করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল সীমান্তে কড়া নজরদারির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরার ২২৮ কিলোমিটার সীমান্ত গলিয়ে বৈধপথে আসা মানুষকে কোয়ারেন্টিনে নেওয়া এবং একইসাথে চোরাপথে অবৈধভাবে আসা লোকজনকে আটক করে কোয়ারেন্টিনে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে তার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক। তিনি তথ্য উপাত্ত হাজির করে বলেন, গত ১৬ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১২৬২ জনের। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে ২৭০ জনের। সর্বশেষ ৩১ মে তারিখে ৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা শেষে পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ৩৫ জনের। এদিকে, গত ২৩ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শনাক্তের হার ৪১.২ শতাংশ। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ৪৭ জন। জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ৬১৯ জন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ১ জুন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৩৮ জন। তাদের মধ্যে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে ৫৩ জনের। জেলা প্রশাসক আরও উল্লেখ করেন সাতক্ষীরায় ৮টি পিসিআর ল্যাব এবং র্যাপিড টেস্ট কীটের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নমুনা পজেটিভ ১৩৮ জনের মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৩৯, কালিগঞ্জে ২৪, আশাশুনিতে ২০ ও শ্যামনগরের ১৫ জন রয়েছেন।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও একটি করোনা ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে। একইসাথে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এরই মধ্যে একটি করোনা ইউনিট স্থাপন করে তার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল সিবি হাসপাতাল, বুশরা, ন্যাশনাল হাসপাতাল এবং ইসলামী হাসপাতালে অনেক করোনা রোগী রয়েছে। তাদের সাথে যাতে সাধারন রোগীদের সংযোগ না থাকে সে বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য জেলার সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
বর্তমান সময়ে করোনা প্রতিরোধে বেশ কিছু বাধানিষেধ আরোপ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরে প্রতিদিন আসা ভারতীয় ট্রাক ও হেলপারদের প্রকাশ্যে বেড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অপরদিকে বিজিবির টহল জোরদার করে চোরাচালানী, মানুষ পাচারকারী ও অবৈধ যাতায়াতকারীদের প্রতিরোধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করার জন্য আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি।
‘মিট দ্য প্রেস’ এ আরও উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত। এসময় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সাধারন সম্পাদক এম কামরুজ্জামানসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা করোনা বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন করেন জেলা প্রশাসকের কাছে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সাতক্ষীরায় বর্তমান সময়ে কোভিড সংক্রমনের পাশাপাশি চলছে ইয়াশের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের দাপট। মানুষ এখানে দুর্ভোগে রয়েছে। তিনি সকলকে মাস্ক ব্যবহার করা এবং আইন লঙ্ঘন করলে জরিমানা করা, একইসাথে পুলিশি টহল জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ৩ জুন তারিখে সব রিপোর্ট সমন্বয় করে করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় লকডাউন ঘোষনা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।