কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা: সাত আসামীর জামিন সুপ্রিম কোর্টে স্থগিত

২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় মহামান্য হাইকোর্টে সাত আসামীর জামিনাদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এ্যাপিলেড ডিভিশন।

বৃহষ্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানী শেষে চেম্বার জজের বিচারপতি হাসান ফয়েজ ছিদ্দিকি জামিনাদেশ স্থগিত করে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানীর জন্য আগামি ৩০ মে দিন ধার্য করেন।
জামিনাদেশ স্থগিত হওয়া আসামীরা হলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুস সাত্তার, গোলাম রসুল, এড. আব্দুস সামাদ, জহিরুল ইসলাম, মীর গোলাম মোস্তফার ছেলে রাকীব, শাহাবুদ্দিন ও মোঃ মনিরুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী বলেন, শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার মামলার একটি অংশে সাজাপ্রাপ্ত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০জন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর মধ্যে নয়টি মিস কেসে ১৮ জনের আবেদন শুনানী শেষে গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবীরের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ সাতজনকে জামিনের আদেশ দেন।

একই আদেশে আগামি ৩০ মে রোববার নজরুল ইসলাম, সঞ্জু, মোঃ মাহাফুজুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, মোঃ হাসান আলী, আব্দুস সামাদ, তোফাজ্জেল হোসেন, মোঃ ইয়াছিন আলী, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, শেলী ও সাবেক যুবদল নেতা কেড়াগাছি ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেনের জামিন শুনানীর দিন ধার্য করে চার মাসের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ মামলা সম্পর্কিত দায়েরকৃত রিভিশন মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ বৃহষ্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে চেম্বার জজ এর বিচারপতি হাসান ফয়েজ ছিদ্দিকি হাইকোর্টের জামিনাদেশ স্থগিত করে আগামি ৩০ মে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানীর জন্য দিন ধার্য করেন।

সুজিত চ্যাটার্জী আরো বলেন, শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার অন্যতম আসামী সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও তামিম আজাদ মেরিন পৃথক দু’টি মিসকেসে হাইকোর্টের ১৯ নং বেঞ্চের বিচারপতি মামুনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলরুজ্জামানের আদালতে জামিন আবেদন করেছেন। আগামি সপ্তাহে ওই দু’টি মিসকেসের শুনানী হতে পারে।

চেম্বার জজে রাষ্ট্রপক্ষে জামিন শুনানীতে অংশ নেন এটর্ণি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন, অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী,সহকারি এটর্ণি জেনারেল মোঃ সাইফুল ইসলাম ও সহকারি এটর্ণি জেনারেল মোঃ শাহীন মৃধা।

আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এএম মাহাবুব উদ্দিন খোকন।
প্রসঙ্গত,২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে যশোরে ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়।

এ ঘটনায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। পেনালকোর্ডের মামলাটি (টিআর-১৫১/১৫) সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন ছিল। একজন নাবালককে শিশু আইনে চার্জশীট না দেওয়ায় ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে এ মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত করা হয়। ১৯ জন সাক্ষী ও চার জন সাফাই সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দি এবং নথি পর্যালোচনা শেষে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলার চার্জশীটভুক্ত ৫০ জন আসামীর সকলেকেই বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেন সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীর।

তবে ওই দিন আসামীর কাঠগোড়ায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩৪ জন। বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিন জনকে সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজা দেওয়া হয়।
মামলার রায় হওয়ার কয়েকদিন আগে সাক্ষী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুনুসর আহমেদ মারা যান। সম্প্রতি মারা যান মামলার বাদি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।