বিজ্ঞান ধর্ম ও বিশ্বরাজনীতির আয়নার করোনা

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় রূপান্তর আগেই ঘটেছিল। এবার ভারতে ঘটছে তৃতীয় রূপান্তর। এই অর্থ হল তিনটি ভিন্ন ভিন্ন কোভিড স্ট্রেইন একটি নতুন রূপে অবতীর্ণ হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই ভারতসহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে সনাক্ত করা হয়েছে। বিবিসি ও ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে- মহারাষ্ট্র, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে ট্রিপল মিউট্যান্ট জিনের সন্ধান পাওয়া গেছে।

রোগটির প্রাদুর্ভাব প্রথমে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুপেই প্রদেশের উহান নগরীতে চিহ্নিত করা হয়। এবং ২০২০ সালের ১১ই মার্চ তারিখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটিকে একটি বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। করোনা ভাইরাসটিকে নিয়ে ভুল বা মিথ্যা তথ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব আন্তর্জাল বা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও চীন, পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষ ও বিদেশীভীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও আলোচনা পর্যালোচনা হচ্ছে। কোভিড-১৯ কেন্দ্রিক বিশ্বে একে ওপরকে দোষারোপের রাজনীতিও চলছে। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা তাই করোনা পরিস্থিতিকে বিজ্ঞান ধর্ম ও রাজনৈতিক ধু¤্রজাল নিয়ে আলোচনা স্থান পেয়েছে।

বিজ্ঞান কোভিড-১৯ এর বিস্তারকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করেছে। এক, এটি জীবজন্তুর শরীর থেকে সৃষ্ট। দুই, জীবাণু অস্ত্র। অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতির মাঠে কোভিড-১৯ এর জন্য আমেরিকা ইরানসহ কয়েকটি দেশ চীনকে দায়ী করলেও চীন বলছে ভিন্ন কথা। আবার বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগ্রন্থ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং ধর্ম বিশ্বাসীরা মনে করছেন- এটি মানুষের অসীম পাপের ফলস্বরূপ সৃষ্টিকর্তার গযব তথা শাস্তি।

কোভিড রাজনীতি :
কোভিড-১৯ এর জন্য আমেরিকা ইরানসহ কয়েকটি দেশ চীনকে দায়ী করেছে। চীন দায়ী করছে আমেরিকাকে। চীনের পাশাপাশি ইরানের ভেতরেও ব্যাপক মানুষের বিশ্বাস এই জীবাণু যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এমনকি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল হুসেইন সালামি সরাসারি বলেছেন, করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বয়ং বলেছেন, করোনা ভাইরাস চীনের কাজ, তারাই দায়ী। মি. ট্রাম্পের সমর্থক হিসাবে পরিচিত অনেক ব্যক্তিই খোলাখুলি বলছেন, করোনাভাইরাস চীনের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র। পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন একদল বিজ্ঞানী মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে একটি বিবৃতি দিয়েছেন যেখানে তারা বলেছেন, “জীবজন্তুর শরীর থেকেই এই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধুই ভয়,গুজব এবং ঘৃণা ছড়াবে; যাতে এই সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।
কোভিড পরিস্থিতিতে ধর্মীয় ও নৈতিক দিক :
দেশে দেশে লকডাউন ও কারফিউ জারির পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ শুধু বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা, সতর্কতা ও ডাক্তারি চিকিৎসার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। অনেকেই ঘরে বসে ইবাদত-বন্দেগি করছেন; অনেকেই প্রার্থনা করতে ছুটে যাচ্ছেন মসজিদ, মন্দির, গির্জা, সিনাগগসহ উপাসনালয়ে।এমনকি ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের গোঁড়া অংশ জোর দিয়ে বলতে শুরু করেছে, একমাত্র প্রার্থনা এবং দোয়াই মানবজাতিকে এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

ভাইরাসের ধরণ পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি লেখায় সাংবাদিক আনসারী লিখেছেন-‘গত বছর প্রাণঘাতি করোনা মহামারী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই রোগটির ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন নতুন ধরণ শনাক্ত হচ্ছে। সর্বশেষ আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন ধরণ নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও এখন এসবের কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রতিদিন নতুন নতুন ধরণ পাল্টানোয় তারাও রীতিমত ক্লান্ত।

লক্ষণীয় বিষয় হল-করোনা নিয়ে যখন পুরো বিশ্ব অস্থির। প্রতিদিন বাড়ছে লাশের মিছিল। ঠিক তখন আবার ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে আরেক প্রাণঘাতি ভাইরাস ‘ব্লাক ফাঙ্গাস’। যেটা করোনায় আক্রান্তদেরকে অন্ধ করে দিচ্ছে।
এরপর ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ নামে আরেক বিধ্বংসী ভাইরাসের আগমনের কথা শুনা যাচ্ছে। এটি ছড়িয়ে পড়লে নাকি করোনার চেয়েও আর ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সেদিন এই ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করেছেন।
করোনার ধরণ পরিবর্তন ও নতুন ভাইরাসের বিষয়গুলো আমরা বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে প্রতিদিন জানতে পারছি।এসব ভাইরাসের বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যার পাশাপাশি নৈতিক ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা থাকতে পারে কি না? এই যে প্রতিদিন করোনার রূপ পরিবর্তন হচ্ছে-নতুন ভাইরাস দেখা দিচ্ছে এবং আসন্ন ভাইরাসেরও আগমনী বার্তা দিচ্ছে। ধর্ম বিশ্বাস থেকে মনে করি এগুলোর ধর্মীয় ব্যাখ্যা আছে। একজন মুসলমান হিসেবে মনে করি এগুলো আমাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তির ধরণ পরিবর্তন। এগুলো আমাদের পাপের ফল। আল্লাহ যেমনটা করেছিলেন ফেরাউন ও তার অনুসারীদের উপর।

মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সুরা আ’রাফে আল্লাহ মুসা আ. এর সাথে ফেরাউনের আচরণ ও পরে ধারাবাহিকভাবে যেসব শাস্তি দিয়েছিলেন সেগুলো বর্ণনা করেছেন। প্রথমে দুর্ভিক্ষ দিয়ে শুরু করেছিলেন। তারপর ফসলের ক্ষতি, উকুন, পঙ্গপাল, প্লাবন, রক্ত ও ভেক। কিছু দিন পর পর আল্লাহ শাস্তির ধরণ পরিবর্তন করতেন। যখন কিছুতেই তারা সঠিক পথে আসলো না-তখন সবগুলোকে একসাথে নীল নদে ডুবিয়ে মারলেন। এখন প্রতিদিন যেভাবে করোনার ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে এবং নতুন নতুন ভাইরাস ছড়াচ্ছে-ভবিষ্যতে আমাদের ভাগ্যে যে কি আছে সেটা আল্লাহই ভাল জানেন। কারণ, অপরাধ-অপকর্মে আমরা ফেরাউনের সম্প্রদায় থেকে বেশি পিছিয়ে নেই। আল্লাহর নাফরমানীর এমন কোনো সীমা নেই যা আমরা অতিক্রম করি নাই।
অনেক আধুনিক শিক্ষিত লোকদের কাছে এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কারণ, একদল এখন কুরআনের চেয়ে বিজ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দেয়।তবে, বিজ্ঞানের এই বিষয়গুলো কুরআনের সাথে কোনো সাংঘর্ষিক নয়।

