সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শারুনের সঙ্গে মুনিয়ার কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশটের সূত্র ধরে মঙ্গলবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে শারুন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তার কাছে কিছু বিষয় জানতে চেয়েছেন। যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো তিনি জানিয়েছেন। জানতে চাওয়া হয় তিনি মুনিয়াকে চেনেন কি না। জবাবে তিনি জানিয়েছেন, মুনিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। গত বছর মুনিয়া ফেসবুকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে শারুনের দাবি, মুনিয়ার মৃত্যুর পর ফেসবুকে তার সঙ্গে কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো মিথ্যা। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে এই কথোপকথনগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুদে বার্তার ওই কথোপকথনে মুনিয়া শারুনকে লেখেন, তিনি ভালো নেই। এরপর লেখেন, ‘উনি তো আমাকে বিয়ে করবে না। কী করব আমি?’ জবাবে শারুন লেখেন, ‘আগেই বলেছিলাম, ওর কথা শুইনো না। ও আমার বউকে বলছে বিয়ে করবে, কিন্তু করে নাই। মাঝখানে আমার মেয়েটা মা ছাড়া হয়ে গেছে।’
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী বুধবার যুগান্তরকে বলেন, মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনাটিকে অনেকে হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করলেও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। তবে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ওই ফ্ল্যাটে তার যাতায়াত ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার ৪-৫ দিন আগেও আসামি ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আরও বলেন, কেউ কেউ বলছেন মামলার আসামি কার্গো বিমানে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু পুলিশের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, আসামি দেশের বাইরে পালিয়ে যাননি। তিনি দেশেই আছেন। কেউ যদি দেশের বাইরে যায় তাহলে অবশ্যই ইমিগ্রেশনে তার পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে।
ইমিগ্রেশন পুলিশ তদন্ত সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করেছে যে, আসামির পাসপোর্ট ব্যবহার করে কেউ দেশের বাইরে যাননি। কার্গো বিমান, ব্যক্তিগত বিমান বা যে কোনো ধরনের বিমান ব্যবহার করে কেউ দেশের বাইরে গেলে অবশ্যই ইমিগ্রেশন সিস্টেমে সে বিষয়ে তথ্য থাকবে। কিন্তু মুনিয়া আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামির বিদেশযাত্রা সংক্রান্ত কোনো তথ্য ইমিগ্রেশনে নেই।
তিনি বলেন, ওই তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধারের সঙ্গে ৬টি ডায়েরিও পাওয়া যায়। এসব ডায়েরিতে কী লেখা আছে, তা যাচাই করা হচ্ছে। মুনিয়ার লেখা ৬টি ডায়েরিতে তীব্র অভিমান আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ডায়েরিগুলোর পাতায় পাতায় তিনি লিখে রেখেছেন জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাবলী।
এদিকে মুনিয়ার মামলায় বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাত ১১টায় গুলশান-১ এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট (বি/৩) থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় লাশ বেডরুমের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদর উপজেলার মনোহরপুর। সোমবার সকালে বড়বোন নুসরাত জাহানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে মুনিয়ার শেষ কথা হয়।মুনিয়ার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সফিকুর রহমান। মাও বেঁচে নেই। এ ঘটনায় বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেছেন মুনিয়ার বড়বোন নুসরাত জাহান।
মামলায় একটি শিল্প গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আসামি করা হয়েছে। এতে অভিযোগ এনে বলা হয়, আসামি তার বোনকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করেননি। বরং গুলশানে ফ্ল্যাট ভাড়া করে রেখে স্ত্রী পরিচয়ে মেলামেশা করেছেন। ওই ফ্ল্যাটে তিনি আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু সর্বশেষ বিয়ে করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন এবং একইসঙ্গে তার বোনকে নানাভাবে হুমকি দেন। আসামির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়। মুনিয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী ছিলেন। দুই বছর আগে আসামির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকেই বিভিন্ন অভিজাত রেস্টুরেন্টে তারা দেখা করতেন এবং মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। একপর্যায়ে আসামির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।