স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলাচলে বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়েছে সরকার। তবে এবার আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সবধরনের গণপরিবহন চলবে। চালু থাকবে রেস্তোরাঁও।
এর আগের বার সরকার ঘোষিত লকডাউনে চলাচলে বিধিনিষেধ বলা হলেও সরকারি অফিসে সীমিত কার্যাবলী ছাড়া আর সব ধরনের অফিস, ব্যবসা, দোকানপাট, যানবাহন চালু ছিল। এর আগে বিধিনিষেধ বাড়ানো হলেও দোকানপাট-শপিংমল খোলা রাখার সুযোগ, শহরের ভেতরে গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নতুন লকডাউন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সব ধরনের গণপরিবহন চলবে। এক্ষেত্রে যাত্রীদের শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। আজ সোমবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। তবে সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত নিধিনিষেধের কারণে বন্ধ থাকা দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সরকার। এছাড়া সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে লঞ্চ চলাচলেরও। কিন্তু ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করা যাবে। যাত্রীসহ সবাই মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সেই সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরায় বসে খাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে উভয় ক্ষেত্রে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক সেবা দেয়া যাবে। ৩০শে মে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ২১ মার্চ থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গেলো বছরের ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত সাপেক্ষে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছরের ৩১ মে একই নিয়ম চালু করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়েও। তখনও ৫০ শতাংশ টিকেট বিক্রি হচ্ছিল, তবে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ১৬ সেপ্টেম্বর আবার সব আসনে যাত্রী বহন শুরু হয় ট্রেনে।
গত বছরের ৩০ নভেম্বরের পর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমছিল। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় এপ্রিলে শুরুর দিকে সব ধরনের জনসমাগম সীমিত করাসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
চলবে দূর পাল্লার বাস
বিধি নিষেধ বাড়ালেও আন্তঃজেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহন অর্ধেক আসন খালি রাখা সাপেক্ষে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, পরিস্থিতির বিবেচনায় ও ভারতের অবস্থা দেখে বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে এই বিধিনিষেধ বাড়ানো হচ্ছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানসমূহে আসন সংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা প্রদান করতে পারবে।
এদিকে, আজ সোমবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে এবং সমন্বিত ভাড়ায় দূরপাল্লার পরিবহণ চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, সরকারের সকল নির্দেশনা মেনে আজ থেকে ট্রেন চালানো হবে। দুপুরে রেল ভবনে মধুখালী হতে মাগুরা শহর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রেলমন্ত্রী বলেন, সরকারের সকল নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসনে ফাঁকা রেখে সোমবার থেকে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
১০৮টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে ৫৬টি চালানো হবে। এতে অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকবে। টিকিট অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে হবে। সংক্রমণের কারণে কাউন্টারে কোনও টিকিট রাখা হয়নি। এছাড়া ১৮টি কমিউটার ট্রেন চলানো হবে।
এদিকে গত মধ্যরাত থেকে সরকারের সব নির্দেশনা মেনে লঞ্চ চালানোর কথা জানায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা। সংস্থাটির সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সরকার সবধরনের গণপরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। সে অনুযায়ী মধ্যরাত থেকে লঞ্চ চালানো যাবে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালানো হবে। লঞ্চে ওঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাজার, মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হবে।
Check Also
বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন
দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …