সব্যসাচী বিশ্বাস (অভয়নগর) যশোর:
সীমান্তবর্তী জেলা যশোরের অভয়নগর উপজেলায় একদিনে ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ৩০ জন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এস এম মাহামুদুর রহমান রিজভী। জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ হয়েছেন ৩০ জন। ৪১ জনের মধ্যে ২ জনকে রির্ফাড করা হয়েছে। একজনকে যশোর সদর ও অপরজনকে নড়াইলে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। দিন পার হচ্ছে আর অভয়নগরবাসীর মাঝে করোনার ভীতি বাড়ছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। দেখা দিয়েছে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এলাকাবাসীর দাবি, যশোর জেলা ভারতের বর্ডার এলাকা হওয়ায় দেখা দিয়েছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট । অবৈধ্য ভাবে যশোর অঞ্চলে ভারত থেকে আশা মানুষের কাছ থেকে এ সংক্রমন বাড়ছে। যার ফলে পাবলিক ট্রান্সমিশনও শুরু হয়েছে। ফলে করোনার এক ভয়াবহ সময় পার করছে অভয়নগরের মানুষ।
ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে নওয়াপাড়া পৌর এলাকায়। ইতোমধ্যে পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডকে ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবশ্য ১, ২, ৩, ৭, ৮,ও ৯ নং ওয়ার্ডের করোনা পরিস্থিতিও খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ইউনিয়নের বেশ কয়েক জন করোনা পজিটিভ নিয়ে মারাও গেছেন। জেলা প্রশাসন থেকে গোটা পৌর এলাকায় কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। তাছাড়া গত ২ দিনে অভয়নগরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলায় মৃর্তের সংখ্যা এখন ২৩ জন দাড়িয়েছে। এ অবস্থায় সকলকে প্রশাসনের কঠোর বিধি নিষেধ মানার আহবান জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহামুদুর রহমান রিজভী।
এদিকে অভয়নগরের চেঙ্গুটিয়া-প্রেমবাগে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। ২জন ব্লাক ফাঙ্গাস সহ দেড় ডজন করোনা আক্রান্ত। করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ শতাধিক পরিবার। প্রেমবাগ ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মফিজ উদ্দীন জানান, খোঁজ খবর নিয়ে জানা মতে ইউনিয়নে ১০ থেকে ১২ জন করোনা আক্রান্ত এবং শত শত ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ। এদের কেউ কেউ গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছে। সরকারীভাবে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এলাকায় অচিরেই করোনায় ভয়াবহ রূপ ধারন করবে। তিন ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর হালিমা পারভীন জানান, চেঙ্গুটিয়া, চাঁপাতলা বাহিরঘাট এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সর্দিজ্বর, কাশি, পাতলা পায়খানা লেগে আছে। ইউপি সদস্য শাহাদত হোসেন জানান, আক্রান্তদের বাড়িতে লালফ্লাগসহ লকডাউন করা হচ্ছে। চেঙ্গুটিয়া-প্রেমবাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মানা সহ সরকারী বিধি নিষেধ সংক্রান্ত প্রচার প্রচারনা, মাইকিং সত্ত্বেও হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা অনেকেই। তথ্য জানাতে চায়না কেউ। তারপরও এলাকায় আক্রান্তদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তারা হলেন, চেঙ্গুটিয়া গ্রামের মৃত সমর দাসের পুত্র পংকজ দাস(৪২), মাগুরা গ্রামের আকবর আলী (৬০), একই গ্রামের নওয়াপাড়া কলেজের শিক্ষক হাবিবুর রহমান (৩৬), পালপাড়া গ্রামের মৃত গোলাম মোল্যার পুত্র কাসেম মোল্যা। প্রেমবাগ গ্রামে শাহাবুদ্দীন এবং তার স্ত্রী,সাত্তার শেখের পুত্র বাহারুল (৪০), চেঙ্গুটিয়া গ্রামে মৃত গণি মোল্যার পুত্র মিজান মোল্যা, মৃত বৈদ্যনাথ দাসের পুত্র মদন দাস(৪০) এবং তার বৌদি, চেঙ্গুটিয়া উড়তলার মিনা খাতুন(২৫), পিতা মৃত গোলাম নবী স্বামী আঃ রাজ্জাক, চাঁপাতলা গ্রামের আয়ুব আলী, ১নং ওয়ার্ড মহাকাল কলু-পাড়ায় হরোলাল কলুর পুত্র মনোরঞ্জন কলু, মহাকাল গ্রামের আনারুল মোড়ল (৫২), চেঙ্গুটিয়া বাজার সংলগ্ন নওয়াপাড়া কলেজের সাবেক অধ্যাপক এলাহী বক্স গাজী (৬৯), আমডাঙ্গা গ্রামের যোতিন মল্লিক (৭০), তার কন্যা বীনা মল্লিক (৩৫), একই গ্রামের মুক্ত মল্লিক (৭০)। এর মধ্যে চেঙ্গুটিয়ার মিজান মোল্যা ও মহাকাল কলু পাড়ার মনোরঞ্জন কলু ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ব্লাক ফাংগাস করোনায় আক্রান্ত। মনোরঞ্জন কলুর ভাই রতন কলু জানান, তার ভাই আদিত্য মজুমদারের ট্রাক চালাতেন। ভারতে যাতায়াত ছিল। ১নং পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আঃ গফফার বিশ্বাস জানান, আক্রান্তদের বাড়ী লকডাউন করা হয়েছে।
এলাকাবাসী বলছেন, যারা করোনা উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত তাদেরকে নমুনা পরীক্ষা করলে শত শত মানুষের করোনা ধরা পড়বে এবং এলাকাবাসী করোনা মহামারী থেকে রক্ষা পাবে। সচেতনতা ছাড়া এ মহামারীর এ সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।