সীমান্ত জেলায় আতঙ্ক বাড়াচ্ছে:সংক্রমণের উর্ধ্বগতি, বাড়ছে মৃত্যু: বন্ধ হচ্ছে না অনুপ্রবেশ

আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরাসহ ভারত-সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর করোনা সংক্রমণের হার উর্ধ্বগতি। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ওই জেলাগুলোতে দিন দিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সীমান্তের আশপাশে প্রায় ৩২টি জেলায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে শয্যা সঙ্কট। সাতক্ষীরায় গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ছিল সর্বোচ্চ ৫৯.৩৪ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ও ওই সকল জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াতকারী মানুষের মধ্যে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের সীমান্ত রয়েছে। রয়েছে স্থল ও নৌবন্দর। সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলায় বৈধ পাসপোর্ট ছাড়াও অবৈধভাবেও বিপুলসংখ্যক লোকজনের যাতায়াত রয়েছে। তাদের অনেকেই ফিরে কোয়ারেন্টিনে থাকার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। লক্ষণ ও উপসর্গ না থাকায় তাদের সঙ্গে মিশে অজ্ঞাতসারেই অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে ধীরে ধীরে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে করোনার সংক্রমণ।

সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রচুর লোকজন যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে যারা কাজের জন্য ভারতে যান, তাদের অধিকাংশ অবৈধভাবে যান। সাতক্ষীরা সীমান্তে কমপক্ষে ১৭টি কথিত ঘাট রয়েছে। রয়েছে কথিত ঘাট মালিক। জনপ্রতি ৭ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায় তাদেরকে কোলকাতায় পৌঁছে দেওয়া হয়।তারা আরও জানান, দু’তিন দিনের জন্য টাকা নেওয়া হয় ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার করে। যারা কাজ করেন, তাদের বছরব্যাপী থাকতে হয় ভারতে। অন্যদিকে ভিসাতে ৩ মাসের মধ্যে ফেরত আসতে হয় বলে তারা অবৈধভাবে যাতায়াতটাকে শ্রেয় ভাবেন।
এদিকে করোনা ঠেকাতে গত বছরের এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট। এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ যাত্রী প্রতিদিন ভোমরা ইমিগ্রেশন দিয়ে যাতায়াত করতেন। এসবের অনেকেই এখন চোরায় পথে ভারতে যাতয়াত করছে।

সাতক্ষীরার তিনটি সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ভারত থেকে অবৈধ পথে দেশে প্রবেশের সময় গত ১৩ দিনে তিন মানবপাচারকারীসহ ৪৮ জনকে আটক করেছে বিজিবি।আটককৃতরা হলেন, কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি গ্রামের মানবপাচারকারী মোফাজ্জেল (৩৫), মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার টেকেরহাট গ্রামের সাজিদ (৪৫), নড়াইল জেলার কালিয়া থানার আব্দুল্লাহ (২৮), যশোর জেলার মনিরামপুর থানার আয়রা বেগম (৫৫), পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার রঘুনাথপুর গ্রামের মঞ্জুর খান (২৮), নড়াইল জেলার কালিয়া থানার কলসি গ্রামের রুহুল কাজী (৬৩) ও একই জেলার লোহাগড়া থানার দিঘলিয়া গ্রামের রহিমা বেগম (৪৫)।
এদিকে, সীমান্তে কর্মরত বিজিবি’র কর্মকর্তারা জানান, সাতক্ষীরা সীমান্তে কাটাতারের বেড়া না থাকায় অবৈধভাবে যারা ভারতে-বাংলাদেশে যাতায়াত করেন তাদের নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়। আমরা সর্বদা চেষ্টা করি অবৈধভাবে যাতে কেউ পারাপার না হতে পারে। বিশেষ করে ইছামতিসহ সীমান্তবর্তী কিছু নদীর কারণে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিকে বেশ বেগ পেতে হয়।
সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি’র ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আল মাহমুদ জানান, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উক্ত ভাইরাস বাংলাদেশে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য ৩৩ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের আওতাধীন জেলার ৭টি সীমান্ত এলাকা স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে। একই সাথে সীমান্তে কঠোর নজরদারীতে রাখা হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গে সর্বোচ্চ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে ৬ জন। কুষ্টিয়ায় ৪, সাতক্ষীরায় ৪, মোংলায় ৪ ও নাটোরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ছিল সর্বোচ্চ ৫৯.৩৪ শতাংশ। সংক্রমণ ঠেকাতে আক্রান্ত জেলাগুলোতে কঠোর লকডাউন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত ১০৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, রামেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে নাটোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন। দেশে গত ৮ মে প্রথম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। এর পর থেকে সীমান্তবর্তি জেলা সমূহে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে সাতক্ষীরায় গতকাল বুধবারও করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৮ জন। গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে ৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত দুই দিনে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১৮৭ ও ১৮২ জন। তবে আজ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে গত দু’দিনের অর্ধেক। হটাৎ করে নমুনা পরীক্ষা কমানোর কারন জানা যায়নি।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যুবরণ করেন ৪ জন। মৃত্যুববরণকারীরা হলেন, শ্যামনগরের নৈকাটি গ্রামের মৃত কালাচানের ছেলে সামাদ শেখ (৫৫), সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান এলাকার মৃত. পুনাই মিস্ত্রির ছেলে নাছির আলী মিস্ত্রি (৭০), সাতক্ষীরা সদরের আকড়াখোলা গ্রামেরে মৃত. বাকেরের ছেলে মিজানুর রহমান (৫০) এবং শ্যামনগরের জয়নগরের মৃত. মাজেদ বক্সের ছেলে এলন বক্স (৮০)।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাতক্ষীরায় করোনার সংক্রম রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার আমরা তা করার সর্বোচ্ছ চেষ্টা করছি।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।