পাসপোর্টে ‘ইসরাইল ব্যতীত’ কথাটি বাদ দেয়ায় প্রশ্ন বিএনপির আ’লীগ টিকে থাকতে পারবে না বিদায় তাদেরকে নিতেই হবে

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ইসরাইল ব্যতীত’ কথাটি বাদ দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।  গতকাল রোববার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, যেটা আমাদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত বলা যেতে পারে যে, কনসেনসাস জনগনের, সব সরকারের যে, ইসরাইল আমাদের শত্রু, পৃথিবীর শত্রু। কারণ তারা মানবাধিকারকে ধবংস করছে। অনেকে বলেন যে, প্যালেস্টাইন ইসলামী রাষ্ট্র সেই সমর্থনে। নো। আমরা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করি, সকলে করে যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং তার মানুষগুলো মানুষ। বিশেষ করে শিশুরা। প্রায় ১শ’ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে গত কয়েকদিনে। আপনাদের মনে আছে, কয়েকবছর আগে প্রায় তিন লক্ষ শিশুকে হত্যা করা হয়েছিলো। ইসরাইল আসলে মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা পৃথিবীর জন্য এখন একটা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার কেনো এই নতুন করে প্রেম করতে যাচ্ছে ইসরাইলের সঙ্গে? এর কারণ হিসেবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি একটা যোগসূত্র দেই আপনাদের (সাংবাদিক)। কয়েকদিন আগে আল-জাজিরাতে একটা রিপোর্ট হয়েছিলো। সেই রিপোর্টে এসেছিলো যে, একটা বিশেষ সার্ভিলেন্সের যে ডিভাইস বা যন্ত্র, এই যন্ত্র অরিজিনালি ইসরাইল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সেজন্য এখন জনগনের মাঝে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে তাহলে কি ইসরাইলের সঙ্গে সরকার আবারো ওই ধরনের কোনো চুক্তি করতে যাচ্ছে বা কিছু করতে যাচ্ছে। আমরা সবাই জানি যে, ইসরাইল কিন্তু গোয়েন্দাবৃত্তিতে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ওটা করে কিন্তু সে এখনো মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হয়ে আছে। সুতরাং এই বিষয়গুলো জনগন অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষন করছে, দেখছে, লক্ষ্য করছে যে, কোন দিকে যাচ্ছি আমরা? অলরেডি তো গেছি। অন্ধকার মধ্যযুগীয় বর্বরতার দিকে যেখানে মানুষের ন্যুনতম অধিকারটুকু থাকবে না।
ইসরাইলের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইজরায়েলে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নাই। ইসরাইল বিরোধী অবস্থান আমাদের। আমরা স্ট্রেটকাট বলতে চাই- আমরা বরাবরই ছিলাম, আমরা এ্খনো আছি। বিএনপি খুব স্পষ্টভাবে বলতে চায়, ইসরাইলের এই যে মানবতাবিরোধী বর্বরোচিত হামলা, মধ্যপ্রাচ্যে যে অশান্তি সৃষ্টি করা এবং ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রকে যে একেবারে ধবংস করে ফেলা এর মূলে হচ্ছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক বিশ্বের উচিত সেই ইসরাইলকে সম্পূর্ণভাবে বিরত করা এবং ফিলিস্তিনীদের যে স্বাধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্রের যে অধিকার তাকে নিশ্চিত করা।
শুক্রবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে ফিলিস্তিনীদের ওপর ইসরাইল বাহিনীর হামলার ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ায় এবং নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতায় প্রতিটি নির্বাচনে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে আগামীতে লক্ষীপুর-২, সিলেট-৩, ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ আসনে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
ওবায়দুল কাদের বক্তব্য মনগড়া উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি শনিবার বলেছেন, বিএনপি গণমাধ্যমের বন্ধু সেজে সাংবাদিকদের উস্কানি দিচ্ছে। এটা একেবারেই একটি মনগড়া এবং নিজেদের অপরাধগুলোকে ঢাকার জন্য একটি মন্তব্য আরকি। আওয়ামী লীগের সাংবাদিকতা, মুক্ত স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের প্রতি আচরণ-ব্যবহার-এটা দেশের সকল মানুষ জানে। ১৯৭৫ সালে দেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো। সেই বাকশাল প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই সমস্ত পত্রিকাগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। মাত্র চারটা পত্রিকা চলবে বলা হয়েছিলো, সেই চারটা পত্রিকা তাদের নিজস্ব পত্রিকা। তখন অসংখ্য সাংবাদিক কিন্তু বেকার হয়ে গিয়েছিলেন, তারা কর্মচ্যুত হয়েছিলেন।