বেড়িবাঁধ ভেঙে উপকূলের জনপদ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা: সরিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষাধীক স্থানীয় বাসিন্দাদের: নদীতে ৪ফুট পানি বৃদ্ধি: স্বাস্থ্য ঝুকিতে আশ্রয় কেন্দ্র

আবু সাইদ বিশ্বাস: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরায় ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি হচ্ছে বৃষ্টি। সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়াস আঘাত হানলে বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে পানিতে সয়লাব হতে পারে উপকূলের জনপদ। এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ এবং বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হচ্ছে। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের আটটি টহল ফাঁড়ির সব সদস্যকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে লক্ষাধীক মানুষকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষ শঙ্কার মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি আঁকড়ে ধরে থাকতে হচ্ছে। শ্যামনগর এলাকা পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো।

মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা, খোলপেটুয়া, মাংলঞ্চ ও কপোতাক্ষ নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।এদিকে উপকূলীয় এলাকার আকাশ গুমোট আকার ধারণ করে মাঝে মাঝে বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া বইছে।
উপকূল এলাকা আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা এবং শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কৈখালি , ঈশ্বরীপুর, রমজাননগর, কাশিমারিসহ সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জ হরিনগর এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের ধারন ক্ষমতা ৭৫ হাজার বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু জার গিফারি।
তিনি জানান, জেলায় দেড় হাজার স্কুল কলেজ মাদ্রাসাও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কোভিড পিরিয়ডে নিরাপত্তা বজায় রেখে তাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বেড়িবাঁধের ৪০টি পয়েন্ট খারাপ অবস্থায় রয়েছে। পূর্ণিমার ভরাকাটাল ও পূর্নচন্দ গ্রহণের সময় ইয়াসের দাপটে জলোচ্ছাসের আশংকা করছেন উপকূলবাসী।
জেলা সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান বলেন, ইয়াস আঘাত করলে এবং অস্বাভাবিক জলোচ্ছাস হলে তাদের উদ্ধার করে আনার জন্য নৌযানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস গতকাল সন্থাপর্যন্ত সাতক্ষীরা থেকে ৪৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ পশ্চিমে ঘূর্ণিঝড়টি অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলিমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৬.৬ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ ২৬ মার্চ ভোর নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।
সাতক্ষীরা শ্যানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তা আনম আবুজর গিফারী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। আমাদের চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। গত বছরের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, মুন্সিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।এ অবস্থায় আবার ঘূর্ণিঝড়ের খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ করা যাচ্ছে। আগামীকাল সকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িষ্যা উপকূলে এটি আঘাত হানতে পারে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এটি ঘণ্টা ৯ কিলোমিটার গতি নিয়ে এগোচ্ছে। খবরে বলা হয়েছে, বুধবার দুপুরে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় ইয়াসের গতিবেগ ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার, সর্বোচ্চ ১৮৫ কিলোমিটার হতে পারে। এটি অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ওড়িষ্যার এবং পশ্চিমবঙ্গের পারাদ্বীপ ও সাগর দ্বীপের বালেশ্বরের কাছ দিয়েই ইয়াস অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।
এরই মধ্যে ঝড়টির প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী এলাকার নিচু এলাকা এবং চরাঞ্চলগুলোতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। সুন্দরবনের দুবলার চরসহ জেলে পল্লিগুলোর বেশির ভাগ এলাকা এরই মধ্যে ডুবে গেছে।

Check Also

তালায় ইউপি পরিষদ কক্ষে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

তালা প্রতিনিধি তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও আতাউর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী রমজান আলী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।