বিলাল মাহিনী, অভয়নগর (যশোর) :
ম্যানেজ করে চলছে অবৈধ কয়লা কারখানা, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক ব্যক্তিত্ব কাউকেই যেন তোয়াক্কা করেন না অভয়নগরের সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের সেই সকল অবৈধ কয়লা কারখানার মালিকরা।
একাধিকবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সকল অবৈধ কয়লা কারখানা উচ্ছেদ করে বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও প্রশাসনের নির্দেশনাকে থোড়াই কেয়ার করছেন তারা। কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক ব্যক্তিত্বদেরও মানছেন না।
তবে অভিযোগ রয়েছে, ঘাটে ঘাটে টাকা ছিটিয়ে তারা এ অবৈধ কারবার চালু রেখেছেন। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা প্রশাসনও কি হার মানলো এ অবৈধ কয়লা কারখানার মালিকদের ক্ষমতার কাছে?
নাকি অন্য কোন ব্যাপার রয়েছে? বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটাই অভিযোগ তুললেন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর পক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের অভয়নগর উপজেলার ৮ নং সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সভাপতি নাজিম মোল্যাসহ অনেকে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৬নং ওয়ার্ডের সহ সভাপতি আচিন্ত কুমার ভদ্র ওরফে কানু জানালেন পাশে এসে শান্তনা দেয়নি কেউ, হতাশায় হতবাক অভয়নগরের সিদ্ধিপাশার শতশত পরিবার। তিনি আরো জানালেন যারা মাঠে নেমেছিল কয়লার বিপক্ষে তারাও যেন ঝিমিয়ে, প্রশাসনের মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সকলেই যেন কয়লা ব্যবসায়িদের কাছে অঘোষিত জিম্মি।
কয়েকবার এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সাময়িক বন্ধ রাখে কারখানা। এখন ভুক্তভূগি এলাকাবাসি ধারনা করেছে প্রশাসনের একাধিক টেবিলের কর্তাব্যক্তিকে বিশেষ কায়দায় ম্যানেজ করে পূনরায় দ্বিগুনভাবে চলছে কয়লা ব্যবসা। তাতে আবারও সিদ্ধিপাশার আকাশ কয়লার কালো ধোয়ায় বাতাস ভারি হতে শুরু করেছে। নির্ভর যোগ্যসূত্র থেকে জানাগেছে প্রশাসন ম্যানেজ করার কারনে , অভয়নগরে কাঠ-কয়লা চুল্লি ব্যবসায়ীদের দম্ভোক্তি এবার চরমে। ধরাকে যেন সরা জ্ঞান করছে তারা। জয়বাবুর কারখানা আবার ও নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে।
দিনরাত একটানা অতিরিক্ত শ্রমিকে গড়ে তুলছে নতুন নতুন কয়লার চুলা। কাঠ সাজিয়ে পাকা ইটের গাথুনিতে তৈরি হচ্ছে এসব চুলা। অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনকে এ ভাবে চ্যলেঞ্জ করে একটি স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী মহল ফের কয়লার চুলি চালু করেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলে আক্রান্ত এই কৃত্রিম ধোয়ায়।
তারপরও বন উজাড় করে পুনরায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি হচ্ছে দেদারছে। জানাগেছে চলতি বছরের শুরুর দিকে ও পরে বেশ কয়েকবার পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন চুলি গুলি ভেঙ্গে দেয়ার পরও আবার নতুন করে কাঠ পুড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। চুলি মালিকদের অভিযোগ যারা ঠিক মত মাসোহরা দেয়না তাদের কয়লা কারখানায় উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে। ৯টি চুল্লির মালিক এক কয়লা ব্যবসায়ী জানালেন, টাকা দিয়ে তারা কয়লার চুল্লি চালিয়ে যাচ্ছেন।
পত্রিকায় নিউজ করলে তাদের দ্বিগুন টাকা গুনতে হয়। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরিতে জড়িত ব্যবসায়ীদের দাবি উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশকে সন্তুষ্ট রেখেই চলে কয়লার এ অবৈধ ব্যবসা। ঘন বসতীপূর্ণ এ অঞ্চলের সবুজ গাছ পালাগুলো ধূসরে পরিনত হতে শুরু হয়েছে। দেখাগেছে বিস্তীর্ণ সবুজ ক্ষেতের পাতা পুড়ে গেছে, গাছের ডাল পাতা পুড়ে গেছে ধোয়ার বিষাক্ত বাতাসে। মারা যাচ্ছে নদীর পাড়ের বিভিন্ন প্রজাতীর গাছে। যার ফলে একদিকে বন উজাড় হচ্ছে অপরদিকে পরিবেশ হচ্ছে দূষিত।
স্থানীয় শত শত ব্যক্তি ইতিমধ্যে শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত হয়েছে। বৃদ্ধ, শিশু ও পরিবেশ সবই ভয়াবহ সংকটে। প্রশাসনের নিরবতায় প্রভাবশালীরা থোড়ায় কেয়ার করছেনা অসহায়ের আহাজারি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আবারও কাঠকয়লা তৈরির চুলি। পাল্লা দিয়ে নতুন করে অগনিত চুলি তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এই চুলিতে দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। প্রতিনিয়ত ফলজ ও বনজ গাছ কেটে সাবাড় করছে এলাকার কিছু অসাধু পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি।
চুলা বন্ধকর- এ রকম মুখে বড় বড় বুলি ছড়ালেও বিশেষ মহলের নিজেরাই জড়িত এ কাজে। বিশেষ করে উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের ধুলগ্রাম ও সিদ্দিপাশার সোনাতলা এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যক্তি এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই এলাকায় প্রায় ১৫০টির অধিক চুল্লিতে অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কাজ চলছে।
প্রতিটি চুলিতে গড়ে ৮থেকে ১০দিনে প্রায় ২৫০মণ কাঠ কয়লা তৈরির কাজে পুড়ছে।
বেশ কিছু চুলি ভৈরব নদের তীরবর্তী এবং দূর্গম এলাকা হওয়ায় প্রশাসনের অভিযানের বাইরে থেকে যাচ্ছে। বাকি চুলি গুলোতে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কয়েকদফা অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে ফেললেও পূনরায় আবার ওই চক্রটি সক্রিয় হয়ে কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছে দেদারছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, পরিবেশ দূষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এলাকাবাসী। স্থানিয় দলীয়নেতা ও অসাধু চক্রের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না অনেকে। তাদের মতে, প্রশাসন যদি জোরালো কোনো ভূমিকা রাখে তাহলে হয়তো এই গাছ কেটে কয়লা তৈরি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।