আতঙ্কে থাকেন। তার পরও তারা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন পেটের তাগিদে। জেলা কৃষি বিভাগের মতে যাদেও জায়গা জমি নেই এমন ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা জেলাতে প্রায় ৫ লক্ষ। করোনা কালিন সময়ে তারাই বেশি দুর্ভোগে থাকে।
ভ্যানচালক সালাম মিয়া বলেন, পেটের দায়ে ভ্যান নিয়ে বসে আছি। কোনো যাত্রী নেই। আগে ছয় থেকে সাতশ’ টাকা রোজগার করতাম। এখন করোনা আতঙ্কে কেউ ঘর থেকে বের হয় না। আমার মতো আরও অনেকে ভ্যানচালক বসে আছে সারাদিন ধরে। ১০০ টাকা রোজগার করতে পারিনি। কীভাবে আমাদের সংসার চলবে। এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। সরকার যদি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে কিছুটা রক্ষা পাব
প্রচন্ড দাবদাহে সাতক্ষীরা বাস টার্মিনালে জটলা পাকিয়ে বসে আছেন বেশ কয়েকজন। প্রত্যেকের চোখে–মুখে দুশ্চিন্তা আর হতাশা। সামাজিক দূরত্ব না থাকলেও তাঁদের প্রত্যেকের মুখে ছিল মাস্ক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা সবাই পরিবহন শ্রমিক। কেউ বাস চালান, কেউ চালকের সহকারী (হেলপার)। লকডাউনে সহায়তা করার জন্য পরিবহনসংশ্লিষ্ট নেতারা পরিবহন শ্রমিকদের তালিকা করছেন। খবর শুনে সেই তালিকায় নাম লেখাতে তাঁদের সবাই জড়ো হয়েছেন সেখানে।
কথা হয় এক বাস চালকের সাথে। তিনি জানান স্ত্রী, শিশুসন্তান ও বৃদ্ধ মা বাবাকে নিয়ে তাঁর সংসার। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এই বাসচালকও বেকার হয়ে পড়েছেন। কষ্ট আর হতাশার স্বরে জুয়েল বলেন, চার মাসের মেয়ের জন্য প্রতিদিন দুধ কিনতে হয়। ঘরে স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবা মা। তাঁদের মুখে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। ভীষণ কষ্টে কাটছে দিন। জেলা বাস মালিক সমিতি জানায়, জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় দুই হাজার বাস চলাচল করে। এসব পরিবহনে কমপক্ষে পাঁচ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এসব পরিবহন বন্ধ থাকায় চরম দৈন্যদশার মধ্যে পড়েছেন তাঁরা।
সংশ্লিরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে এরই মধ্যে প্রতিদিন কয়েকশ লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে পরিবহন খাতে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই লোকসান গোটা দেশের অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এই খাতের নিয়োজিত অল্প আয়ের শ্রমিকরা। পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টর বলছেন, সড়ক ও নৌপরিবহন মিলিয়ে পরিবহন খাতে নিয়োজিত প্রায় এক কোটি শ্রমিক। তাদের ৯০ ভাগই দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সড়ক ও নৌপথে যান চলাচল বন্ধ থাকায় এসব শ্রমিকদের এখন দিন কাটাতে হচ্ছে বসে। ফলে বন্ধ হয়েছে উপার্জন, কাউকে কাউকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এসব শ্রমিকদের সহযোগিতায় কোনো সমন্বিত উদ্যোগও নেই।
করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় গত ২১ এপ্রিল ১০ কোটি টাকার প্রণাদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্যাকেজের আওতায় পরিবহন খাত অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারেননি তারা। প্রণোদনা পেলে সেটি তাদের আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হতো বলে মনে করছেন তারা। পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অটোরিকশা, ভ্যান ও অবৈধ নছিমন, করিমন, বটবটি চলাচল করলেও বন্ধ রয়েছে শুধু বাস মিনিবাস। এখনও তাদের কেউ কোনো সরকারি বে সরকারী ত্রাণ পাননি। তাদের কোনো কাজ নেই কর্ম নেই। অনেকে তাদের নিজেদের ও পরিবারের ওষুধ পর্যন্ত কিনতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র দুস্থ ও অসচ্ছল মানুষকে সহায়তা প্রদানের জন্য সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন।
এদিকে ত্রাণের দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়েছে। জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিকদের আয়োজনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন সাতক্ষীরা-যশোর মহাসড়কে উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শেখ রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির সাবেক সভাপতি শেখ মাখছুর রহমান, মীর মনিরুজ্জামান মনি, শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মহব্বত, শ্রমিক নেতা জুলফিকার হোসেন সবুজ, সঞ্জয় দাশ, সনাতন শীল প্রমুখ।
আবু সাইদ বিশ^াস: সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: ০১৭১২৩৩৩২৯৯

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।