আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিলের তিন দশক পূর্তি

কামাল হোসেন আজাদ, কক্সবাজার : আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। পূর্ণ হয়েছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবলীলার ৩০ বছর। দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়ানো উপকূলের ঘূর্ণি আক্রান্তদের কাছে প্রতিবছর ঘুরে-ফিরে আসা এ দিনটি। এইদিনে স্বজন হারানোর কথা স্মরণ করতে চোখের পানিতে বুক ভাসান প্রিয়জনরা। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর কাছে কার বাড়ির ভিটে কোনটা সেই সীমানা চিহ্ন নির্ধারণ করাটাও মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। এমনকি বহু মানুষের গায়ে ঠিকমতো কাপড়ও ছিলনা। ঠাঁইহীন উপকূলে অনেকে প্রাণে বেঁচেছিল গাছের সাথে বাদুর ঝোলা করে থাকা নারীদের চুল ধরে। লাশের খোঁজ মেলাতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছিল। গগণ বিদারী বুকফাটা আর্তনাদের শোর চিৎকারে সেদিন মনে হয়েছিল “স্বজন হারানোদের সান্ত্বনা দেবার ভাষা আল্লাহ ছাড়া বুঝি আর কারো নেই।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক ভয়াবহতম দিন। ওইদিন ‘ম্যারি এন’ নামক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় কক্সবাজারসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পুরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছিল। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই আঘাত। স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠে চারিদিকের পরিবেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এতোবড় আঘাতের মুখোমুখি এদেশের মানুষ এরআগে আর কখনো হয়নি। পরদিন সারা বিশ্বের মানুষ বিস্ময়ে দেখেছিলেন ধ্বংসলীলা। বাংলাদেশে আঘাত হানা ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ২৯শে এপ্রিল রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা এ ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল/ঘন্টা)। ঘূর্ণিঝড় এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট ৬ মিটার (২০ ফুট) উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরো বেশি। মারা যায় ২০ লাখ গবাদিপশু। গৃহহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। ক্ষতি হয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ। সেইদিন আশ্রয়হীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করেছিল প্রায় এক কোটি মানুষ।
এদিকে দিনটিকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় বিভিন্ন সংগঠন নানান কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। এবারও বিভিন্ন ব্যানারে এসব সংগঠন একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তন্মধ্যে খতমে কুরআন, মিলাদ, দোয়া মাহফিল, শোক র‌্যালি, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ ও স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে উপকূলভিত্তিক সংগঠনগুলো।

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।