সাইফুল্লাহ তারেক, শিল্পাঞ্চল খুলনা সংবাদদাতা : বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করতেন বেদে পরিবারের হাসিলা। দিনভর খাটুনির পর প্রতিদিন ৩শ’, থেকে ৪ শ’ টাকা আয় হতো। এ টাকায় সংসার চলতো তাদের। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে আফিলগেট বেদে পল্লিতে বসেই স্বামী সন্তান নিয়ে অর্ধহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে।
হাসিলা বলেন, এক গ্রাম থেকে আর এক গ্রামে গিয়ে মানুষের সিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা দূর করা ও বাত ব্যথার তেলমালিশ করাসহ বিভিন্ন কাজ করতাম, যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার মোটামুটি ভালোই চলতো। করোনার কারণে বাইরে বের হতে পারিনা।
একই সুরে কথা বললেন আফিলগেট বেদের সরদার টেপু মিয়া। তিনি বলেন, জীবিকার টানে কাজে গেলেও এখানকার ২৭ টি পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের দিন কাটছে অলসভাবে। তিনিও জানালেন তার কষ্টের কথা। এখন তিনবেলা ঠিকমত খাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
নগরীর খানজাহান আলী থানা এলাকার আফিলগেট মহাসড়কের পাশে মশিয়ালি গ্রামে ঢুকতে রেল লাইনের পাশে অস্থায়ী বাসিন্দা বেদে পরিবার। করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছে তাদের। অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মধ্যদিয়ে দিন কাটাচ্ছেন আফিলগেটে বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের। করোনা ভাইরাসের কারণে একদিকে যেমন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা অন্যদিকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনও ব্যাহত হচ্ছে। তবুও জীবিকার প্রয়োজনে কাজে নামলেও তাদের ফিরতে হচ্ছে অনেকটা শুন্য হাতে। যে কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। অনেকেই আবার তিন-বেলা ঠিকমত খেতে পারছেন না। তবে কষ্টে দিন কাটানো এ সব মানুষ আশা করেন সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে তাদের। করোনার কারণে পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে কিভাবে দিন কাটাবেন এমন চিন্তার ছাপ তাদের চোখ-মুখে।
বেদে নারী কাকলি বলেন, তার ২ মেয়ে ২ ছেলেসহ ৬ সদস্যের পরিবার। আগে প্রতিদিন আয়-রোজগার হতো। ভালোই দিন কাটছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই স্বাভাবিক জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। কষ্টে দিন কাটছে। করোনার কারণে গ্রামে যেতে পারি না। যদি সাহায্য পাই তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো। আমাদের সহযোগিতা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি। সহযোগিতা পেলে হয়ত আমাদের এমন কষ্ট থাকবে না।
বেদে পরিবারের পুরুষ সদস্য শাকিল বলেন, আমাদের নারীরা ঘরের বাইরে কাজ করে আমরা সবাই ঘরে ছেলেমেয়েদের দেখা শোনা করি। অনেক পুরুষদের মধ্যে কেউ আবার ফেরি, পুকুরে হারানো জিনিসপত্র খুঁজে দেওয়াসহ দিন মজুরের কাজ করি। এখন করোনার কারণে কাজ নেই, খুব বিপদের মধ্যে রয়েছি আমরা। অনিশ্চয়তায় বেদে পরিবারের জীবন-জীবিকাবেদেরা জানায়, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে দৈনিক কাজ করে টাকা উপার্জন করা এসব পরিবারের পুরুষরা এখন বেকার, শিশুদের চাহিদাও পূরণ করতে পারছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মহামারিকালীন সময়ে দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও ফুলতলা উপজেলার বিভিন্নস্থানে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কর্মহীন দরিদ্র পরিবার এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মত বেদেরাও বর্তমানে সংকটে আছেন তাই আমরা অতিদ্রুত তাদেরকেও ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনবো।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …