তৃতীয় দফা লকডাউনে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো

স্টাফ রিপোর্টার : সরকার ঘোষিত তৃতীয় দফা  লকডাউন চলছে। তবে রাজধানীর সড়কে ভিন্ন চিত্র। কোথাও লকডাউনের নমুনা নেই। যেভাবে রাস্তায় যানবাহন চলছে, তাতে সাধারণ মানুষ মনে করছে গণপরিবহনও চলাচল শুরু হয়েছে। পথচারিরা বলছে, সবকিছুই যখন চলছে গণপরিবহন বন্ধ রেখে লাভ কী? তা না হলে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের চলাচলে ভোগান্তি।

লকডাউন ঘোষণার পর গত কয়েকদিনের চেয়ে গতকাল রাস্তায় মানুষের চলাফেরা ছিল অনেক বেশি। গণপরিবহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহনই (প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশা, কাভার্ডভ্যান) প্রায় অবাধে চলাচল করছে। বিভিন্ন সড়কে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিলেন তারা।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলাচলে পুলিশের ইস্যুকৃত মুভমেন্ট পাসটি গুরত্বপূর্ণ হলেও, তা যেন গুরুত্বহীন। রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কোথাও কোথাও যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে চেকপোস্ট তৈরি করলেও জিজ্ঞাসাবাদ বা মুভমেন্ট পাস দেখতে অনীহা। দু-এক জায়গায় গাড়ি থামালেও আগের মতো মুভমেন্ট পাস নিয়ে কঠোর হতে দেখা যায়নি।

রাজধানীর পুরান ঢাকা, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ি এলাকার বেশিরভাগ মার্কেটের প্রধান গেট বন্ধ রেখে চোরা গেট খোলা রাখা হয়েছে। দোকানদাররা দোকানের শাটার নামিয়ে রেখে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। সড়কে সকাল ও বিকালে অনেক বেশি পরিমাণে রিকশা, অটোরিকশা, প্রাইভেট কারসহ ছোট যান চলাচল করতে দেখা গেলেও, সন্ধ্যার পর পরিমাণ কম ছিল। শহরের প্রবেশপথে চেকপোস্ট ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও কড়াকড়ি চোখে পড়েনি।

গতকাল নগরীর ট্রাফিক সিগন্যালগলোতে যানবাহনের ব্যাপক চাপ দেখা গেছে। সকালে ফকিরাপুল ট্রাফিক সিগন্যালে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে চলাচলরত যানবাহনগুলোকে। এসময় ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও মোটরসাইকেলসহ সবধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, গুলশান, রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজার, প্রগতি সরণি এলাকায়। প্রগতি সরণিতে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে বাংলামোটর এলাকায়। সেখানেও যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। আশপাশের ফুটপাতসহ অন্যান্য স্থানগুলোতে মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে। কোথাও পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়নি।

এদিকে গ্রাহকদের জরুরি আর্থিক সেবা দেয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন পূর্বক সীমিত আকারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ গতকাল বৃহস্পতিবারই থেকে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশে কার্যরত সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের হিসাবের মেয়াদপূর্তিতে স্থায়ী আমানত নগদায়ন, ঋণের কিস্তি জমাদান, ইত্যাদি জরুরি আর্থিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২২ এপ্রিল হতে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সর্বোচ্চ দুটি শাখা, একটি ঢাকায় অপরটি ঢাকার বাইরে ও প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহ সকাল ১০ টা থেকে বিকাল দুইটা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।

রাস্তায় বের হওয়া লোকজন জানান, তাদের পক্ষে ঘরে বসে থাকা আর সম্ভব নয়। যারা বের হয়েছেন তারা সবাই নিজেকে স্বল্প আয়ের মানুষ দাবি করছেন। তারা বলছেন, এত দিন ঘরে বসে থাকলে তো না খেয়েই মরে যেতে হবে। তাই বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় বের হয়েছেন কাজের সন্ধানে।

উত্তর বাড্ডা মোড়ে খেলনার দোকান নিয়ে বসা আজম আলী বলেন, এতো দিন তো বাসায়ই ছিলাম। কেউ তো আমাদের সাহায্য করেনি। কেউ তো আমাদের কাছে ত্রাণ নিয়ে আসেনি। আমরা অল্প আয়ের মানুষ, বেশি দিন ঘরে বসে খাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া সামনে ঈদ আসছে, এখন কিছু টাকা আয় না করলে পরিবার নিয়ে কীভাবে ঈদ উদযাপন করব। তবে অর্থসংকটে বাধ্য হয়ে অনেকে ঘর থেকে বের হলেও ঘোরাঘুরি ও আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া লোকজনের সংখ্যাও কম নয়।

রামপুরা ব্রিজ থেকে সিএনজি অটোরিকশা করে আজিমপুর বোনের বাসায় যাবেন সাঞ্জিদা খাতুন। বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দিন বোনের বাসায় যাওয়া হয়নি। এখন তো অনেক মানুষ রাস্তায় যাতায়াত করে আর পুলিশও তেমন কিছু বলে না। তাই এ ফাঁকে বোনের বাসা থেকে ঘুরে আসব বলে বের হয়েছি।  আমি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঘর থেকে বের হয়েছি।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।