মুহাম্মদ নূরে আলম : পশ্চিমবঙ্গে ভূমিধস বিজয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার বিশাল জয়। গতকাল রোববার সকাল থেকে চলছে ভোট গণনা। গণনা শেষ হতে রাত পেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সন্ধ্যার মধ্যেই জানা গেছে ২০৮ আসনে এগিয়ে আছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। তার এই বিজয় স্পষ্ট হয়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে আগেই অভিনন্দনের ঢল নামছে। এই নির্বাচনে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে আগ্রাসী প্রচারণা সত্ত্বেও মমতা তাকে কৌশলে, জনগণের ভালবাসা দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে চরম নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে। ১৭ রাউন্ড ভোট গণনার পর খবর আসে, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি জয়ী হয়েছেন। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতেই মমতার জয় নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়। সার্ভারে সমস্যার কারণে সঠিকভাবে কিছু জানাও যাচ্ছে না। তারপরই খবর আসে, নন্দীগ্রামে ১ হাজার ৬২২ ভোটে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী জয়ী হয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে নন্দীগ্রামে হেরে গিয়েছেন বলে জানান মমতা। তিনি বলেন, নন্দীগ্রাম যা রায় দেবে, মাথা পেতে নেবো। নিজে হারলেও দলের জয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, বাংলার জয়ের জন্য সকলকে অভিনন্দন। বাংলার জয়, মানুষের জয়। ফলাফল নিয়ে এই বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। তার অভিযোগ, আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, রায় ঘোষণার পর কারচুপি হয়েছে।
কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস ২০৮টি আসনে এবং বিজেপি ৮০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তৃণমূল ২০৮ আসনে এবং বিজেপি ৮০ আসনে এগিয়ে রয়েছে। তবে এনডিটিভি জানিয়েছে, তৃণমূল ২০৮ আসনে এবং বিজেপি ৮৬ আসনে এগিয়ে রয়েছে। এই পরিসংখ্যানেই জয় সম্পর্কে নিশ্চিত তৃণমূল। তবে ভারতে করোনা যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তাতে এটা উচ্ছ্বাস দেখানোর সময় নয় বলে জানিয়েছেন মমতা সরকারের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
তার মতে, এই জয়ে কোনো বিজয় মিছিল হবে না। এটা আনন্দ করার সময় নয়। রাজ্যে কত মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমার নিজের অনেক আত্মীয় মারা গিয়েছেন। এমনকি যারা আমাকে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই নেই। এই অবস্থায় বিজয় মিছিল বা আনন্দ করার মতো মানসিক অবস্থা নেই আমার। বিধানসভা নির্বাচনে ফিরহাদ নিজে কলকাতা বন্দর থেকে প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে রোববার দুপুর পর্যন্ত বিজেপির আওয়ধ কিশোর গুপ্তর সঙ্গে তার প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ১৭ হাজার। তবে নিজের জয়ের ব্যাপারে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ।
তিনি বলেন, কোনো দুশ্চিন্তা নেই আমার। মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমি নিজেকে ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, টু দ্য পিপল’ বলে মনে করি। মানুষ বিবেচনা করে মতামত দিয়েছেন। তবে নিজের কেন্দ্রে ফিরহাদ প্রতিপক্ষের থেকে নিরাপদ ব্যবধান বজায় রাখতে সক্ষম হলেও, নন্দীগ্রাম ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে। সেখানে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পিছিয়ে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে ফিরহাদের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমরা কাজ করেছি। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো ধর্ম, বর্ণ, জাতির ভিত্তিতে ভোট হয় না পশ্চিমবঙ্গে। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে তৃণমূল। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নন্দীগ্রামের ফল নিয়ে চরম নাটকীয়তা, জয় দাবি শুভেন্দু: কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফলাফলের বিষয়ে শুভেন্দু জানিয়েছেন, ‘১ হাজার ৬২২ ভোটে আমি জিতেছি। যদিও পোস্টাল ব্যালট ছাড়া মমতার সঙ্গে শুভেন্দুর জয়ের ব্যবধান ৯ হাজার ৭৮৭ ভোটের। তারপরও সংবাদ সম্মেলনে নন্দীগ্রামে হেরে গেছেন জানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘নন্দীগ্রাম যা রায় দেবে, মাথা পেতে নেব। এদিকে নিজে হারলেও দলের জয়ের জন্য বাংলার মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বাংলার জয়ের জন্য সকলকে অভিনন্দন। বাংলার জয়, মানুষের জয়। সেই সঙ্গে ফলাফল নিয়ে এই বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মমতা। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ রয়েছে, রায় ঘোষণার পর কারচুপি হয়েছে।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সারাদিন ধরে অনিশ্চয়তা ছিল, জয়টা তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া শুভেন্দু পাবেন নাকি দলনেত্রী মমতা। একবার শুভেন্দু এগিয়ে যাচ্ছিলেন, পরক্ষণই আবার খবর আসছিল মমতার এগিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। তারপর তিনি লাগাতার মমতা ও তার ভাইয়ের ছেলে অভিষেক ব্যানার্জির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যান। সেই তুলনায় তৃণমূল অনেকটাই স্তিমিত ছিল। তবে অধিকারীদের সঙ্গে সম্পর্কের শেষ পেরেক পোতেন মমতাই। নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, সেখান থেকেই ভোটে লড়বেন তিনি।
অভিনন্দন বার্তায় ভাসছেন মমতা: আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার অনেক বাকি। তবু এখন পর্যন্ত যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে পশ্চিমবঙ্গে ভূমিধস বিজয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। তার এই বিজয় স্পষ্ট হয়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে আগেই অভিনন্দনের ঢল নামছে। এই নির্বাচনে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে আগ্রাসী প্রচারণা সত্ত্বেও মমতা তাকে কৌশলে, জনগণের ভালবাসা দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাই শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত তাকে ‘টাইগ্রেস অব বেঙ্গল’ বা পশ্চিমবঙ্গের বাঘিনী বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনী প্রচারণাকালে তিরস্কার করে ‘দিদি, ও, দিদি’ বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা যেন ধুয়েমুছে দিলেন সঞ্জয় রাউত। এর জবাব দিতে তিনি মমতাকে ‘টাইগ্রেস অব বেঙ্গল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কালীঘাটে যখন উৎসবের ঢেউ লেগেছে, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দের বাধভাঙ্গা জোয়ার এসেছে, তখনই মমতাকে অভিনন্দনের বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন ভারতেরই বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা।
এই জয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে বিশাল জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি এক টুইটে বলেছেন, ভূমিধস বিজয়ের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিদিকে অভিনন্দন। কি এক চমৎকার লড়াই! পশ্চিমবঙ্গের মানুষদেরকেও অভিনন্দন। টুইট করেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ। বিজেপি সরকারের সবচেয়ে কড়া সমালোচকদের অন্যতম তিনি। টুইটে বলেছেন, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি আপনাদের জন্য সব রকম প্রতিকূলতা তৈরি করেছিল। আপনারা যে সেই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিজয়ী হয়েছেন, এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। মমতা দিদিকে অভিন্দন। অভিনন্দন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিজন তৃণমূল নেতাকর্মীকে। ওদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার। তিনি টুইটে লিখেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই অসাধারণ জয়ের জন্য অভিনন্দন। আশা করি আমরা একসঙ্গে মানুষের কল্যাণে এবং মহামারি নিয়ন্ত্রণে কাজ করব। অভিনন্দন জানিয়েছেন উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। তিনি টুইটে লিখেছেন, বাংলার সচেতন নাগরিকরা বিজেপি’র ঘৃণার রাজনীতিকে পরাজিত করেছেন। মানুষের সেবায় ব্রতী পরিশ্রমী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের নেতাদের শুভেচ্ছা। তিনি আরো লিখেছেন, একজন মহিলাকে বিজেপি যেভাবে ‘দিদি ও দিদি’ বলে কটাক্ষ করছিল, তার যোগ্য জবাব দিয়েছে বাংলার জনগণ। হ্যাশট্যাগে অখিলেশ লিখেছেন ‘দিদি জিও দিদি’। বাংলার ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, কংগ্রেস নয়, এই ভোটে জিতে গোটা দেশের প্রধান বিরোধী মুখ হয়ে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী বলেছেন, খেলা হচ্ছে তো! এ অবস্থায় কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, কেন এমন ফল জানতে চান বিজেপি প্রধান ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গায়ক বাবুল সুপ্রিয় আর লকেটের পিছিয়ে থাকাটা আশ্চর্যজনক।
Check Also
ডিসেম্বরের ২১ দিনে রেমিট্যান্স এল ২ বিলিয়ন ডলার
চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে বৈধ পথে ২০০ কোটি মার্কিন (২ বিলিয়ন) ডলারের …