ভারতের অন্যসব রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও করোনাভাইরাস (কোভিড) সংক্রমণ মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা পয়েন্টে ভেসে আসছে অসংখ্য লাশ। উজান থেকে ভেসে আসা এসব লাশ গঙ্গা নদী থেকে তুলে নদী তীরে পুঁতে ফেলা হচ্ছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ায় পদ্মা নদীতে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ফারাক্কা বাঁধের ১০ কিলোমিটার উজানে রাজমহলে লাশ ভাসতে দেখলেই ভারতের পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা তা তুলে নদী তীরে পুঁতে ফেলছেন।
কয়েকদিনে ফারাক্কা বাঁধে আটকেপড়া অর্ধশতাধিক মরদেহ উদ্ধারের খবর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে এসেছে।
মঙ্গলবার বিজিবির ৫৩ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল সুরুজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ফারাক্কার উজানে গঙ্গা নদীতে বিপুল সংখ্যায় মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তারা অবগত। ফারাক্কার তিনটি গেট খোলা থাকায় লাশ পদ্মা নদীতে চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে পদ্মায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন থেকে নদী তীরবর্তী মানুষদের সতর্ক ও সজাগ থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
ভারতের উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার, উত্তর প্রদেশের বারানসী, কানপুর, এলাহাবাদ, বিহারের পাটনা, মুঙ্গের, ভাগলপুর ও পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দাদের গঙ্গার পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ। এ কারণে বাংলাদেশও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশ রোধে ও পদ্মায় নজরদারি রাখতে বিজিবির পক্ষ থেকে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে। এ সীমান্ত দিয়ে কেউ যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকতে বিজিবির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, বিস্তীর্ণ সীমান্ত দিয়ে কেউ যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবিকে বলা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সীমান্তবর্তী পাকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, পদ্মায় লাশ দেখা গেলে প্রশাসনকে খবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাশ দেখলেই যাতে জানানো হয় সেজন্য জেলেদের বলা হয়েছে ।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী পাকা ও মনোহরপুর এলাকা থেকে ফারাক্কার দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। এ এলাকা দিয়ে গঙ্গা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নদী নাম ধারণ করে।
এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শুরু করে রাজশাহী, পাকশী (পাবনা) ও রাজবাড়ী জেলার ২৫৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পদ্মা নদী বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
হিমালয়ের গাঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে জন্ম নেওয়া গঙ্গা ভারতের চারটি রাজ্যের ২ হাজার ৫২৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।