বিভিন্ন ধর্মে মহামারি আযাব গজব :
নানা সময়ে মহামারি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে একেক ধর্মে একেকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। যেমন, বাইবেলের উক্তি তুলে ধরে অনেক খ্রিস্টীয় অনুসারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, এমন একটি সময় আসবে ‘যখন একটি রোগে অনেক মানুষ মারা যাবেন।’একজন লিখেছেন, ‘দুঃখের দিনের শুরু’ ম্যাথু ২৪:৩-৮। আরেকজন ‘যিশু ফিরছেন’ এই হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলের আগুন, করোনাভাইরাস, অপ্রচলিত জায়গায় ভূমিকম্প’র জন্য দায়ী বিশ্বব্যাপী হিংসা/খুন বেড়ে যাওয়া, ক্ষুধার্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া আর তারা যারা পুনরুত্থানের কিতাবকে অবজ্ঞা করে।’
ইসলাম ধর্ম বলছে- ‘ব্যভিচার যদি কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের মধ্যে এমন এমন রোগ দেখা দেবে, যা আগে ছিল না। (বায়হাকি, ইবনে মাজাহ) সুরা রোমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-‘জলে-স্থলে যে দুর্যোগ, বিপর্যয় মহামারী ধেয়ে আসছে তা তোমাদের হাতের কামাই।’ ইসলাম ধর্মের অনেক অনুসারীও ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। অনেকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বারবার হাত ধোয়ার পরামর্শের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার আগে ওযু করার সঙ্গে মিলিয়েছেন। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে বলেছেন।
অনেক হিন্দু ধর্মের অনুসারীও এ নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার সভাপতি স্বামী চক্রপাণি এ ভাইরাসকে একটি ‘রাগী দেবতা’ বলে অভিহিত করেছেন। ‘করোনা ভাইরাস নয়, এটি নিরীহ প্রাণীকে রক্ষার অবতার। যারা এদের ভক্ষণ করেন, তাদের মৃত্যু ও সাজার শাস্তি শোনাবার জন্য এরা এসেছে’ বলেন তিনি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের করোনার মূর্তি তৈরি করে ক্ষমা চাওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করেন চক্রপাণি। আসাম বিজেপির সদস্য সুমন হরিপ্রিয় দাবি করেন যে, গোমুত্র ও গোবর করোনা ভাইরাসের দূষণ থেকে বাঁচায়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা ভাইরাস প্রাণী ও মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ছড়াতে পারে। এটি ভাইরাসের একটি বিশাল পরিবার যা সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টজনিত জটিল রোগ মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মার্স-কোভ) ও সিভিয়ার অ্যাক্যুট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সার্স-কোভ)-এর কারণ হতে পারে।

রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং The Humani.y of Muhammad: A Christian View (Blue Dome Press, 2020), I Islam in America: Exploring the Issues (ABC-CLIO ২০১৯) গ্রন্থের লেখক ড. ক্রেইগ কনসিডাইন গত ১৭ মার্চ নিউজউইকে প্রকাশিত তার এক কলামে তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘আপনারা কি জানেন যে, …..আর কে মহামারীর সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কোয়ারেন্টাইনের কথা বলেছিলেন?’ পরের বাক্যে ড. ক্রেইগ কনসিডাইন এ প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, তিনি হচ্ছেন ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.), যিনি ১৪০০ বছর আগে এ কথা বলেছিলেন।

ড. ক্রেইগ কনসিডাইনের মতে, তিনি কোনোভাবেই প্রাণঘাতী রোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। তথাপি মুহাম্মদ (সা.) পাণঘাতী রোগ ও মহামারী মোকাবিলায় যেসব উপদেশ দিয়েছেন সেগুলো কভিড-১৯ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যথেষ্ট প্রজ্ঞাপূর্ণ ও সুবিবেচনাপ্রসূত বলে বিবেচিত হতে পারে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যদি শুনতে পাও, কোনো ভূখন্ডে প্লেগ দেখা দিয়েছে, তাহলে সেই ভূখন্ডে প্রবেশ কোর না; কিন্তু তুমি যদি দেখতে পাও, তুমি যেখানে বাস কর সেখানে প্লেগ দেখা দিয়েছে, তাহলে সেই স্থান ত্যাগ কোর না।’ কভিড-১৯ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আজ বিশ্বব্যাপী যে ‘কোয়ারেন্টাইন’ বা করোনা রোগী ও ভাইরাস বহনকারীদের আলাদা করা ও থাকার কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে কি মুহাম্মদ (সা.)-এর এই প্রাজ্ঞ নির্দেশনার মিল পাওয়া যাচ্ছে না?