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ওই সময়ে বিভিণ্ন পত্রিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় যে, এটা তাদের মজ্জাগত ব্যাপার তারা ভিন্নমত সহ্য করতে পারে, তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা তারা (আওয়ামী লীগ) আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করেছে ১৯৭৫ সালে, আইন করে তারা বন্ধ করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, বিচিত্রাসহ ৪টি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলো। ২০০৮ সালে তারা চ্যানেল ওয়ান, ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি, একুশে টিভি আক্রমণ করেছে এবং বন্ধ করে দিয়েছে। একের পর এক আমার দেশ পত্রিকা, শীর্ষ কাগজ, ৩৭টি অনলাইন, এগুলো সব বন্ধ করে দিয়েছে।
সর্বজন শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমানকে মিথ্যা অজুহাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আমার দেশ পত্রিকার জনপ্রিয় ও গুণী সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাহেবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে, কারাগারে দীর্ঘদিন আটক করে রাখা হয়েছে, আমার দেশ পত্রিকা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একুশের টিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘদিন নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক শওকত মাহমুদ সাহেবকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করে দীর্ঘকাল আটক করে রাখা হয়েছিলো। এখন ৭ মাস কারাগারে আটক আছেন রুহুল আমিন গাজী সাহেব (ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি), সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ সাহেবেকে ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইনে আটক করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী শহীদুল আলম সাহেবকে দীর্ঘদিন আটক করে রাখা হয়েছিলো পরে অনেক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি বেরিয়েছেন। আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলকে আটক করে রাখা হয়েছিলো। এখন মুনির হায়দার, অলিউল্লাহ নোমান, কনক সারোয়ারসহ অনেককে বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয়েছে বিদেশে। সাগর-রুনিকে হত্যার ৯ বছর পার হলেও হত্যাকারীদের এ্রখনো সরকার ‘খুঁজে’ পায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকারকে আমলা নির্ভর উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সব সময় উনারা (সরকারের মন্ত্রীরা) দুঃস্বপ্ন দেখে। প্রতিদিন, প্রতিরাতে বিএনপি বিএনপি বিএনপি দেখতেই থাকে ও সব খানে ষড়যন্ত্র দেখতে থাকে। এতো ভয় কেন রে ভাই। কারণ আপনাদের পায়ের তলায় মাটি নেই, আপনাদের পেছনে মানুষের কোনো শক্তি নেই। আপনারা এখন আমলাতন্ত্র নির্ভর হয়েছেন। আপনারা এখন সামরিক-বেসামরিক আমলা নিয়ে আপনারা দেশ চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, দেখুন- গোয়েন্দাদের লাগিয়ে দেয়া হয় সাংবাদিকদের পেছনে। তারা আপনাদেরকে ফোন বলে যে, এই সংবাদ দেয়া যাবে, এটা দেয়া যাবে না। বাস্তবতা। আপনারা এটা কেউ স্বীকার করুন বা না করুন। আপনারা দেখুন যে, যারা এই মিডিয়া হাউজের মালিক তাদের অনেকের বাড়ি পর্যন্ত ভেঙে দেয়া হয়েছে বুলডোজার দিয়ে জাস্ট একটু ভিন্ন অবস্থান নেয়ার কারণে। আবার নামকরা পত্রিকার নাম করা এডিটরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে, সারাদেশে ১‘শ টাকা মামলা দেয়া হয়েছে নামকরা  এডিটরদের বিরুদ্ধে।
অপরাধ একটাই কেনো সবাই তাদের তোষামোদী করছে না, কেনো তাদের উচ্ছিষ্টভোগী কয়েকজন আছেন তাদের সুরে একই সঙ্গে কথা বলছে না কেনো। সবাই তো একরকম নন। দেশপ্রেম আছে, ভালোবাসা আছে, নীতিবোধ আছে, তারা তো নিশ্চয় কথা বলবেন। তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। সেজন্য এই সাংবাদিক ভাইয়েরা-বোনেরা যারা আজকে কথা বলেন তাদের ওপর বিপর্যয়, হুমকি। আমরা পরিস্কার করে বলছি এভাবে কোনদিনই কেউ টিকে থাকতে পারবে না। হ্যাঁ সময় নেবে। অবশ্যই তাদেরকে বিদায় নিতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, মহানগর মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, কাজী আবুল বাশার, আবদুল আলিম নকি, যুব দলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।