ইউনিয়ন প্রতিনিধি, অভয়নগর (যশোর) :
যশোরের অভয়নগরে চলছে মোবাইল লুডুতে জুয়া। হাতে একটা স্মাটফোন,গাছতলা কিংবা বাগান। ভর দুপুর কিংবা গভীর রাত। যেন আমলে আনছেনা যুবসমাজ। চায়ের দোকান, হাট বাজার,মাঠে ঘাটে দুপুরের প্রচণ্ড গরমের তাপে লোকালয় জন শুন্য স্থানে।টিন এজার বসে আড্ডা দিতে দেখাযায় হরহামেসে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।খেয়াল নেই বৈশ্বিক মহামারি করোনার তান্ডবের কথা। খেলার মাঠে ভিড়ছেনা তারা।
অথচ অভয়নগরের ভৈরব উত্তর পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিন নড়াইলের প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে মোবাইলে প্রযুক্তির বিশেষ মাধ্যমে লুডু খেলার নামে জুয়ার আসর চললেও মাথাব্যথা নেই কারো।
জানাগেছে এ অঞ্চলে ৫ শতাধিক চায়ের দোকানে প্রতিনিয়ত চলছে মোবাইলে জুয়ার আসর। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বিপুল হারে বেড়েছে এই জুয়ার আসর।
এ অঞ্চলে ৬০ ভাগ চায়ের দোকানে ওয়াই ফাই সংযোগ। প্রচার রয়েছে চা খাইলে নেট ফ্রি। এলাকাবাসীর ধারণা, দোকানে ও যুব সমাজ যেখানে প্রতিনিয়ত আড্ডা দেয় সেখানে পুলিশের কোন নজর দারি না থাকায় গোপন মোবাইলে নেট চালানোর নামে জুয়ারুরা আড্ডার মাধ্যমে মোবাইল বের করে বাজিতে লুডু খেলতে শুরু করে। পঞ্চাশ থেকে শুরু করে হাজার টাকার বাজি চলে এই খেলায়। স্কুল কলেজ ছুটি করোনার সংক্রমণ ভয়ে,অনলাইন ক্লাস করার অজুহাতে মোবাইলের আড্ডা চলে এই লুডুর মাধ্যমে।
অভয়নগর উপজেলার ৭ নং শুভরাড়া ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের আমতলা টু নওয়াপাড়া সড়কে রয়েছ ১১ টি চায়ের দোকান রয়েছে মোড়ল মার্কেট। সেখানে সকাল থেকে দুপুর, বিকাল থেকে গভীর রাত অবদি চলে মোবাইলে বাজিতে লুডু খেলা। প্রসাসনের লোক আসলেই কিছু বুঝে উঠার আগেই সাবধান তারা। সরেজমিনে অভয়নগর উপজেলার আমতলা বাজার,সোনাতলা বাজার,জিয়ের তলা বাজার, শুভরাড়া ইউনিয়নের একাধিক বাজারে ছদ্মবেশে গেলে দেখা যায় ৪ জন,কোথাও তিন বা দুজন মাথানিচু করে বসে আছে। একটু দুর থেকে দেখলে মনে হবে সভ্য পোলাপান ধ্যানে আছে। আবার কেহ এক সাথে সাদা চটের উপর বা বস্তার উপর বসে মোবাইলে বাজিতে লুডু খেলে যাচ্ছ।
ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা যখন বেড়ে ৩,৪ জন হচ্ছে তখন আলাদা করে আরেক দল তৈরি হচ্ছে।
অনুসন্ধানে আরো জানাগেছে পরিবারের বখাটে বনে যওয়া এ সব যুবকেরা হাস মুরগি নারকেল ছাগল কিম্বা কবুতার চুরিকরে বাজির টাকা জোগাড় করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে নিয়োমিত প্রত্যেকটি বাজারের বিশেষ করে চায়ের দোকানে বেশী মোবাইলে জুয়া খেলে সময় পার করে থাকে। অভয়নগর থানার ৬ নং বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ৭০ টির ও বেশী পয়েন্টে চলছে মোবাইলে জুয়ার আসর। অনুসন্ধানে জানাগেছে ভূগিলহাট ঋষিপাড়ায় (পোতপাড়ার পাশে) বাগানের মধ্যে ও মল্লিকের হাটে ভরপুর ভাবে চলছে মোবাইলে লুডু জুয়ার আসর। স্থানীয় ঋষিপাড়ার বিশ জনেরও অধিক লোক মোবাইলে লুডু জুয়া পরিচালনা করে থাকে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে মোবাইলে লুডু জুয়া খেলা ক্যাম্প পুলিশ ম্যানেজ করা লাগেনা। প্রশাসন জানেইনা মোবাইলে লুডু গেইম টা কি। জুয়ারুরা নিরব জায়গা পছন্দ করে ধুমছে চালায় আসর। এছাড়াও বাঘুটিয়া ইউনিয়নের জয়খোলা গ্রামের উত্তর পাশে এবং শ্রীধরপুর ইউনিয়নের মালাধরা, হরিস পুর বাজারে রাতে বসে মোবাইলে জুয়ার আড্ডা। অন্যদিকে দক্ষিন নড়াইলের পেরুলী, খোড়লিয়া, সিংগিয়া, মির্জাপুর,চাকই, সহ একাধিক বাজারে প্রতিনিয়ত চলে মোবাইলে লুডু জুয়ার আসর। স্থানীয় দোকানদার ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিগণ জানালেন, নড়াইল সদর থানার ১২ নং বিছালী ইউনিয়নের চাকই,মধুরগাতী ও আকবপুর গ্রামে পাল্লাদিয়ে চলে এ আসর। এছাড়াও নড়াইল সদর ও অভয়নগর থানার সীমান্তবর্তী বাজার বর্ণীর মোড়ে ধুমছে চলছে এই লুডু জুয়া। বিশেষ করে অভয়নগর থানার শুভরাড়া ইউনিয়নের বাশুয়াড়ী বাজার শুকপাড়ার বাজার কানাপুকুরের পাড়ে,শুভরাড়ার খেয়াঘাট, রানাগাতী বালুর মাঠে, সিদ্ধিপাশার নদীর চরে, গোঢাউন ঘাট,শ্মশানঘাটে, জয়রাবাদ, সোনাতলা বাজার, মাছের ঘেরে, বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পোতপাড়া ও পাইকপাড়া ঋষিপল্লীতে। শ্রীধরপুর বাওড় এলাকায়,বর্ণি-হরিশপুর বাজারের পূর্ব পাশে, দক্ষিন নড়াইলের বিছালী ইউনিয়নের চাকই,মধুরগাতী, মির্জাপুর (নতুন রাস্তার) বিলের একাধিক ঘেরের পাড়ে, ৯ নং সিংঙ্গাসোলপুর ইউনিয়নের নদীর চরে সহ আরো কয়েকটি পয়েন্টে চলছে বিরাম হীন মোবাইলে লুডু নামক এই জুয়ার আড্ডা। মোবাইলে জুয়ার কারনে ইতিমধ্য সমাজে বিশৃংখলা শুরু হয়েছে। সচেতন মহল জানিয়েছেন টিন-এজার এখন মোবাইলে জুয়ার কারনে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাদেরকে এ অভ্যাস থেকে সরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাবে।
তারা আরো জানিয়েছেন, এখনই মোবাইল ব্যবহারে যুবসমাজ কে লাগাম টেনে ধরার উপযুক্ত সময়। এলাকার একাধিক ব্যক্তি দ্রুত মোবাইলে জুয়ার আসর স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করেছেন।