দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর খুশির বার্তা নিয়ে প্রতি বছর আসে ঈদুল ফিতর। এই খুশি সেই ঈমানদার মুসলমানদের জন্য, যারা আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে এক মাস সিয়াম সাধনা করেছেন। কারণ সিয়ামের পুরস্কার শুধু আখিরাতে নয়, এই দুনিয়ার ব্যক্তি, সমাজ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের জন্যও সুফল বয়ে আনে। আত্মার উন্নয়নে সিয়ামের ভূমিকা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এবং রাসূল সা. হাদীসে এ বিষয়ে অসংখ্য সুসংবাদ দিয়েছেন। আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, আমাদের শরীরে যে বিষাক্ত বর্জ্য জমে, এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তা দূর হয়।
আমরা জানি, আল্লাহ তায়ালা অন্য এগারো মাস যা আমাদের জন্য হালাল করেছেন, সিয়াম পালনের সময় তা নিষিদ্ধ বলে আদেশ নিয়েছেন। তাই একজন ঈমানদার মুসলমান আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে তা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করেন। সুবেহ সাদেক থেকে নিয়ে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত ক্ষুধা ও পিপাসায় শত কষ্ট হলেও খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করেন না। জৈবিক চাহিদা পূরণ করা থেকে বিরত থাকেন। রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, হিংসা, বিদ্বেষ, ঘুষ, দুর্নীতি, মিথ্যা ও প্রতারণার মতো রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এর ফলে একজন মানুষ আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি লাভ করে। ক্ষুধা ও পিপাসায় কষ্ট করার সময় দুঃখী ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট উপলব্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এক মাসের সিয়াম সাধনা একজন মানুষের আল্লাহভীতি বা তাকওয়ার গুণাবলিকে সমৃদ্ধ করে। মানবিকবোধকে জাগ্রত করে। ঈদুল ফিতর হলো এই গুণাবলির পরীক্ষা ও ফলাফল লাভের দিন। আমরা সিয়াম থেকে কতটুকু লাভবান হলাম, তা উপলব্ধি এবং সেই আলোকে পথচলার শপথের দিন ঈদুল ফিতর। এই শপথের আলোয় বাকি এগারোটি মাস প্রতিটি মানুষ জীবন পরিচালনা করলে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও বিশ্বে এক অনাবিল শান্তি ও সম্প্রীতির আবহ তৈরি হবে। দুনিয়াবি এই লাভ ও সুফলের পর আছে পরকালের সীমাহীন সুখের সুসংবাদ।
ঈদের এই আনন্দ যেন কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষের মাঝে সীমাবদ্ধ না থাকে, আমাদের সেই চেষ্টা করতে হবে। ধনী-গরিব সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নিই এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের যে শিক্ষা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে এই করোনা মহামারির সময় আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য অনেক বেশি। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিয়ামত দিয়ে যাদের ধন্য করেছেন, তাদের মনে রাখতে হবে ঈদের খুশি থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়।
আসুন, আমরা ঈদুল ফিতরের এই আনন্দ সওগাত সবার মাঝে ছড়িয়ে দিই। মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট আমরা এই মহামারি থেকে মুক্তি এবং সব মানুষের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করি। ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত গণতান্ত্রিক কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিই। আল্লাহ আমাদের সিয়াম, সালাতসহ সকল নেক আমল কবুল করুন। আমীন।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …