শিবিরের সাবেক সভাপতি এবং হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ড. আহমেদ আবদুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। তিনি ২০ দলীয় জোটভুক্ত খেলাফত মজলিসেরও মহাসচিব। শনিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মেয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ নিয়ে ঢাকায় হেফাজতের ১৯ জন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হলেন। কাদের ছাত্র জীবনে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ওই সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন। তবে আশির দশকে শিবিরে ভাঙনের পর তিনি কওমি ঘরনার দলের সঙ্গে মিশে যান।
আহমদ আবদুল কাদের ২০১৩ সালে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের নাশকতা ও সম্প্রতি মোদিবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি।
ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আহমদ আবদুল কাদের আমাদের কাছে গ্রেপ্তার আছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। রোববার তাকে আদালতে তোলা হবে।’
এর আগে দুপুরে নিজ কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানিয়েছিলেন, নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ সারা দেশে বেশকিছু মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১২টি মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় মোট ৭৩টি মামলা দায়ের হয়। মোট ৬৪টি মামলা তদন্তাধীন আছে। এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের ১৫ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আহমেদ আবদুল কাদের শিক্ষককতা পেশার সঙ্গেও জড়িত। আহমদ আবদুল কাদের ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোট থেকে হবিগঞ্জ-৪ আসনে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এর আগেও এই আসনে কয়েক বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
খেলাফত মজলিসের আমীর মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, এক বিবৃতিতে আব্দুল কাদেরের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে তার দলের মহাসচিবের মুক্তি দাবি করেছেন।
বুধবার বিকালে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব ও খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির মাওলানা খুরশিদ আলম কাশেমীকে এবং ঢাকা মহানগরের নেতা ও খেলাফত মজলিশের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মুফতি শারাফত হোসাইনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
ওই দিনে ফোর কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর আগে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে রোববার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া মঙ্গলবার দলটির ঢাকার নেতা কোরবান আলী কাসেমীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব কোরবান হেফাজতের ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
হেফাজতের যে নেতাদেরকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সবাইকে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থানকে ঘিরে তাণ্ডবের পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের দিন থেকে হেফাজত কর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া গ্রেপ্তার অভিযানে হেফাজতের যে নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আহমাদ আবদুল কাদেরই সবচেয়ে বড়। সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর অবস্থানই কেবল নায়েবে আমিরের ওপরে।