হাদিস গ্রন্থ জামে আত-তিরমিজিতে গ্রন্থাকার বর্ণিত হাদিসটি এ রকম- ‘একদিন নবী মুহাম্মদ (সা.) লক্ষ্য করলেন, এক বেদুইন পুরুষ তার উটকে না বেঁধে উন্মুক্ত অবস্থায় রেখে দিয়েছেন। তিনি বেদুইনকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তোমার উটকে বাঁধলে না কেন? তখন বেদুইন উত্তর দিলেন, আমি সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রেখেছি এবং সৃষ্টিকর্তাই আমার উটকে রক্ষা করবেন। তখন নবী মুহাম্মদ (সা.) বললেন, প্রথমে তোমার উট বাঁধো, তারপর সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন কোর।’ লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, রসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস এবং ধর্মেও নৈতিকতা, শুদ্ধাচার ও পালনীয় ব্যাপারে যেমন নিষ্ঠতা দেখিয়েছেন; আবার যুক্তিবিচ্যুতও হননি।
মুহাম্মদ (সা.) ধর্মের ব্যাপারে যেমন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তেমনি স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও সবার কল্যাণের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও তাগিদও দিয়েছেন। বিশ্বে উগ্রতা, বর্ণবাদ, জঙ্গিবাদ, ঘৃণা ও যুক্তিবিবর্জিত ধর্মান্ধতা যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে; সেই মুহূর্তে ‘ফেইথ’ বা বিশ্বাস বা ধর্মের ন্যায়নিষ্ঠ চর্চা ও ‘র‌্যাশনালিটি’ বা যুক্তির চর্চা এবং বিশ্বাস ও যুক্তির সমন্বয় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে যেমন সব মানুষের ইহজাগতিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারে; তেমনি রাষ্ট্রিক ও বৈশ্বিক পরিবেশকেও করে তুলতে পারে সহনশীল, শান্তিপূর্ণ ও সব মানুষের জন্য নিরাপদ।
আল্লাহর আযাব গজব :
করোনা অতিমারির ধর্মীয় ব্যাখ্যায় বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় ইসলামি স্কলার মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ‘করোনা আমাদের উপার্জিত, পাপের ফসল। আমরা যদি নাফরমানি ছেড়ে দিই এক আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হতাম, আল্লাহর দেয়া বিধিবিধান, শরিয়ার নিয়মকানুন ও ইসলামকে যদি মেনে চলতাম তা হলে এই আজাব, গজব, বিপর্যয় মহামারী আক্রমণ করত না। সুরা রোমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-‘জলে-স্থলে যে দুর্যোগ, বিপর্যয় মহামারী ধেয়ে আসছে তা তোমাদের হাতের কামাই।’ তিনি বলেন, সুরা রোম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এগুলো আমাদের পাপের ফসল। আমরা পাপের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি।

তিনি সুনানে ইবনে মাজার একটি হাদিসে পেশ করেন। যেখানে আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, কোনো সমাজে যখন অশ্লীলতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ ওই সমাজে মহামারী (তয়ু’ম) পাঠান। যখন কোনো সমাজে অশ্লীলতা, নগ্নতা ছড়িয়ে পড়ে  এবং এগুলো সহজলভ্য হয়ে যায়, মানুষ যখন এগুলো প্রচার-প্রসার করতে একটু দ্বিধাবোধ করে না; তখন আল্লাহ ওই সমাজে মহামারী পাঠান, আজাব পাঠান।’

আজ গোটা বিশ্বে অশ্লীলতা, বেহায়াপনায় ছেয়ে গেছে। পত্রপত্রিকা ম্যাগাজিনে ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াতে অশ্লীল ছবি, ভিডিও, নারী-পুরুষের অশ্লীল দৃশ্য এখন খুবই সহজলভ্য। ইন্টারনেট, ইউটিউবের কারণে এগুলোর অ্যাকসেস পেয়ে যাচ্ছে। ফলে গোটা বিশ্ব এখন অশ্লীলতায় সয়লাব। সহিহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, আল্লাহর রাসুল বলেছেন-‘এই মহামারী এক ধরনের আজাব। যেটা পূর্ববর্তী অনেক জাতির ওপর চাপিয়েছেন।

মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তাআলা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে, সীমা লঙ্ঘন করেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে।’(সুরা ত্বাহা ২৪)
বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টিকারী অতিমারি করোনা ভাইরাস নিয়ে বিজ্ঞান ধর্ম ও কোভিড রাজনীতি চলছে। করোনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্বে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যে মানুষ হিসেবে পৃথিবীর সকল জীবনের স্বাভাবিক সুন্দর জীবন প্রত্যাশা করে ইতি টানছি। আল্লাহ হাফিজ।

লেখক : বিলাল মাহিনী,

পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সম্পাদক : সিংগাড়ী আঞ্চলিক গণ-গ্রন্থাগার ও ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র,
জীবন সদস্য : নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট, অভয়নগর, যশোর।

Check Also

আব্দুর রহমান কলেজের বিধিবহির্ভূত এডহক কমিটি বাতিল চেয়ে আবেদন

সূত্র ঃ তারিখ ঃ ২০-১০-২০২৪ ইংবরাবরজেলা প্রশাসকসাতক্ষীরা। বিষয় ঃ বিধিবহির্ভূত এডহক কমিটি বাতিল প্রসঙ্গে। জনাব,যথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।