অবরুদ্ধ হচ্ছে সাতক্ষীরা: করোনা সংক্রমণের হার ৫৭ শতাংশ: লকডাউনে আসছে সীমান্তের ৭ জেলা

আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে করোনা সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধির কারণে সীমান্তবর্তি কয়েকটি জেলা অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরাসহ ৭ জেলায় করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে সীমান্তের ২৯ জেলায় আইসিইউর সংকট দেখা দিয়েছে। আগামী শনিবার থেকে সাতক্ষীরা জেলায় এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাতক্ষীরা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে তার সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘করোনা প্রতিরোধ’বিষয়ক এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ২৪ ঘন্টায় ৯৪ জনে আক্রান্ত ৫০ জন আক্রান্ত হয়েছে।
গেল সপ্তাহ যাবত সাতক্ষীরায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৯৪ জনের করোনা পরীক্ষা শেষে ৫০ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে। যার আনুপাতিক হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এনিয়ে, করোনার উপসর্গ নিয়ে জেলায় মারা গেছেন মোট ২১২ জন। আর ভাইরাসটিতে আক্রান্তে মারা গেছেন মোট ৪৭ জন। এছাড়া জেলায় গতকাল পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৯৮ জন।করোনার উপসর্গ মারা যাওয়া দুই ব্যক্তি হলেন, কলারোয়া উপজেলার ভাদিয়ালী গ্রামের মৃত সানা উল্লাহ’র ছেলে দ্বীন ইসলাম (৬০) ও সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর গ্রামের মৃত আইন উদ্দীনের ছেলে লিয়াকত আলী (৭৫) ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কয়েক দিনের গড় হিসাবে সাতক্ষীরায় করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে করোনা পজিটিভ নিয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪৫ জন। জেলা প্রশাসক জানান, লকডাউনের এক সপ্তাহে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কনাকাটার জন্য সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকবে। তবে ওষুধ ফার্মেসি, হাসপাতাল, ক্লিনিক অ্যাম্বুলেন্স এবং বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল এ সময় বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে মোটরসাইকেল চলাচলও। সাতক্ষীরার সঙ্গে যশোর ও খুলনার সড়ক যোগাযোগে পয়েন্টগুলোতে পুলিশ চেকপোস্ট থাকবে। এ সময় সীমান্তে পারাপার বন্ধ থাকবে। শহরে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাধানিষেধ অমান্যকারীদের জরিমানা করা হবে। সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এদিকে সীমান্ত বন্ধ থাকলেও অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে আসছে। দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ছয়টিই ভারতীয় সীমান্তবর্তী। মোট ২৯টি জেলার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ যাতায়াত করছেই। বৈধ পথে যারা ফিরছেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু যারা অবৈধ পথে ফিরছেন, তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা বন্ধ না হওয়া দেশের জন্য বিপজ্জনক। যে কোনো সময় দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের পূর্ণ সংক্রমণ শুরু হতে পারে। আর সেই ধাক্কা সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
সম্প্রতি সাতক্ষীরায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরত ১৩৯ জন পাসপোর্টধারী যাত্রীর মধ্যে ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। জানা গেছে, বৈধ স্থলবন্দর ছাড়াও দুই দেশের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা রয়েছে। এর সব স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এখনো অনেক এলাকা আছে, যেখানে একটি বাড়ির ভেতর দিয়ে সীমান্তরেখা গেছে। এসব পথ দিয়ে অবৈধভাবে দৈনিক বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশে প্রবেশ করে। এছাড়া ভারত থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে ড্রাইভার ও সহকারীরা বিপজ্জনক ভারতীয় ধরনের করোনার ভাইরাস বহন করে আনতে পারেন। এতে দেশের করোনা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। ব্যবসায়ীরা বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভারতীয় ড্রাইভার-হেলপাররা স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ভোমরা ও বেনাপোল বন্দরে যত্রতত্র চলাফেরা করছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেন, সরকারের গাইডলাইন মেনে তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করছেন।
এদিকে ভারত সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আরও সাতটি জেলায় লকডাউনের কঠোর বিধি নিষেধ আসছে। অবরুদ্ধ জেলা সমূহের মধ্যে, খুলনা, যশোর, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলাও ‘লকড ডাউন’ আসছে। গত ১৬ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত জেলায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১২৬২ জনের। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে ২৭০ জনের। সর্বশেষ ৩১ মে তারিখে ৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা শেষে পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ৩৫ জনের। এদিকে, গত ২৩ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শনাক্তের হার ৪১.২ শতাংশ।
জেলা প্রশাসক জানান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও একটি করোনা ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে। একইসাথে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এরই মধ্যে একটি করোনা ইউনিট স্থাপন করে তার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল সিবি হাসপাতাল, বুশরা, ন্যাশনাল হাসপাতাল এবং ইসলামী হাসপাতালে অনেক করোনা রোগী রয়েছে।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।